1. news@sangjogprotidin.online : ADMIN : ADMIN ADMIN
  2. info@www.sangjogprotidin.online : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন :
শনিবার, ০৭ জুন ২০২৫, ০৮:৩৮ পূর্বাহ্ন
বিজ্ঞপ্তি :
জরুরী সাংবাদিক নিয়োগ চলছে আপনার কাছে একটি দুর্দান্ত সুযোগ! "সংযোগ প্রতিদিন" সংবাদপত্রে জরুরী ভিত্তিতে সাংবাদিক নিয়োগ চলছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হত্যার আসামী মন্টু মামলা থেকে রেহাই পেতে মরিয়া

  • প্রকাশিত: বুধবার, ২৬ মার্চ, ২০২৫

মাদারীপুর : মাদারীপুরের ভূমি দস্যুখ্যাত ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত তাওহীদ সন্নামত হত্যা মামলার গুরুত্বপূর্ণ আসামী মনোয়ার হোসেন মন্টু শরীফ নিজের গ্রেপ্তার এড়াতে ও মামলা থেকে রেহাই পেতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
শনিবার মাদারীপুর শহরের কলেজ রোড এলাকার নিজ বাড়িতে তার পক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেন শহিদুল ইসলাম খান ও মন্টু শরীফের বড় ভাই জামায়াতের অনুসারী দেলোয়ার হোসেন খোকন শরীফ। এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মন্টু শরীফের আত্মীয় স্বজন ও ঘনিষ্ট লোকজন।
নিজে আত্মগোপনে থেকে মামলা থেকে অব্যাহতি ও জমি দখলের অভিযোগগুলো তার ঘনিষ্ট লোকজন দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণে মরিয়া হয়ে পড়েছেন তিনি ও তার পক্ষের লোকজন।
এক সময়ের জাতীয় পার্টির নেতা, পরে আওয়ামী লীগে যুক্ত হয়ে গড়ে তোলেন অপরাধের রাজত্ব। কারও জমির উপর নজর পড়লেই ভয়-ভীতি দেখিয়ে দখল করে সাঁটিয়ে দেন সাইনবোর্ড। বাঁধা দিলে আসে হামলা আর মামলার হুমকি। মাদারীপুর-২ আসনের সাবেক এমপি শাজাহান খানের ক্ষমতা ব্যবহার করেই এই কার্যক্রম করেন মন্টু শরীফ। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর একে একে মুখ খুলতে শুরু করেছেন ভুক্তভোগীরা। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত তাওহীদ সন্ন্যামাত হত্যা মামলার গুরুত্বপূর্ণ আসামি হওয়ায় আত্মগোপনে ভূমিদস্যু খ্যাত মন্টু শরীফ। পুলিশ বলছে, অভিযুক্তকে ধরতে চলছে অভিযান। মাদারীপুর শহরের কলেজ রোড এলাকার বাসিন্দা মোফাজ্জেল, একরাম ও এমদাদুল হাওলাদার। এই তিনভাই প্রবাসী। ২০০৮ সালে সাফ-কবলা মূলে মুবারক হুসাইনের কাছ থেকে ২২ শতাংশ জমি কিনে মিউটেশন করেন তারা। পরে মোফাজ্জেল চলে যান ইংল্যান্ডে, আর একরাম ও এমদাদুল জীবিকার তাগিদে পাড়ি জমান ইতালিতে। জমি দেখাশোনার দায়িত্ব দেয়া হয় মোফাজ্জেলের শ্যালিকা শামিমা আক্তারকে। এতেই তিন প্রবাসীর জমির ওপর নজর পড়ে ভূমিদস্যু খ্যাত কলেজ রোড এলাকার মনোয়ার হোসেন মন্টু শরীফের। হঠাৎ রাতের আঁধারে লোকজন নিয়ে জমিতে সাইনবোর্ড সাঁটিয়ে দেয় সে। বাঁধা দিলে মামলা আর হামলার ভয় দেখানো হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
শুধু এই পরিবারটিই নয়। তাদের মতো মঞ্জুর ইসলাম হৃদয় মুন্সী, রিনা বেগম, মাহবুবুর রহমান, ওহাব মিয়া, হামিদুর রহমান রতনসহ অসংখ্য মানুষ এমন ঘটনার শিকার। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ভুয়া কাগজপত্র বানিয়ে নিজের লোকজন নিয়ে জমি দখল করে একের পর এক বাণিজ্য করেন মনোয়ার হোসেন মন্টু শরীফ। তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সামনে কেউ কথা বললেই আসে নির্যাতন আর হত্যার হুমকি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মন্টু শরীফ এক সময়ে ছিলেন- জাতীয় পার্টির ছাত্র সমাজের সভাপতি। বেশকয়েক বছর ছিলেন প্রবাসে। সেখান থেকে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে সবশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় অংশ নেন। সাবেক এমপি’র ক্ষমতায় বলিয়ান হয়ে সাধারণ মানুষের জমি দখলই হয়ে ওঠে মন্টুর নেশা। দখল হওয়া জমি নিয়ে একাধিক মামলা করেছেন ভুক্তভোগীরা।
