নড়াইল প্রতিনিধিঃ নড়াইলে পুলিশ কতৃক জমি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখলের বিরূদ্ধে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। শনিবার ( ১ মার্চ ) সকাল ১১ টার দিকে শেখহাটি পুলিশ ক্যাম্প এর সামনে এ কর্মসূচি পালিত হয়। সংবাদ সম্মেলনের ব্যানারে লেখা ছিল “দীর্ঘ ২ যুগ ধরে জোরপূর্বক পুলিশ কর্তৃক জমি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখলের বিরূদ্ধে সংবাদ সম্মেলন, আমার জমি আমি চাই, পুলিশের বিচার চাই”। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নড়াইল সদর উপজেলার তপনভাগ গ্রামের ক্ষতিগ্রস্থ শওকত মিনা, শওকত মিনা’র ছেলে হাসান মিনা, মানিক মিনা, নাইমুল ইসলাম,সাহিন মিনা, মিনাজ সরদার, রফিকুল ইসলাম মনা সহ এলাকার লোকজন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ক্ষতিগ্রস্থ হাসান মিনা বলেন, দীর্ঘ ২ যুগ ধরে তারা পথে পথে ঘুরছেন, পুলিশ কর্তৃক বেদখল হওয়া জমি উদ্ধারে। আদলতের রায় ডিক্রি পেলেও জমির দখল ছাড়ছেন না পুলিশ। মূল্যবান জমি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হারিয়ে তার নি:স্ব হয়ে গেছেন। জমির শোকে তার বাবা চরম অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অর্থাভাবে অসুস্থ বাবার চিকিৎসা করাতে পারছেন না। তার বাবা ধুকে ধুকে মারা যাচ্ছে শুধুমাত্র পুলিশের খামখেয়ালি আচরনের কারনে।
বক্তব্যের মাঝে তিনি আরোও বলেন আমার জমি আমি চাই, পুলিশের বিচার চাই। আমরা অত্যন্ত হতদরিদ্র কৃষক পরিবার। দীর্ঘ দিন ধরে এলাকায় সুনামের সাথে ব্যাবসা করছি। প্রায় ২ যুগ ধরে পুলিশের হয়রানির শিকার হয়ে বিভিন্ন আদালতে ঘুরতে ঘুরতে আর্থিক ভাবে নিস্ব হয়ে গেছি। সরকারী বিভিন্ন দফতরে ঘুরে ঘুরে কোন প্রতিকার না পেয়ে অবশেষে সাংবাদিকদের স্মরনাপন্ন হওয়া।
বক্তব্যে হাসান মিনা আরোও বলেন নড়াইল সদর উপজেলার শেখহাটি বাজারে ১৯৯৩ইং সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ৬ শতক, ৭ অক্টোবর পৌনে ৫ শতক, ২৪ নভেম্বর ৪ শতাংশ, সর্ব মোট পৌনে ১৫ শতাংশ জমি কবলা মূলে ক্রয় করেন। এরপর ওই জমির উপর একটি রাইস মিল, একটি কাপড়ের দোকান, একটি মুদি দোকান দিয়ে বেশ ভালই চলছিল তাদের জীবন জীবিকা।
অতীব দুঃখের বিষয় ২০০১ইং সালের ১৫ এপ্রিল এ সম্পত্তি থেকে তৎকালীন শেখহাটি পুলিশ ক্যাম্পের কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তা এবং তৎকালীন পুলিশ সুপার মোঃ সোহরাব হোসেন এর যড়যন্ত্রের শিকার হয়ে বিভিন্ন ধরনের হুমকি, মামলা-হামলা শিকার হন। এমনকি তাদের দোকান রাইস মিল ভাংচুর করে উক্ত সম্পত্তিতে থেকে বে-দখল করে। এ ঘটনায় ২০০১ইং সালের এপ্রিল মাসে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিকট অভিযোগ করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে স্মারক নং-সেল/২-২০০১/৪১৬ (নড়াইল), তারিখ-২৫/০৪/২০০১ ইং মূলে পুলিশ হেড কোয়ার্টার বিষয় টি তদন্ত করে প্রতিবেদন চেয়েছিলেন। কিন্তু এ পর্যন্ত ওই তদন্ত সম্পর্কে কোন কিছুই জানতে পারেননি। তিনি আরো বলেন, ওই সময় পুলিশ সুপার দাবি করেছিলেন দলিল নং-১৭২১/১৯৯৯ মূলে দাতা মোছাঃ হায়াতন্নেছা থেকে ওই জমি পেয়েছেন। তার এ দাবি সত্য নয়। হায়াতন্নেছা অনেক আগেই ১৯৭৫ সালে তার আপন ভাই মোক্তার আলীর নিকট বিক্রয় করেছিলেন ওই জমি। তাহলে উক্ত হায়াতন্নেছা কিভাবে ১৯৯৯ সালে ওই জমি পুলিশ সুপার নড়াইল-কে প্রদান করেন।
নড়াইল জেলার পুলিশ কর্মকর্তাগণ উক্ত হায়াতন্নেছা কে দিয়ে তাহার আপন ভাইকে প্রদত্ত কবলা দলিল বাতিলের মামলা করেন যাহার নং-৪৯/৯৯। যাহা শুনানী অন্তে বিজ্ঞ আদালত ২০০০ ইং সালের ২৭ জুলাই বাদী হায়াতন্নেছা কর্তৃক দাখিল কৃত মামলা খারিজ করে দেন। ১৯৭৫ সালে তার ভাইকে প্রদত্ত দলিল সঠিক মর্মে ঘোষনা করেন। যাহা এখন পর্যন্ত কার্যকর আছে। সুতরাং ১৯৯৯ সালে পুলিশ সুপার নড়াইলকে প্রদত্ত দলিল বে-আইনী, অকার্যকর।
শুধু তাই নয়, এ সংক্রান্ত মামলায় হেরে যাওয়ার পরও শেখহাটি পুলিশ ফাঁড়ির মধ্যে ওই জমি ঘিরে রাখা হয়। বাধ্য হয়ে ২০২২ইং সালে নড়াইল দেওয়ানি আদালতে ডিক্রি জারি মামলা করা হয়। ২০২৫ইং সালের ৫ জানুয়ারি বিজ্ঞ আদালত বাদি পক্ষে রায় দেন। এরপরও পুলিশ ওই জমি দখলে রেখেছে। সর্বশেষ চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি আদালতের জারি কারক ওই জমি বুঝাইয়া দেয়ার জন্য সরজমিন গেলে ডিক্রি জারিতে বাধা দেয় পুলিশ। জমির দখল পেতে মারাত্নক অসুস্থ শওকত মিনা ও তার ছেলে হাসান মিনা সহ পরিবারের সকলে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।