1. news@sangjogprotidin.online : ADMIN : ADMIN ADMIN
  2. info@www.sangjogprotidin.online : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন :
শুক্রবার, ০৬ জুন ২০২৫, ০৩:৪১ পূর্বাহ্ন
বিজ্ঞপ্তি :
জরুরী সাংবাদিক নিয়োগ চলছে আপনার কাছে একটি দুর্দান্ত সুযোগ! "সংযোগ প্রতিদিন" সংবাদপত্রে জরুরী ভিত্তিতে সাংবাদিক নিয়োগ চলছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি আদেশে মুখ থুবড়ে পড়ার আশংকা কেরু এন্ড কোম্পানীর

  • প্রকাশিত: রবিবার, ১১ মে, ২০২৫

যশোর প্রতিনিধি : মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের একটি আদেশকে কেন্দ্র করে আন্দোলনে নামার হুমকি দিচ্ছেন দেশের হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষসহ লাখ লাখ নিম্ন আয়ের পরিচ্ছন্ন কর্মী। একই সাথে রাস্তার নামার ঘোষনা দিয়েছেন পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ওই আদেশের ফলে দেশের একমাত্র দেশীয় মদ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কেরু এন্ড কোম্পানীর উৎপাদনও হুমকির মুখে পড়বে বলে আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা। যার ফলে এই প্রতিষ্ঠানটিও ভবিষ্যতে বন্ধ হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন এর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। সূত্র বলছে, সমাজের স্বল্প আয়ের মানুষ বিশেষ করে হরিজন সম্প্রদায়, পরিচ্ছন্ন কর্মী, ডোমসহ বিভিন্ন পেশায় নিযুক্ত নিম্ন আয়ের মানুষের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় অবস্থিত কেরু এন্ড কোম্পানী দেশীয় মদ উৎপাদন করে। এই মদ দেশের বিভিন্ন জেলায় অবস্থিত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে বাজারজাত করে। যার মাধ্যমে সরকার প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করে থাকে। জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের আবগারী বিভাগের মাধ্যমে লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ীগণ সরকারী নিয়মনীতির আওতায় যুগ যুগ ধরে এই ব্যবসা করে আসছেন। কিন্তু গত ৪ মে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর, প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ হাবীব তৌহিদ ইমাম স্বাক্ষরিত এক পত্রের কারনে মাথায় হাত উঠেছে এই দেশীয় মদের ভোক্তা ও পরিবেশবাদীদের। ৫৮.০২.০০০০.০০৬.১৮.০০৩.৯০.১৫২২ নং স্বারকের ওই পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে কেরু এন্ড কোম্পানী (বাংলাদেশ) লিমিটেড কর্তৃক উৎপাদিত দেশী লিকারের বোতলের গায়ে যথাক্রমে লেবেলিং নিশ্চিতকরণ করতে হবে।এর আগে গত ২৬ নভেম্বর অধিদপ্তরের পরিচালক ( প্রশাসন, অর্থ ও পরিকল্পনা) মোহাম্মদ মামুন মিয়া স্বাক্ষরিত ৫৮.০২.০০০০.০০৫.১৮.১২৭.২২.৭১৮ নং স্বারকের পত্রে উল্লেখ করা হয়,“ কেরু এন্ড কোম্পানী (বাংলাদেশ) লিঃ কর্তৃক উৎপাদিত দেশীমদ বোতলজাত করে দেশী লিকার হিসেবে (১০০০ এমএল এবং ৫০০ এমএল) বাজারে সরবরাহ করার জন্য নিম্নবর্ণিত শর্তে নির্দেশক্রমে অনুমোদন প্রদান করা হলো। উক্ত শর্তে বলা হয়েছে পরিবেশ বান্ধব বোতলের ধরণ নির্ধারণে (প্লাস্টিক/কাঁচ) প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র/ অনুমোদন নিতে হবে। পরিবেশ,বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রনালয়ের উপসচিব ড: মোহাম্মদ শহীদ হোসেন চৌধুরী স্বাক্ষরিত গত ১২ ফেব্রুয়ারি তারিখে ২২.০০.০০০০.০৭৩.০৪.০০৮.২১.