বরিশাল অফিস : বরিশালে এক ব্যবসায়ীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বিয়ের নাটক সাজিয়ে নগদ দুই লক্ষ ৮০ হাজার টাকা, স্বর্ণের আটিং, হাতঘড়িসহ অলিখিত চেক ও ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে আট লক্ষ টাকা মুক্তিপন দাবী করে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগে ভিকটিমের স্ত্রী মামলা করে বিপাকে পড়েছেন। আসামীদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ভূক্তভোগী ওই ব্যবসায়ী ও তার পরিবার।
গতকাল রবিবার স্কুল শিক্ষিকা লাভলী আক্তার জানাযায়, বরিশাল মেট্টোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালতে একটি মামলা করে বিপাকে পড়েছে তিনি। সে এখন পরিবার পরিজন নিয়ে আসামীদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। সংঘবদ্ধচক্রের হোতারা কখনো সাংবাদিক, আবার কখনো পুলিশ পরিচয় দিয়ে সাধারন মানুষকে জিম্মি করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এইচক্র সব সময়ই ক্ষমতাসীন ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় থাকিয়া চাদাঁবাজীর অভিনব পন্থা অবলম্বন করে। গত ২৫ মার্চ বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন বাদল মিয়ার বাসায় সালিশ ব্যবস্থার নাটক মঞ্চস্থ করে মোটা অংকের টাকা হাতে নিয়েছেন।
মামলারসূত্রে জানাযায়, নলছিটি শহরের পুরান পোষ্ট অফিস রোডস্থ ব্যবসায়ী মোঃ আখতারুজ্জামান হাওলাদারের বিরুদ্ধে ২০২১ সালে সংঘবদ্ধচক্রের অন্যতম সদস্য জনৈক লামিয়া আক্তার (২১) ঢাকা খিলগাওঁ থানা একটি ধর্ষণের মামলা করে। ওই মামলা আদালত হতে মিথ্যা প্রমানিত হয়। পরবর্তীতে ওই মামলা পুর্নজীবিত করতে হাইকোর্টে রীটপিটিশন করে। অপরদিকে ব্যবসায়ী আক্তারুজ্জামান বাদী হয়ে, তাকে হয়রানি, ছবি ও ভিডিও এডিট করে ফেইবুক ও বিভিন্ন স্থানে সরবরাহের অভিযোগে পন্যগ্রাফী আইনে মামলা করেন। উভয় পক্ষের চলমান মামলা নিস্পিত্তি করার নামে গত ২৫ মার্চ রাতে বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন জনৈক বাদল মিয়ার বাসায় ঘরের দরজা বন্ধ করে শালিস বৈঠকের বসেন। এসময় সংঘবদ্ধচক্রের সদস্যরা পুলিশ পরিচয় দিয়ে ওই গৃহের দরজা ধাক্কা দেয়। পুলিশ আতংকে ব্যবসায়ী আখতারজ্জামান নিজে আত্মরক্ষার জন্য গৃহকর্তার বিছানার মধ্যে লুকিয়ে পড়ে। গৃহের দরজা খোলার সাথে সাথে ওই তরুনী লামিয়া আক্তার বাদল মিয়ার বেড রুমের মশারী ও কম্বলের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ব্যবসায়ী আখতারুজ্জামানকে বাহির করিয়া তার চলমান মামলা তুলে নেওয়ার জন্য অকথ্য নির্যাতন চালিয়ে বিভিন্ন ধরনে ছবি ও ভিডিও ধারন করে। পুলিশ পরিচয়দানকারী ব্যক্তিরা মামলার ফাসাঁনোর হুমকী দিয়ে নগদ ১০ লক্ষ টাকা চাদাঁ দাবী করেন এবং তরুনী লামিয়ার আক্তারের সাথে অবৈধ সম্পর্ক আছে বলিয়া ১০ লক্ষ টাকা কাবিন দিয়ে বিবাহ করার জন্য অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সহি স্বাক্ষর আদায় করে। এসময় ওই ব্যবসায়ী আখতারুজ্জামানের পকেট থাকা দুই লক্ষ ২০ হাজার টাকা, স্বর্ণের আটিং, হাতে ঘরি এবং ইউসিবিএল ব্যাংকের এটিএম কার্ড থেকে উত্তোলন করিয়া নগদ ৬০ হাজার টাকা নিয়ে যায়। ভবিষ্যতে বারাবারি না করার জন্য অলিখিত ব্যাংকের দুইটি চেক বইয়ের পাতা, ১০টি ষ্ট্যাম্প স্বাক্ষর নিয়ে যায় এবং পরবর্তীতে আরও ৮ লক্ষ টাকা দাবী করে। এ ঘটনার পরদিন ২৬ মার্চ ওই সংঘবদ্ধচক্র জানান, তাদের মোবাইল ও ক্যামেরায় ধারনাকৃত ছবি ও ভিডিও বিভিন্ন ফেইসবুক ও মিডিয়ায় প্রকাশ করা হবে এবং থানা পুলিশকে তারা যা বলবেন, তাই শুনবে। তাই এ থেকে রক্ষা পেতে হলে, আরও আট লক্ষ টাকা দ্রুত দিতে হবে। এ ঘটনার বরিশাল মেট্রোপলিটন আদালতে ৮ জনকে আসামী করে ভিকটিমের স্ত্রী স্কুল শিক্ষিকা লাভলী আক্তার বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। অভিযুক্তরা হলেন ওই তরুনী লামিয়া আক্তার (২২), নলছিটির আওয়ামী লীগ নেতা ও বির্তকিত ফেইসবুক সাংবাদিক মুঃ মনিরুজ্জামান মুনির (৫০), কামরুজ্জামান ডলার (৪৫), মোঃ আল-আমিন (৩৫), ওই গৃহকর্তার স্ত্রী শারিমন আক্তার @ রুনা (৪০), তার স্বামী বাদল মিয়া, (৬), ওই তরুনীর পিতা আউব আলী হাওলাদার, মাতা রানী বেগম। এ সংঘবদ্ধচক্রের বিরুদ্ধে আরও একাধিক স্থানে চাদাঁবাজীর অভিযোগ রয়েছে। কয়েকদিন আগে মামুন মাস্টার নামে এক ব্যক্তিকেও জিম্মি করে চাদাঁবাজীর অভিযোগে মামলা করেছেন। মামুন মাস্টার মামলা করার কারনে এখন স্কুলে যেতে পারছেন না। অজ্ঞাত স্থান থেকে মোবাইল মামুন মাস্টার জানান, এই গ্রুপ খুবই ভয়ংকর। তারা বিভিন্ন কৌশলে অবিনব ফাদঁ সৃষ্টি করিয়া মানুষের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। তার মামলা বরিশাল কোতয়ালী থানায় তদন্তধীন রয়েছে।