ভুক্তভোগী শামিমা আক্তার বলেন, আমার বোন ও তার দুই দেবর ২২ শতাংশ জমি ক্রয় করে নামজারি করে দখলে আছে। কিন্তু রাতের আঁধারে সেই জমিতে সাইনবোর্ড সাঁটিয়ে দিয়েছেন মন্টু শরীফ। তিনি মাদারীপুর শহরে ভূমিদস্যু হিসেবেই পরিচিত। মন্টু শরীফের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে মামলা আর হামলার ভয় দেখায়। আমরা এই ভূমিদস্যুর হাত থেকে রক্ষা পেতে চাই। আরেক ভুক্তভোগী মঞ্জুর ইসলাম হৃদয় মুন্সী বলেন, আমাদের সঙ্গে জমি নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। অথচ জমি দখল করেছে মন্টু শরীফ। তার বড় বাহিনী আছে। মন্টু শরীফ নাকি এই জমি ক্রয় করেছে, কিন্তু কাদের কাছ থেকে এটি ক্রয় করেছে তা আমরা জানি না। আমরা ওয়ারিশ সূত্রে এই জমির মালিক। আমরা এই মন্টু শরীফের হাত থেকে বাঁচতে চাই।
মাহবুবুর রহমান বলেন, মন্টু শরীফ তার গুন্ডা বাহিনী নিয়ে আমাদের জায়গা দখল করে কাগজপত্র বানিয়ে অন্যের কাছে বিক্রির পাঁয়তারা করছে। আমরা কেউ আমাদের জায়গায় যেতে পারছি না, জায়গায় গেলেই গুন্ডাবাহিনী নিয়ে সে হামলা করে।
মন্টুর নির্যাতনের শিকার হামিদুর রহমান রতন বলেন, শহরের কলেজ রোড এলাকায় বাপ-দাদার পৈতৃক জমি। কবরস্থানসহ ৪ শতাংশ জমি জোরপূর্বক মন্টু শরীফ দখল করে নিয়েছে। আমাদের পরিবারের কেউ জমিতে গেলে লোকজন নিয়ে হুমকি দিয়ে সে বের করে দেয়। এক ভুক্তভোগী নামপ্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মন্টু শরীফ এলাকার ভূমিদস্যু হিসেবেই পরিচিত। তার নাম বললে এককথায় ভূমিদস্যু হিসেবেই ধরা হয়। তার কারণে নিরীহ মানুষ ব্যাপক হয়রানির শিকার হয়। দীর্ঘদিন আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে বের হয়ে গেছে। তবে এবার ছাত্র-জনতার সরকারি বিষয়টি কঠোর নজরদারিতে আনবে বলে মনে করি। তিনি বলেন, মন্টু শরীফ শুধু মাদারীপুরেই নয়, একক আধিপত্য দেখিয়ে অন্য জেলাতেও জমি দখল করতো।
এছাড়া একটি সূত্রে জানা গেছে, মন্টু শরীফের ভাই খোকন শরীফ মাদারীপুরে জামায়াতের অনুসারী হওয়ায় তার হত্যা মামলা থেকে নাম বাদ দেয়ার জন্য পাঁয়তারা চালিয়ে যাচ্ছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত তাওহীদ সন্ন্যামাত হত্যা মামলায় আসামি হওয়ায় আত্মগোপনে এই ভূমিদস্যু মুঠোফোনে তিনি দাবি করেন, নিয়ম মেনেই জমিতে সাইনবোর্ড দিচ্ছেন তিনি। এছাড়া জোর করে কারও জমি দখল করেননি কিংবা কাউকেই হয়রানি করেননি। সুযোগসন্ধানী একটি মহল তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে বলেও দাবি তার।
এই বিষয়ে মাদারীপুরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভূমিকা রাখা কয়েকজন ছাত্রনেতা জানিয়েছেন, আন্দোলনের সময়ে যাদের নেতৃত্ব ও হুমুকে আমাদের সহকর্মীরা নিহত হয়েছেন। সে সব মামলায় যারা আসামী হয়েছেন, তাদেরকে আইন শৃংখলা বাহিনী দ্রুত গ্রেপ্তার করে অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসবে। সেটাই আমাদের দাবী।
মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মো. সাইফুজ্জামান জানান, হত্যা মামলার আসামী মনোয়ার হোসেন মন্টু শরীফকে ধরতে পুলিশের অভিযান চলছে। এছাড়া কারও জমি দখল কিংবা জমি নিয়ে কাউকে হয়রানি করলে অভিযোগ তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

© সংযোগ প্রতিদিন
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট