1. news@sangjogprotidin.online : ADMIN : ADMIN ADMIN
  2. info@www.sangjogprotidin.online : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন :
শনিবার, ০৭ জুন ২০২৫, ০৭:৩৭ অপরাহ্ন
বিজ্ঞপ্তি :
জরুরী সাংবাদিক নিয়োগ চলছে আপনার কাছে একটি দুর্দান্ত সুযোগ! "সংযোগ প্রতিদিন" সংবাদপত্রে জরুরী ভিত্তিতে সাংবাদিক নিয়োগ চলছে।

সাতক্ষীরায় ৬৫ ভাটা অবৈধ, যে কারণে নির্বিকার পরিবেশ অধিদপ্তর

  • প্রকাশিত: বুধবার, ২৬ মার্চ, ২০২৫

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: গাজী ব্রিকস। ফসলি জমিতেই গড়ে তোলা হয়েছে ইটভাটাটি। দেদারছে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ইট তৈরির জন্য কেটে নেওয়া হচ্ছে ফসলি জমির মাটি।
মাত্র একশ গজের মধ্যেই রয়েছে ১৩৯ নম্বর হাটছালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ভাটাটির বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় একদিকে যেমন মারাত্মকভাবে পরিবেশ দূষণ ঘটছে, অন্যদিকে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি, হাঁপিয়ে উঠছে প্রাণীকূল।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ এর প্রতিটি ধারা লঙ্ঘন করে গড়ে তোলা সাতক্ষীরার শ্যামনগরের এ ভাটাটির প্রবেশপথে ঝুলানো রয়েছে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়েরের একটি সাইনবোর্ড।
শুধু গাজী ব্রিকস নয়, সাতক্ষীরা জেলার ৯৫টি ভাটার মধ্যে ৬৫টিই চলছে এক কায়দায়। রিট নিষ্পত্তি না হওয়ায় অ্যাকশনেও যেতে পারছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
পরিবেশ অধিদপ্তরের সাতক্ষীরা কার্যালয় জানায়, সাতক্ষীরা জেলায় মোট ইটভাটা রয়েছে ১২৫টি। এর মধ্যে ৩০টি বন্ধ রয়েছে। চালু থাকা ৯৫টি ইটভাটার মধ্যে পরিবেশ ছাড়পত্র রয়েছে মাত্র ৩০টির। বাকি ৬৫টি ইটভাটার পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। নেই সরকারি লাইসেন্সও। অবৈধ এসব ভাটা মালিক হাইকোর্টে একটি রিটের মাধ্যমে বছরের পর বছর ভাটা পরিচালনা করছেন। দিচ্ছেন রাজস্ব ফাঁকি।
সাতক্ষীরার অবৈধ ৬৫টি ভাটার কোনোটিই মানছে না ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩। অধিকাংশই গড়ে তোলা হয়েছে লোকালয়ে বা কৃষি জমিতে। ভাটাগুলোতে কয়লার সঙ্গে পোড়ানো হচ্ছে জ্বালানি কাঠ, তুষ কাঠ, প্লাস্টিক, সয়াবিনের গাথ ও টায়ার পোড়ানো কালি। ইট তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে ফসলি জমির ওপরের অংশের মাটি। অনেক ভাটাই রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক কিলোমিটারের মধ্যে।
যদিও ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ এর ৫ (১) ধারায় বলা হয়েছে, আপাতত বলবৎ অন্য আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো ব্যক্তি ইট প্রস্তুত করিবার উদ্দেশ্যে কৃষিজমি বা পাহাড় বা টিলা হইতে মাটি কাটিয়া বা সংগ্রহ করিয়া ইটের কাঁচামাল হিসাবে উহা ব্যবহার করিতে পারিবেন না।
৬ ধারায় বলা হয়েছে, আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো ব্যক্তি ইটভাটায় ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানি হিসাবে কোনো জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করিতে পারিবেন না।
৭ ধারায় বলা হয়েছে, আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো ব্যক্তি ইটভাটায় ইট পোড়ানোর কাজে নির্ধারিত মানমাত্রার অতিরিক্ত সালফার, অ্যাশ, মারকারি বা অনুরূপ উপাদান সম্বলিত কয়লা জ্বালানি হিসাবে ১৫ [আমদানি করিয়া] ব্যবহার করিতে পারিবেন না।
৮ (১) ধারায় বলা হয়েছে, আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, ছাড়পত্র থাকুক বা না থাকুক, এ আইন কার্যকর হইবার পর নিম্নবর্ণিত এলাকার সীমানার অভ্যন্তরে কোনো ব্যক্তি কোনো ইটভাটা স্থাপন করিতে পারিবেন না, যথাঃ- (ক) আবাসিক, সংরক্ষিত বা বাণিজ্যেক এলাকা; (খ) সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা বা উপজেলা সদর; (গ) সরকারি বা ব্যক্তি মালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য, বাগান বা জলাভূমি; (ঘ) কৃষি জমি; (ঙ) প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা।
৮(৩) (ঙ) ধারায় বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি বিশেষ কোনো স্থাপনা, রেলপথ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা অনুরূপ কোনো স্থান বা প্রতিষ্ঠান হইতে কমপক্ষে ১ (এক) কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করিতে পারিবেন না।
ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় বাড়ছে বায়ু দূষণ। একই সঙ্গে ভাটায় প্লাস্টিক, সয়াবিনের গাথ ও টায়ার পোড়ানো কালি ব্যবহার করায় বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে দূষিত তরল বা কঠিন কণা। এতে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুসহ সব বয়স্ক মানুষ।
একই সঙ্গে কৃষি জমির ওপরের অংশের (টপ সয়েল) মাটি কেটে ইট তৈরি করায় উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। কমছে কৃষি উৎপাদন। এছাড়া অবাধে কাঠ পোড়ানোর কারণে একদিকে যেমন বৃক্ষ নিধন হচ্ছে, তেমনি ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য।
এ প্রসঙ্গে মানবাধিকার ও পরিবেশ কর্মী মাধব চন্দ্র দত্ত বলেন, ইটভাটার কালো ধোঁয়ার কারণে ইকোলজিক্যাল ব্যালান্স নষ্ট হচ্ছে। মাটির উর্বরতা কমে যাচ্ছে। বৃক্ষ নিধন হচ্ছে। ভাটা অঞ্চলের মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ভাটা শ্রমিকরাও এর শিকার। কিন্তু এ অবস্থা থেকে উত্তরণে কোনো ভূমিকা দেখা যায় না।
ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকি প্রসঙ্গে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগীয় প্রধান ডা. কাজী আরিফ আহমেদ বলেন, বায়ু দূষণের ফলে শ্বাসকষ্টসহ শ্বসনতন্ত্রের বিভিন্ন রোগের প্রকোপ স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায়। এটা ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় আরও বাড়ে। এতে বৃদ্ধ ও শিশুরা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকে। এটা নিয়ে ভাটা এলাকার মানুষের ওপর গবেষণাপূর্বক গুরুত্বারোপ করা যেতে পারে।
ইটভাটাগুলোয় অহরহ আইন লঙ্ঘন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ভূমিকা নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর সাতক্ষীরা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক বলেন, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ সালে হলেও এটি বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে ২০১৮ সালের পর। আইনটি হওয়ার পরপরই এ আইন লঙ্ঘন করছে এমন ভাটাগুলোর লাইসেন্স বন্ধ করে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে তাদের দ্রুততম সময়ে ভাটা বন্ধ বা অন্যত্র স্থানান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর পরপরই ভাটা মালিকরা কেউ এককভাবে, কেউ গ্রুপ ধরে হাইকোর্টে পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশনা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন। উচ্চ আদালত তাদের রিটের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশনার ওপর স্থগিতাদেশ দেন। রিট খারিজ না হওয়া পর্যন্ত কিছুই করার নেই। আদালত আমাদের কাছে জবাব চেয়েছেন, আমরা প্রত্যেকটির জবাব দিয়েছি। আমাদের সাতক্ষীরার ৬৫টি ভাটার বিষয়ে কোনো জবাব পেইন্ডিং নেই। আদালত তিন-চারটি রিট খারিজ করে দিয়েছেন। আমরা সেসব ভাটা বন্ধ করে দিয়েছি। এখন বাকিগুলোর অপেক্ষায় আছি। তবে, এর মধ্যেও পরিবেশ অধিদপ্তরের আওতাভুক্ত ক্ষেত্রে অভিযান চালানো  হচ্ছে।
অবৈধ ভাটা মালিকদের উচ্চ আদালতে রিট প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান মুকুল বলেন, প্রতিটি ভাটাই আইন লঙ্ঘন করছে। পরিবেশ দূষণ ঘটাচ্ছে। ভাটা মালিকরা কোন গ্রাউন্ডে রিট করেছেন তা স্ট্যাডি করে তৎপর হলে অবশ্যই দ্রুততার সঙ্গে রিটগুলো নিষ্পত্তি হওয়া সম্ভব। এক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তর বেলাকে লিখিতভাবে জানালে আমরাও সহযোগিতা করতে পারি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

© সংযোগ প্রতিদিন
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট