বিধান চন্দ্র ঘোষ, দাকোপ (খুলনা) : খুলনার দাকোপে যেখানে সেখানে কেনা বেচা হচ্ছে বিভিন্ন কোম্পানির সিলিন্ডারের বোতল ভর্তি এলপি তরল গ্যাস ও পেট্রোল। সরকারি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে প্রশাসনের নাকের ডগায় দীর্ঘদিন যাবৎ অবাধে মুদি ও জুতার দোকানসহ বিভিন্ন দোকানে এ গ্যাস, পেট্রোলসহ দাহ্য পদার্থ বিক্রি হয়ে আসছে। এমনকি দোকানদারের মোবাইলে কল দিলেই মিলছে গ্যাস সিলিন্ডার।
সরেজমিনে এলাকাবাসি সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা সদর চালনা বাজার, বটবুনিয়া বাজার, নলিয়ান বাজার, কালিনগর বাজার, পোদ্দারগঞ্জ বাজার, বাজুয়া বাজার, লাউডোব বাজার, বানিশান্তা বাজারসহ বিভিন্ন হাট-বাজারের ওষুধের দোকান, রেস্তোরাঁ, মুদি, ক্রোকারিজ ও ফলের দোকান, চায়ের দোকান, জুতার, মোবাইল রিচার্জ, মোটর সাইকেলের গ্যারেজ ও কাঁচামালের দোকানসহ বিভিন্ন দোকান এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অবৈধভাবে অত্যান্ত খোলামেলা পরিবেশে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার ও পেট্রোল বিক্রি হয়ে আসছে। এমনকি প্রত্যান্ত অঞ্চলের দোকানগুলোতেও এসব গ্যাসের সিলিন্ডার ও পেট্রোল বিক্রি করা হচ্ছে। এ ছাড়া নিম্নমানের রেগুলেটর, গ্যাস সরবরাহ পাইপ ও অনুমোদনহীন বিভিন্ন কোম্পানির ঝুঁকিপূর্ণ চুলাও। জানা গেছে বিভিন্ন বাসা-বাড়ি ও রেস্টুরেন্টে এলপি গ্যাস ও মটর সাইকেলের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় এসব দোকানগুলোতে ঝুঁকিপূর্ণ এ জ্বালানির যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই এ গ্যাস, পেট্রোলসহ দাহ্য পদার্থ বিক্রি হয়ে আসছে। আবার মূল্য তালিকা না ঝুঁলিয়ে দামও নেওয়া হচ্ছে ইচ্ছামতো। নিয়মানুযায়ী এলপি গ্যাস ব্যবহার, গ্যাস ও পেট্রোল বিক্রয় ও বাজারজাত করতে হলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসায়ীকে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের লাইসেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের অগ্নিনির্বাপক গ্যাস সিলিন্ডার বাধ্যতামূলক সংরক্ষণ করার কথা। কিন্তু পরিবেশ অধিদফতর, বিদ্যুৎ-জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ অধিদফতরসহ জেলা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই শুধু মাত্র পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছ থেকে প্রতিষ্ঠানের নামে ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করে অবৈধভাবে এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। সচেতন মহলের অভিযোগ দীর্ঘদিন যাবৎ যথাযথ কর্তৃপক্ষের তদারকি না থাকায় দিন দিন অবৈধভাবে এ ব্যবসা বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। ফলে যত্রতত্র সিলিন্ডারের বোতল ভর্তি এলপি তরল গ্যাস ও পেট্রোল বিক্রির কারণে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডসহ নানা দুর্ঘটনা ঘটনার আশঙ্কা করছেন ওই মহল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েক জন এলপি গ্যাস ও পেট্রোল ব্যবসায়ী জানান, সবাই বিক্রি করে তাই আমরাও বিক্রি করছি। তা ছাড়া কোনো সমস্যা তো হতে দেখি না। তবে আইন ও বিস্ফোরক প্রতিরোধ বিষয়ে জানতে চাইলে অধিকাংশ ব্যবসায়ী এ আইন সম্পর্কে জানেন না। আবার জানলেও তা মানতে চান না।
এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন কর্মকর্তা আবুল বাশার বলেন, বিস্ফোরক অধিদপ্তরের লাইসেন্স ছাড়া গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি আইনগত অপরাধ। এমনকি পেট্রোলও। তা ছাড়া ফায়ার সার্ভিসের অগ্নিনির্বাপক গ্যাস সিলিন্ডার রাখা বাধ্যতামূলক। তবে কিছু লোকের লাইসেন্স থাকলেও অধিকাংশ ব্যবসায়ীর নেই। এ ছাড়া আমরা ব্যবসায়ীদের এর ক্ষতিকারক বিষয়ে তুলে ধরে সবাইকে লাইসেন্স গ্রহণের জন্য সচেতন করছি। আর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারি কমশিনার ভূমি মহোদয় একটু সময়ে দিলে দুই একটা অভিযান পরিচালনা করতে পারলে বাকি ব্যবসায়ীরা অতি দ্রুত লাইসেন্স গ্রহণ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এব্যাপারে উপজেলা সহকারি কমিশনার ভূমি ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ জুবায়ের জাহাঙ্গীর এ প্রতিবেদকে জানান, বাজার মনিটনিংয়ের সময়ে এ বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।