রহমতের মাস রমজান শুরু হয়েছে, দেখতে দেখতে শেষও হবে। কিন্তু আমরা কি সঠিকভাবে পবিত্র এ মাসের মাহাত্ম্য মর্যাদা রক্ষা করতে পারছি? মহান আল্লাহ ও তার রাসুল যেভাবে রোজা পালনের কথা বলেছেন- সেভাবে পালন করতে পারছি? রোজা তো কেবল উপোস থাকা নয়; অশ্লীলতা, পাপাচার এবং অমানবিক কাজ থেকেও বিরত থাকার নাম রোজা। রমজান মাসে নৈতিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে।
রোজা পালন প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ফরজ। রোজা পালনের মাধ্যমে মানুষের অন্তরে খোদাভীতি তৈরি হয়। একজন রোজাদার কখনো পাপ কাজে জড়াত না। অমানসিক-অমানবিক কার্যক্রমে লিপ্ত হতে পারে না। রোজাদার সবসময় মানুষের কল্যাণকামী হবে। পরোপকারী হবে। আল্লাহর ইবাদতগুজার হবে। এ জন্যই তো রমজানে অধীনস্থ লোকদের কর্মবোঝাও কমিয়ে দিতে বলা হয়েছে।
রোজার মূল উদ্দেশ্য ‘তাকওয়া’ অর্জন। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর; যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো’ (সুরা বাকারা : ১৮৩)। তাকওয়া মানে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর ভয় রাখা। আল্লাহর ভয়ে সবরকম গুনাহ ত্যাগ করা এবং গুনাহমুক্ত রমজান কাটানো। চোখের গুনাহ, কানের গুনাহ, জবানের গুনাহ ইত্যাদি সর্বাত্মকভাবে পরিত্যাগ করা। অনেকে রোজা রাখে, আবার ঘুষও খায়। সেহরি-ইফতার করে, আবার সুদও গ্রহণ করে। আল্লাহ তায়ালা যেখানে রোজা রেখে ‘হালাল’ খাবার খেতেই বারণ করেছেন, সেখানে ‘হারাম’ খাই কীভাবে?
আল্লাহ রোজার বিধান দিয়েছেন মানুষ যেন নিজেকে গড়তে পারে, আত্মশুদ্ধি করতে পারে। সব ধরনের পাপাচার থেকে বিরত থাকতে পারে। যারা রোজা রাখে, আবার পাপাচারও করে, তাদের বিষয়ে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘রোজা রেখে যে ব্যক্তি মিথ্যাচার ও অন্যায় আচরণ পরিহার করল না, তার পানাহার বর্জনে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ অর্থাৎ এমন রোজা আল্লাহর কাছে পছন্দনীয় নয়। পাপাচার বর্জন করতে না পারলে রোজা রাখা অর্থহীন।
অথচ প্রকৃত রোজাদারের বহু মর্যাদার কথা বলা হয়েছে হাদিসে। যদি পূর্ণ নৈতিকতা ও খোদাভীতির সঙ্গে রোজা পালন করতে পারি- এর প্রতিদান হবে অকল্পনীয়। এ বিষয়ে হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ নিজেই বলেছেন- ‘তোমাদের রোজা কেবল আমার জন্য। এর প্রতিদান আমি নিজেই দেব।’ রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশায় রোজা পালন করবে তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে’ (বুখারি)। তাই আসুন, আমরা মাহে রমজানের পূর্ণ হক আদায় করি। নৈতিকতা ও খোদাভীতির সঙ্গে পাপাচারমুক্ত রোজা পালন করি।