শ্যামনগর প্রতিনিধি : স্বাধীনতার ৫৩ বছরের সফল পথচলা শেষে ৫৪ বছরে পা রাখল আমাদের মাতৃভূমি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। প্রতি বছর ২৬ মার্চের এই দিনে বাংলাদেশে পালিত হয় মহান স্বাধীনতা দিবস, যার নেপথ্যের নায়ক বা কান্ডারি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলাদেশের মুক্তির বীজ লুকায়িত ছিল। জাতির পিতার একটি কথায় বাংলার মানুষ পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে গর্জে উঠেছিল মুক্তির নেশায়। যার চূড়ান্ত ফসল হিসেবে আমরা পেয়েছি আজকের এই স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা বাঙালি জাতির প্রত্যেক নাগরিকের আবেগ ও অহংকারের জায়গা। জাতীয় জীবনে বঙ্গবন্ধু ও মহান স্বাধীনতা দিবসের তাত্পর্য অপরিসীম। দেশ স্বাধীন করার প্রত্যয়ে দৃঢ়চিত্তে বাঙালি জাতির ইতিহাসে দিনটি একটি মাইলফলক। প্রতি বছর মহান স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং স্বাধীনতাযুদ্ধের মহান শক্তিতে উদ্বুদ্ধ বাঙালি জাতি নতুনরূপে প্রাণ সঞ্চার করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা লাভ করে।
২৬ মার্চ, ১৯৭১ সালে পৃথিবীর মানচিত্রে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি এবং বাঙালি জাতির সূর্যসন্তান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৃপ্ত ঘোষণার মাধ্যমে বাংলাদেশ নামক একটি দেশের অন্তর্ভুক্তি ঘটে। এই দিনে সূর্যোদয়ের মধ্য দিয়ে আমাদের জাতীয় জীবনে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। মহান স্বাধীনতাদিবসের আনন্দোজ্জ্বল মুহূর্তের মধ্যে প্রথমেই যে কথা মনে পড়ে, তা হলো এ দেশের অসংখ্য দেশপ্রেমিক শহীদের আত্মদান। ১৯৭১ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলার মানুষ পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক স্বৈরশাসনের ২৪ বছরের গ্লানি থেকে মুক্তির পথ খুঁজে পেয়েছিল। লাখ লাখ শহিদের রক্তে রাঙানো আমাদের এই স্বাধীনতার সূর্য। তাই এ দেশের জাতীয় জীবনে স্বাধীনতা দিবস সবচাইতে গৌরবময় ও পবিত্রতম দিন।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিনের প্রতিবাদ ও সংগ্রামের পর ব্রিটিশ শাসন-শোষণ ও বঞ্চনার জাঁতাকল থেকে মুক্ত এবং স্বাধীন পাকিস্তান রাষ্ট্রের অংশ হয়ে বাঙালি জাতি স্বাধীনতার স্বপ্ন তথা স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার ও চলাফেরা করার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণ ও বঞ্চনার মাত্রা বাঙালি জাতির স্বাধীনতার পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছিল। নতুন করে শুরু হয়েছিল পাকিস্তানি স্বৈরশাসক শাসন নামের শোষণ। তবে বাঙালি জাতির ইতিহাস মূলত লড়াই করে বেঁচে থাকার ইতিহাস। অন্যায় ও অত্যাচারের কাছে মাথা নত না করার ইতিহাস। পাকিস্তানিরা যখন বাঙালিদের নতুন করে শোষণ ও পরাধীনতার শৃঙ্খলে বেঁধে রাখার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, ঠিক তখনই শতাব্দীর মহানায়ক হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভ্যুদয়ে বাঙালি জাতিকে মুক্তির মহামন্ত্রে উজ্জীবিত করে ধাপে ধাপে এগিয়ে নিয়ে গেছেন স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্যে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জয়লাভ, ছাপ্পান্নর সংবিধান প্রণয়নের আন্দোলন, ছেষট্টির বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফার আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের পথ পেরিয়ে সত্তরের ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন সবই বাঙালি জাতির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের মাইলফলক।
