সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : সাতক্ষীরার শুঁটকিমাছের কদর দিন দিন বেড়েই চলেছে। জেলায় সকাল থেকে শুরু হয়ে বিকেল পর্যন্ত চলে শুঁটকিমাছ প্রক্রিয়াজাতকরণের কর্মযজ্ঞ।
নতুন নতুন উদ্যোক্তা ও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে শুঁটকির বাণিজ্যেও নতুনমাত্রা যোগ হয়েছে। দেশের বাজার ছাড়িয়ে ভারতেও রফতানি হচ্ছে সাতক্ষীরার মিঠাপানির এই শুঁটকিমাছ।
স্থানীয় শুঁটকিমাছ ব্যবসায়ীরা এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, লবণ ছাড়া অন্য কোনো রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার না করায় এখানকার শুঁটকির চাহিদা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। তারা প্রথমে আড়ৎ থেকে মাছ কেনেন। এরপর পানিতে ধুয়ে লবণ লাগিয়ে মাঝ রোদে শুকাতে দেন। এইভাবে সকাল থেকে কাজ শুরু হয়। দুপুরে ও বিকেলে ওই মাছ এপিঠ-ওপিঠ করে উল্টে সন্ধ্যা হলে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখেন। এভাবে সারাদিনের কাজকর্ম চলে।
প্রতি বছরই ত্রিশমাইল ও বিনেরপোতার অধ্যুষিত সাতক্ষীরার মাছের আড়ৎগুলো থেকে প্রচুর পরিমাণে দেশিয় ছোট-বড় মাছ আহরণ করা হয়। এই মাছের একটি বড় অংশ অবিক্রিত থেকে যায়। এই অবিক্রিত মাছ থেকেই তৈরি হয় শুঁটকি।
সাতক্ষীরা।ত্রিশমাইল ও বিনেরপোতা সড়কের একটু নিচে গেলে দেখা যায়, সিলভার কার্প, মৃগেল, বাটা, তেলাপিয়া ও ছোট পুঁটিসহ দেশিমাছ কেটে বাঁশের মাচায় শুকাতে দেওয়া রয়েছে। চাতালের পাশে ছাউনির নিচে মাছ নিয়ে বসেছেন কয়েকজন নারী। তারা মাছ বাছাই করে টুকরিতে রাখছেন। আবার কেউ কেউ মাচায় থাকা ভেজা মাছগুলোও এপিঠ-ওপিঠ করে উল্টে রাখছেন। চাতাল ঘরে রাখা শুঁটকিগুলো আবার কেউ কেউ টুকরিতে ভরে মাথায় করে এনে মাচায় রোদে শুকানোর জন্য আনছেন। এভাবে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাছ কাটা, বাছাই, ধোয়া, রোদে শুকানো, মাচা থেকে চাতালে তোলার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকেরা।
জেলার তালা উপজেলার ত্রিশমাইল এলাকায় শুঁটকি খামার মালিক রমেশ চন্দ্র খাঁ এই প্রতিপাদককে বলেন, ‘দুই বছরের বেশি সময় ধরে আমি শুঁটকিমাছের আড়ৎ বানিয়েছি। প্রতি মাসে ৪ হাজার কেজির মতো শুঁটকি বানিয়ে থাকি’।
বিনেরপোতায় আরো একটি খামারে স্থানীয়ভাবে কমদামের ছোট তেলাপিয়া দিয়ে শুঁটকি তৈরি করেন বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তবে এখানে পর্যাপ্ত উৎপাদন হলেও এখনো স্থানীয় কোনো বাজার সৃষ্টি হয়নি। ফলে বিক্রির জন্য শুঁটকিগুলো জেলার বাইরের মোকামগুলোয় পাঠাতে হয়। এতে লাভের পরিমাণ কমে যায়। তবে এসব শুঁটকি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন পোল্ট্রি ও মাছের ফিড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে আমরা সরবরাহ করি’।
সৈয়দপুরের বৃহৎ শুঁটকি আড়তের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন জানান, প্রতি মৌসুমে তিনি সাতক্ষীরা জেলা থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শুঁটকিমাছ সংগ্রহ করেন। এসব শুঁটকি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের লোকজন সিলভার কার্প মাছের শুঁটকি খান। সে কারণে, উত্তরাঞ্চলে এই মাছের শুঁটকির চাহিদা অনেক বেশি। তেলাপিয়া মাছের শুঁটকি কাঁকড়ার খাবার হিসেবে চাহিদা বেশি। পাশের দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পুঁটিমাছের শুঁটকির চাহিদা রয়েছে’।
পশ্চিমবঙ্গে পুঁটিমাছের শুঁটকি রফতানি করেন বলে জানান তিনি।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনিছুর রহমান এই প্রতিবেদককে বলেন, মিঠাপানির শুঁটকিমাছ উৎপাদনের জন্য খুবই সম্ভাবনাময় জেলা সাতক্ষীরা। বছরে প্রায় দুই লাখ টন সাদা মাছ উৎপাদন হয়, উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরায়। স্থানীয় আমিষের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহের পাশাপাশি বিদেশেও রফতানি করা সম্ভব।
তিনি বলেন, ‘এ জেলায় শুঁটকি উৎপাদনের রয়েছে অপার সম্ভাবনা। বছরে একটি সময় ঘেরে ধানচাষ করার জন্য খুবই কম দামে মাছ বিক্রি করেন চাষিরা। সেসময় ওই মাছ সংগ্রহ করে শুঁটকি তৈরি করতে পারলে ব্যাপক লাভবান হতে পারেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। তাই, আমরা শুঁটকি উৎপাদন বাড়ানোর জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি’।