সাতক্ষীরা : সুন্দরবন ৩২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ, আট প্রকার উভচর ও তিনশ’ প্রজাতির পাখির বসবাসস্থল। কিন্তু ক্রমেই বিলুপ্তির হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে সুন্দরবনের এই প্রাণিকূল।
গত একশ’ বছরে সুন্দরবন থেকে কমপক্ষে ২৯ প্রজাতির প্রাণি বিলুপ্ত হয়েছে।
বিলুপ্ত প্রজাতির মধ্যে আছে বাঘরোল, চিতা বিড়াল, বার্কিং হরিণ ,বন্য মহিষ, দু’প্রজাতির গন্ডার,ভোঁদড়, শুশুক(ডলফিন), সর্দার গুঁইসাপ, গুঁই সাপ, কাঠা, চিরুনি, কচ্ছপ, ময়াল, দৈত্য বক, সাদা পেঁচা ,সমুদ্র ঈগল, মেছো বাঘ, সাগর কাঁকড়া, সাগর কুসুম, সাগর শসা, শকুন, পেঁচা, রক্তবর্ণ মেছো শামুক, মিঠে পানির কুমির, নীল গাই, নেকড়ে, সোয়াম্প ডিয়ার, সারস পাখি প্রভৃতি।
এসব প্রাণী বিলুপ্তির পেছনে মানুষের ভূমিকাই প্রধান। অনিয়ন্ত্রিত উপায়ে বনভূমি উজাড় হওয়ায় বিলুপ্ত হচ্ছে বন্যপ্রাণি।
নির্বিচারে গাছ পাচার, কৃষি ভূমির সম্প্রসারণ, বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট নির্মাণসহ নানা কারণে বন্যপ্রাণির আবাস ভূমির ব্যাপক ধ্বংস সাধন হচ্ছে। এছাড়া জমিতে ব্যবহৃত কীটনাশক বনের জলাশয়গুলোতে পড়ছে। ফলে বন্যপ্রাণিদের মধ্যে বন্ধ্যাত্ব, জন্মহার হ্রাস, বাচ্চা পালন ও ডিম ফোটানোর ক্ষমতা হারিয়ে ফেলা সহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রাণির আবাস বড় গাছ কেটে ফেলা, বাচ্চা ও ডিম চুরিও তাদের ক্ষতির অন্যতম কারণ। বৈশ্বিক উঞ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততার প্রতিক্রিয়াও বন্যপ্রাণির জন্য হুমকি সৃষ্টি করেছে।
এ ব্যাপারে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. সেলিনা আহমেদ এর মতে,জীব বৈচিত্রকে রক্ষায় প্রথমে অবাধ শিকার বন্ধ করতে হবে। বনাঞ্চল সংরক্ষণ করতে হবে। পাচারকারী ও শিকারিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে। পর্যটকদের সচেতন করতে হবে।
পরিবেশ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশের জীববৈচিত্র রক্ষায় সচেষ্ট রয়েছে সরকার। সেই লক্ষে কাজও শুরু করা হয়েছে। এ জন্য প্রয়োজনীয় সব কনভেনশন ও প্রটোকলেও স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ।
পরিবেশ অধিদপ্তরের দাবি, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র রক্ষায় সরকার এরই মধ্যে কিছু কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। ২০১০ সালের ২৩ নভেম্বর রাশিয়া ফেডারেশন এবং বিশ্ব ব্যাংকের সহযোগিতায় বাঘ সংরক্ষন শীর্ষক সম্মেলনের আয়োজন করা হয় । রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ নগরীতে বাঘ সংরক্ষণ সংক্রান্ত শীর্ষক সম্মেলনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পৃথিবীতে মানুষের বাসযোগ্য করতে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য বন্যপ্রাণির বিলুপ্তি রোধ করতে হবে।
বিশ্ব ব্যাংক, বৈশ্বিক সংরক্ষণ সংস্থা আইইউসিএন ও পান্থেরা নামক সংস্থা সম্প্রতি এক গবেষণা প্রতিবেদনে বাঘের বসবাস উপযোগী ৪২টি উৎসস্থল সনাক্ত করেছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বাঘ শিকার, হত্যা ও পাচার রোধ করে এসব উৎস স্থল রক্ষা করা সম্ভব হলে বাঘের বিলুপ্তি এড়ানো যেতে পারে। উৎস স্থলের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এখানে বাচ্চা জন্মদানে সক্ষম বাঘ বাস করে।
সুন্দরবন রক্ষায় এখনই সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। পাচারকারী ও শিকারিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগসহ পর্যটকদের সচেতন করতে হবে বলেও মনে করছেন সচেতন মহল।