পাকিস্তানি শাসনামলে দীর্ঘ ১৩ বছরেরও বেশি সময় কারাগারের অভ্যন্তরে থাকা, কয়েকবার ফাঁসিকাষ্ঠের মুখোমুখি, অসংখ্য মিথ্যা মামলায় অসংখ্যবার কারাবরণ করার পরও এ দেশের স্বাধিকার আন্দোলনে প্রেরণা দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর অপরিসীম সাহস, দৃঢ়চেতা মনোভাব ও আপসহীন নেতৃত্ব পরাধীন বাঙালি জাতিকে সংগ্রামী হওয়ার প্রেরণা জুগিয়েছিল। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দেওয়া তাঁর বক্তব্য বাঙালিদের ইস্পাতকঠিন ঐক্য গড়ে তুলে স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে মরণপণ সশস্ত্র যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে শক্তি ও সাহস জুগিয়েছিল। স্বাধীনতার দৃপ্ত ঘোষণার মধ্য দিয়ে সেদিন নিপীড়িত ও বঞ্চিত বাঙালি জনগণের শোষণমুক্তির প্রত্যাশা অর্জন করেছিল এক নতুন দিকনির্দেশনা, নতুন মাত্রা। সেদিন স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সমগ্র জাতি এককাট্টা হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ঐক্যবদ্ধ সশস্ত্র সংগ্রামে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ বুকে ধারণকারী এবং স্বাধীনতার মহান শক্তিতে উদ্বুদ্ধ বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি এখন বিশ্বের অনেক দেশের জন্যই উদাহরণ। অর্থনীতি ও আর্থসামাজিক, বেশির ভাগ সূচকে বাংলাদেশ ছাড়িয়ে গেছে দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব দেশকে। বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার পেছনে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং মহান স্বাধীনতার শক্তি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও স্বাধীনতার মহান শক্তির ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা অপ্রতিরোধ্য।
২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করা এখন মূল লক্ষ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। আমাদের তরুণ প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও স্বাধীনতার মহান শক্তিতে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশমাতৃকার উন্নয়নে কাজ করার মনমানসিকতা ধরে রাখলে লক্ষ্য নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই অর্জিত হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। সেদিন বঙ্গবন্ধু এবং বাঙালিরা চেয়েছিলেন বলেই স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল। আজকেও আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা চেয়েছেন বলেই বাংলাদেশের এত এত উন্নয়ন ও অর্জন হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও হবে। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা বিশ্বাস করি যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা খুব করে চাইছেন বলেই আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে স্বাধীনতার মহান শক্তিতে উদ্বুদ্ধ বাঙালি তরুণ সমাজের সহায়তায় গড়ে উঠবে একটি অসাম্প্রদায়িক উন্নত এবং সমৃদ্ধশালী বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা।
স্বাধীনতা যে কোনো জাতির সবচেয়ে বড় অর্জন। এ দেশের মানুষ স্বাধীনতা অর্জন করেছে রক্তস্নাত পথ ধরে। ১৯৭০-এর নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়ী আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকার করে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ তারা রাতের আঁধারে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঘুমন্ত মানুষের ওপর। শুরু হয় ইতিহাসের বর্বরতম গণহত্যা। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে ২৬ মার্চের শুরুতেই বঙ্গবন্ধু দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ডাক দেন সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের। দীর্ঘ ৯ মাসের যুদ্ধ শেষে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। আর এর মাধ্যমেই অর্জিত হয় মুক্তিযুদ্ধের মহিমান্বিত বিজয়, যা কোনো দিন ম্লান হবে না। দিনটি বাঙালির জীবনে বয়ে আনে একই সঙ্গে আনন্দ-বেদনার অম্ল-মধুর অনুভূতি।
একদিকে হারানোর কষ্ট, অন্যদিকে প্রাপ্তির আনন্দ। তবে শেষ পর্যন্ত সর্বস্ব হারিয়েও স্বাধীনতাপ্রাপ্তির অপার আনন্দই বড় হয়ে ওঠে প্রতিটি বাঙালির কাছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ও আদর্শ ধারণ করে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। দেশের প্রত্যেক মানুষকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে কাজ করে যেতে হবে। কেননা, এ দেশ বঙ্গবন্ধুর, এ দেশ বাঙালির, এ দেশ আমার, আপনার, সবার। এমতাবস্থায়, স্বাধীনতার মহান শক্তিতে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের উন্নয়নে সবাইকে বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে দেশপ্রেমী হয়ে দেশের উন্নয়নে কাজ করার লক্ষ্যে এগিয়ে আসতে হবে।