সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : সাতক্ষীরায় হারিয়ে যাচ্ছে একসময়ের ঐতিহ্যবাহী গরু দিয়ে হাল চাষের সেই চিত্র। কৃষকের ঘরে গরু থাকলেও হাল চাষ তেমনটা ব্যবহার করা হচ্ছে না। একসময় গ্রাম বাংলার স্বাভাবিক চিত্র ছিল গরু দিয়ে হাল চাষ। আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন বিলুপ্তির পথে এই পদ্ধতি। হাল চাষের পরিবর্তে এখন ট্রাক্টর অথবা পাওয়ার টিলার দিয়ে অল্প সময়ে জমি চাষ করা হয়। অথচ দুই যুগ আগেও নিজের সামান্য জমির পাশাপাশি অন্যের জমিতে হাল চাষ করে সংসারের ব্যয়ভার বহন করতো দরিদ্র কৃষক। ঢাকা ভোরে কৃষক গরু, মহিষ, লাঙল,জোয়াল নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন। এ দৃশ্য এখন আর চোখে পড়ে না। জমি চাষের প্রয়োজন হলেই অল্প সময়ের মধ্যেই পাওয়ার টিলার চলে আসছে। শহর বন্দরনগর সবস্থানেই আধুনিকতার ছোঁয়া। কৃষি সেক্টর ও এর থেকে পিছিয়ে নেই।
যান্ত্রিকতা এবং আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে লাঙ্গল ও গরু দিয়ে হাল চাষ। যান্ত্রিকতা ও উন্নত চাষ পদ্ধতির কারণে এখন আর কেউ গরু দিয়ে জমি চাষ করেন না। ভোরবেলা কৃষকরা বের হতো জমি চাষ দেয়ার জন্য গরু এবং হাল নিয়ে। হাল দিয়ে চাষের পরে দেওয়া হতো মই। এখন সেই দৃশ্য চোখে পড়ে না। সাতক্ষীরা জেলার ভোমরা ইউনিয়নের চাষী নজরুল ইসলাম বলেন, গরুর হাল ও লাঙল দিয়ে প্রতি বিঘা জমি ৬০০-৭০০ টাকা পাওয়া যায়। বাপ-দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখতে তিনি গরু দিয়ে হাল চাষ করছেন। তিনি বলেন, এমন একটা সময় ছিল গরু ছাড়া হাল চাষের কথা চিন্তাই করা যেত না। এখন গরুর দাম বেশি এবং ট্রাক্টর যন্ত্রের সাহায্যে চাষ করায় সময় ও খরচ কম হওয়ায় কৃষকরা এখন আর গরু দিয়ে জমি চাষ করেন না। তবে ঐতিহ্য হিসেবে কেউ কেউ ধরে রেখেছেন গরু দিয়ে জমি চাষের বিষয়টি। আবার অনেকে হাল এবং মই পুরনো দিনের স্মৃতি হিসেবে বাড়ির আঙিনায় রেখে দিয়েছেন। কৃষিবিদদের মতে, গ্রাম বাংলা থেকে গরুর হাল ও মই বিলুপ্তির প্রধান কারণ হলো আধুনিক প্রযুক্তির প্রসার। আধুনিক প্রযুক্তি এখন সহজলভ্য হওয়ায় কেউ সময়, পরিশ্রম ও অর্থ ব্যয় করছে না গরুর হালে। এছাড়া গরুর দাম বৃদ্ধি হওয়ায় আগের মতো ঘরে ঘরে গরু পালনের বিষয়টিও কমে গেছে। এক সময় চাষ দেয়ার জন্য নির্দিষ্ট গরু পালন করা হতো। গোখাদ্যের দাম বৃদ্ধি সহ নানান কারণে সময়ে পথ পরিক্রমায় গেছে কৃষি কাজে গরুর ব্যবহার। যারা এখন গরুর লালন পালন করছেন তারা বাণিজ্যিকভাবে গরু পালন করছেন। গরুকে এখন আর কৃষি কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে না।
জেলা কৃষি কর্মকর্তারা বলেন, হাল চাষের জন্য দরকার একজোড়া গরু বা মহিষ। কাঠ আর লোহার সমন্বয়ে তৈরি লাঙল, জোয়াল, মই, গরুর মুখের লাগাম ইত্যাদি। হাল চাষেই বেশি ভালো হয় জমি। লাঙ্গলের ফলা জমির অনেক গভীর অংশ পর্যন্ত যেতে পারে বলে মাটির গঠন ভালো হয়। গরুর পায়ের ও গোবরের কারণে জমিতে কাদা বেশি হতো বলে জমির উর্বরতা শক্তি অনেক বৃদ্ধি পেতো। কিন্তু মেশিনে হাল চাষে সেইসব পাওয়া যায় না। সদর থানার লক্ষীধারী গ্রামের গোলাম হোসেন কৃষক জানান, এখন হালচাষের জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতির বিভিন্ন মেশিন আবিষ্কার হয়েছে। মেশিন দিয়ে অল্প সময়ে অনেক বেশি জমির চাষ করা গেলেও দিন দিন গ্রামীণ ঐতিহ্য থেকে হারিয়ে যাচ্ছে গরু, লাঙল, জোয়ান ও মই দিয়ে হাল চাষ। ঐতিহ্য হিসেবে গ্রাম বাংলার কৃষির আদি ঐতিহ্য হিসেবে দুই একজন কৃষক এখনো ধরে রেখেছেন এই হালচাষ। সদর উপজেলার প্রবীন কৃষক জুন্মাত আলী জানান, তিনি গরু, জোয়াল,লাঙ্গল দিয়ে হাল চাষ করেছেন। এখন মেশিনে করেন। মেশিনের চেয়ে গরুর হলেই ভালো চাষ হতো। কিন্তু সময় ও খরচ কমাতে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার বেড়েছে। দেশীয় কৃষির ঐতিহ্যটি এখন আর দেখা যায় না।