তালা প্রতিনিধি : তালা উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজি সজনেডাঁটা উঠতে শুরু করেছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবং প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হওয়ায় গত বছরের চেয়ে এবার সজনে ডাটার উৎপাদন ব্যাপক হারে বেড়েছে। ফলে হাটবাজারে প্রচুর পরিমাণে উঠছে সজনে ডাটা। তবে বাজারে আনা সজিনার ডাটা চিকন ও পরিপুষ্ট হয়নি। প্রতি কেজি ১৬০-১৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার গাছে গাছে প্রচুর সজনে ডাটা ধরেছে। শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত রাস্তার পাশে, ঘরের আনাচে কানাচে, প্রতিটি গাছে ঝুলছে সজিনা ডাঁটা।
এদিকে মূল্য বেশি পাওয়ায় কৃষকরা সজিনার ডাল রোপন করতে উৎসাহিত হচ্ছে। বসতবাড়ির আশে পাশে রাস্তার ধারে ক্ষেতের আইলে লাগানো সজনে গাছ যত্নেই ছাড়াই অবহেলার মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠে। সজিনা পুষ্টি ও ভেজষগুনে ভরা সবজি হিসাবে খুব দামী।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় রাস্তার ধারে মৎস্যঘেরের আইলে পতিত জমিতে সজিনার ডাল রোপন করা হয়ে থাকে। দেশে ২টি জাত আছে, একটি হালো সজিনা ও আর একটি নজিনা। ভারত থেকে হাইব্রিড সজিনার জাত এদেশে এসেছে। এ জাতের বীজ বপন করে লাগাতে হয়। হাইব্রিড জাতের সজিনা গাছে দুই বার ফুল আসে। ফেব্রুয়ারী-মার্চ ও জুন-জুলাই মাস। সজিনা গাছের পাতা, ফুল, ফল, ব্যাকল ও শিকড় সবই মানুষের উপকারে আসে। সজিনার পুষ্টিগুণ অনেক বেশী। এ গাছের অনেক গুণ থাকায়, এ গাছকে যাদুর গাছও বলা হয়ে থাকে। কাঁচা সবুজ পাতা রান্না করে, ভর্তা করে ও বড়া ভেজে খাওয়া যায়। ফল সবজির মত রান্না করে খাওয়া যায়, ফল পাকলে সে সব ফলের বীজ বাদামের মতো ভেজে খাওয়া যায়। সজিনার পাতা, ফল, ফুল, বীজ, ছাল, মুলেও ভেজষগুণ আছে।
তালা উপজেলার খলিষখালী, খলিলনগর, সরুলিয়া, কুমিরা, তেঁতুলিয়াসহ বিভিন্ন ইউনিয়ানের সজিনা এখন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি করে ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছেন।
তালার খলিষখালী বাজারে যাওয়ার সময় চোখে পড়ে হরিতলা নামক মোড়ে একদল সজিনা ব্যবসায়ী সজিনা গাছ থেকে পাড়ছে। আরেকদল আঁটি বেঁধে বস্তায় ভরছে। তাদের কাছে গেলেই দেখা যায় ৭-৮জন লোক সজিনা আঁটি বাঁধছে। আবার কেউ বস্তায় ভরছে। আবার কেউ দাড়িপাল্লা দিয়ে সজিনা মেপে দিচ্ছে।
এ সময় সজিনা ব্যবসায়ী বিপ্লব হোসেন ও জয়দেব কুমার জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও খলিষখালী এলাকায় আমরা ব্যবসা করছি। অত্র উপজেলায় এবার সজিনার ভালো ফলন হয়েছে। বর্তমান প্রতিকেজি সজিনা তারা ৯০-১২০ টাকা দিয়ে কিনে ১৪০-১৬০ টাকা বিক্রি করছে। তবে দাম মাঝে মাঝে ওঠা-নামা করে।
তারা জানান, এই সজিনা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। অত্র এলাকায় প্রতি বছর সজিনা গাছ কিনে রাখা হয়। আর মৌসুমের সময় সজিনা ভেঙে বিক্রি করে আমরা জীবিকা নির্বাহ করি।
নামজুল ইসলাম নামের এক ক্রেতা জানান, মৌসুমের শুরুতে প্রতি কেজি ১২০-১৪০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে হাটবাজারে সজিনার দাম কিছুটা কমে এসেছে। বর্তমানে পাইকারি ৮০ থেকে ৯০টাকা ও খুচরা বাজারে ৯০ থেকে ১২০ কেজিতে বিক্রি হচ্ছে সজনে ডাটা।
সজনে বিক্রি করতে আসা কৃষক জাকির হোসেন বলেন, সজনে চাষ করা অন্য গাছের চেয়ে সহজ, কারণ সজনের গাছের ডাল থেকে নতুন গাছের সৃষ্টি হয়। এবছর ডাল রোপন করলে আগামী বছর গাছে ফলন হয়। বাড়তি খরচ হয় না। বাড়িতে বড় ৪/৫ টা গাছ থাকলে বছরে ৭/৮ হাজার টাকা আয় করা যায়।
তালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাজিরা খাতুন বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর সজিনার ফলন ভালো ফলন হয়েছে। সজিনা পুষ্টিকর সবজি হিসাবে ব্যাপক চাহিদা থাকায় কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের পরিকল্পিতভাবে সজিনা ক্ষেত গড়ে তোলার জন্য উদ্ভুদ্ধ করা হচ্ছে। এছাড়া ডাটা জাতীয় সবজি হওয়ায় এর চাহিদা রয়েছে। এটি বিভিন্ন তরকারির সাথে রান্না করে খাওয়া যায়। সজনের ডাটায় প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন উপাদান রয়েছে। সজনে রপ্তানি করে চাষি ও ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছে।