শ্যামনগর : কক্সবাজার ও টেকনাফ সাগর বাংলাদেশের যাবতীয়,উপকূলে একশ্রেণীর জেলে কারেন্টজাল বসিয়ে ধ্বংস করছে লাল কাঁকড়া। পর্যটন শহর কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে এখন আর চোখে পড়ে না লাল কাঁকড়া। সে কারণে শুধু কক্সবাজার নয় সাতক্ষীরা খুলনা বাগেরহাট পিরোজপুর বরগুনা সহ উপকূলীয় সকল জেলায় লাল কাঁকড়া, বিলুপ্ত হওয়ার পথে, সৈকতের বালিয়াড়িতে সৌন্দর্য বর্ধনকারী প্রাকৃতিক সম্পদ লাল কাঁকড়া ও সামুদ্রিক কাছিম কিছু অসাধু জেলের কারণে বর্তমানে বিলুপ্তপ্রায়। বছরকয়েক আগে দেশ-বিদেশ থেকে ভ্রমণে আসা পর্যটকরা সৈকতে নেমে দেখতে পেতেন টকটকে লাল ঝাঁকবাঁধা সেই কাঁকড়া। মনে হতো সৈকতরাজ্যে বেড়াতে আসা অতিথিদের লালগালিচা সংবর্ধনায় সম্মান ও আনন্দ দিচ্ছে সৌন্দর্য্যের প্রতীক প্রাকৃতিক জীব লাল কাঁকড়া। কারেন্টজাল নিয়ে সাগরে যাওয়া অসাধু জেলে ছাড়াও সম্প্রতি পরিবেশ বিরোধী কিছু ব্যবসায়ী অর্থের বিনিময়ে সৈকতে ঘোড়া ও বীচ বাইকের বেপরোয়া গতিতে চলাচলে লাল কাঁকড়া পিষ্ট করছে প্রতিনিয়ত। ইদানীং তারা পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকা- শুরু করায় হারিয়ে যাচ্ছে অপূর্ব সুন্দর লাল কাঁকড়া। এতে সৈকতের সৌন্দর্য্যরে বিঘœ সৃষ্টির পাশাপাশি মারাত্মকভাবে ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের। সৈকতের সৌন্দর্য্য রক্ষার্থে থাকা ওসব প্রাকৃতিক জীব বিলুপ্ত হওয়ায় কক্সবাজার বিমুখ হয়ে পড়েছে পরিবেশবাদী পর্যটকদের অনেকে। মনোরম সুন্দর প্রাকৃতিক জীব রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কারও কোন মাথাব্যথা নেই বলা চলে। সমুদ্র সৈকতের হিমছড়ি সেনা ক্যাম্প, ইনানী ও ডায়াবেটিক পয়েন্টের অদূরে উত্তরে এখনও নির্জন এলাকায় কিছু লাল কাঁকড়ার দেখা মেলে। দেশের সৈকত রানীখ্যাত কক্সবাজার-টেকনাফের দীর্ঘ ৮০ কিলোমিটার বিস্তৃত সৈকতে সাগরের তলদেশের ঝাড়ুদার হিসেবে পরিচিত বিরল প্রজাতির সামুদ্রিক কাছিম বালুচরে ডিম পাড়তে এসে মারা পড়ছে। প্রতিবছর শীত মৌসুমের সময় কক্সবাজার, টেকনাফ ও সেন্টমার্টিন সমুদ্র সৈকতের বালুচরসমূহ নিরাপদ স্থান মনে করে গভীর সাগরের কাছিমগুলো ডিম পাড়ার জন্য উঠে আসে। বিশেষ করে নবেম্বর-ডিসেম্বর থেকেই ঝাঁকে ঝাঁকে কাছিম সাগর থেকে উঠে আসে বালুচরে। এবারও যথারীতি গভীর সাগরের কিছু কিছু কাছিম ডিম দিতে আসছে চরে। কিন্তু এখন সৈকতে নির্জন পরিবেশ পাওয়াই যেন ভার। এক সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী জানান, এক সময় সেন্টমার্টিন চরাঞ্চল সামুদ্রিক কাছিমের অভয়ারণ্য ছিল। এখন আর সেন্টমার্টিনে কাছিম ডিম দিতে উঠে আসছে না, সাগরে এই কাছিম প্রজাতি প্রাণী এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। সচেতন মহলের মতে, সাগরে চিংড়ি আহরণে নিয়োজিত ট্রলার ও মাছ ধরার জালে আটকা পড়েই সিংহভাগ কাঁকড়া ও কাছিমের মৃত্যু ঘটে। স্থানীয় পরিবেশবাদীরা জানায়, সমুদ্রসৈকতে লাল কাঁকড়া ও কাছিম রক্ষায় বীচ বাইক ও ঘোড়াসহ ঝুঁকিপূর্ণ সকল প্রকার জান চলাচলে আইন চালু করার পাশাপাশি এই প্রাণীদের চারণ ভূমি চিহ্নিত করতে হবে। নিষিদ্ধ করতে হবে সাগরে কারেন্টজাল বসানো। উখিয়ার পালংখালীর বাসিন্দা মানবাধিকার কর্মী এম জিয়াউর রহমান এই প্রতিবেদকে বলেন, সাগর পাড়ে জেলেদের ফেলে দেয়া কারেন্টজালে আটকা পড়ে কক্সবাজার সৈকতের জীবন্ত রাজ কাঁকড়া নিয়মিত প্রাণ হারাচ্ছে। এই লাল কাঁকড়া সৈকতের বালুতে গর্ত করে বসবাস করে। এদিক-সেদিক নিয়মিত বিচরণ করে থাকে। অসাবধানতাবশত পরিত্যক্ত ছেঁড়াজালে পা আটকে অনেক কাকড়া প্রাণ হারায়। এতে করে একদিকে সৈকতের সৌন্দর্য বিনষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে মৃত কাঁকড়ার দুর্গন্ধে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। লাল কাঁকড়া বাঁচাতে কারেন্টজাল বসানো জেলেদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী বলে মনে করেন এই মানবাধিকার কর্মী। সাগরের সৌন্দর্য ও লাল কাঁকড়ার জীবন রক্ষার্থে সচেতন মহলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। এতেই অতীতের ন্যায় সৈকতজুড়ে লাল কাঁকড়া ও কাছিমসহ বিভিন্ন প্রজাতির উপস্থিতি নিশ্চিত করা সম্ভব। জেলার বিশিষ্ট পরিবেশবাদী কলামিস্ট ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, সৈকতে ব্যাপক অব্যবস্থাপনার কারণে হারিয়ে যাচ্ছে এক সময়ের নজর কাড়া কাছিম ও লাল কাঁকড়া। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে বিলুপ্তপ্রায় জীব বৈচিত্র্যের মধ্যে আকর্ষণীয় ওসব প্রাণী। তাদের রক্ষা ও অতীতের ন্যায় সর্বত্র বিচরণ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনসহ পরিবেশ প্রেমীদের প্রদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে জনসাধারণ ও যানবাহনের বেপরোয়া চলাচল বন্ধ, জীব প্রাণীদের চারণভূমি সংরক্ষণে সাইনবোর্ডসহ বিভিন্ন প্রকার প্রচার চালু করা দর কার , এ ব্যাপারে পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার নাসরিন আক্তার বলেন উপকুলি অঞ্চলের ১৯ টি জেলার লবণ পানির পিপিটি বেড়ে যাওয়ায় লাল কাঁকড়া সহ নানা প্রজাতির কাকড়া কুচিয়া গুলেমাস সাগর কাকা কচ্ছপ এই জাতীয় অনেক প্রাণী বর্তমান হারিয়ে যাওয়ার পথে দিন দিন দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর পলি পরে পানির উচ্চতা বাড়ছে সাগরের চর পড়ে যাচ্ছে সে কারণে সাগরের পানিতে লবণাক্ততা অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পাওয়ায় লাল কাঁকড়া সহ এই সমস্ত প্রাণী বিলুপ্ত হওয়ার পথে। তিনি আরো বলেন বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানীদের এক জরিপের ভিত্তিতে উঠে এসেছে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলের ১৯ টি জেলা র ১৭৪ টি উপজেলা লবণ পানিতে তলিয়ে যাবে পরস্পর জলবায়ুর যে প্রভাব দেখা যাচ্ছে তাতে বিজ্ঞানীদের মতামতের সাথে মিল পাওয়া যাচ্ছে ।