৬৯ নং স্বারকের পত্রে তিনি উল্লেখ করেন চঊঞ বোতলে মদ বাজারজাতকরণের পুর্বে পবিরেশগত ছাড়পত্র গ্রহণ বাধ্যতামূলক। উক্ত পত্রে বলা হয়েছে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে কেরু এন্ড কোম্পানীকে চঊঞ বোতলে মদ বিক্রির অনুমোদন প্রদান করা হয়েছে মর্মে পরিবেশ অধিদপ্তরের সূত্রোস্থ পত্রে জানানো হয়। এতে বলা হয়েছে, কেরু এন্ড কোম্পানী চঊঞ বোতল ওটিএম এর মাধ্যমে প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান হতে ক্রয় করে এবং প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের এ বিষয়ে পরিবেশগত ছাড়পত্র রয়েছে। তবে কেরু এন্ড কোম্পানীর ডিস্ট্রিলারি প্রতিষ্ঠানের পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই। উল্লেখ্য, এ মন্ত্রনালয় কর্তৃক গত ২৮ আগস্ট ২০২৪ তারিখের ২২.০০.০০০০.০৭৪.৯৯.০০২.২৪.২০৪ নং প্রজ্ঞাপনে প্লাস্টিক বোতলকে “সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক” হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই একই দিনে একই ব্যক্তি স্বাক্ষরিত ২২.০০.০০০০.০৭৩.০৪.০০৮.২১.৭১ নং স্বারকের পত্রে তিনি উল্লেখ করেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে কেরু এন্ড কোম্পানীকে চঊঞ বোতলে দেশীয় বাংলা মদ বিক্রির অনুমোদন প্রদান করা হয়েছে মর্মে পরিবেশ অধিদপ্তরের পত্রে জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কেরু এন্ড কোম্পানী চঊঞ বোতল ওটিএম এর মাধ্যমে প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান হতে ক্রয় এবং প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের এ বিষয়ে পরিবেশগত ছাড়পত্র রয়েছে; তবে কেরু এন্ড কোম্পানীর ডিস্ট্রিলারি প্রতিষ্ঠানের পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই। দেশীয় বাংলা মদ তৈরীর ফলে সৃষ্ট তরল বর্জ্য সরাসরি ড্রেনেজ দিয়ে মাথাভাঙ্গা নদীর পাইপঘাট নামক স্থানে নির্গমন করা হয় মর্মেও পরিবেশ অধিদপ্তর হতে জানানো হয়েছে। যার ফলে পরিবেশের ওপর বিরুপ প্রভাব বিবেচনায় পরিবেশ,বন ও জলবাযু পরিবর্তন মন্ত্রনালয় প্লাস্টিক বোতল বন্ধ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এমতাবস্থায় , কেরু এন্ড কোম্পানীর চঊঞ বোতলে দেশীয় বাংলা মদ বিক্রির অনুমোদন বাতিল করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লেখা ওই পত্রকে গুরুত্ব না দিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ হাবীব তৌহিদ ইমাম গত ২৮ এপ্রিলের স্বাক্ষরিত ৫৮.০২.০০০০.০০৬.১৮.০০৩.৯০.১৪৫০ পত্রে এবং ১০ এপ্রিল ২০২৫ ইং তারিখে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক মহোদয়ের লেখা ১৬৪ নং পত্রের আলোকে বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ইং তারিখের ৭১৮ সংখ্যক পত্রের মাধ্যমে কেরু এন্ড কোম্পানীর (বাংলাদেশ) লিমিটেড কর্তৃক উৎপাদিত দেশীমদ বোতলজাত করে দেশী লিকার হিসেবে (১০০০ এমএল এবং ৫০০ এমএল) বাজারে সরবরাহ করার অনুমতি প্রদান করা হয়। এ বিষয়ে অ্যালকোহল নিয়ন্ত্রন বিধিমালা,২০২২ এর তফসিল-১ এর ক্রমিক ৩২ অনুযায়ী দেশীমদের বোটলিং বাবদ ফি বিধি মোতাবেক প্রদানের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। কেরু এন্ড কোম্পানী (বাংলাদেশ) লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর প্রেরিত ওই পত্রের আলোকে এবং সর্বশেষ গত ৪ মে ২০২৫ ইং তারিখে একই ব্যক্তি স্বাক্ষরিত অপর এক পত্রে ফের ওয়ান টাইন ইউজার প্লাস্টিক বোতলে দেশী লিকার মার্কেটিং করার বিষয়ে লেভেলিং নিশ্চিকরণের তাগিদ প্রদান করেন। এই পত্র প্রাপ্তির পর পরই কেরু এন্ড কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাব্বিক হাসান নড়েচড়ে বসতে শুরু করেছেন। তিনি ইতিমধ্যে তার দপ্তরাধীন সকল দেশী মদের লাইসেন্সধারী ডিলার বা বিক্রেতাদের প্লাস্টিক ওটিএম বোতলে লেভেলিং করে দেশী বাংলা মদ বিক্রির উদ্যোগ গ্রহনের জন্য নির্দেশনা প্রদান করেছেন। এদিকে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের এই সব দিকভ্রান্ত নির্দেশনার কারনে চরম বিপাকে পড়তে যাচ্ছেন দেশীয় বাংলা মদের ভোক্তাবৃন্দ। তাদের সাফ কথা হচ্ছে, এটা আমাদের মতো গরীবেরা খায়। যাদের উচ্চ মুল্যে বিদেশী লিকার খাওয়ার কোন সুযোগ নেই তাদের জন্য সরকারী ভাবে সেই ব্রিটিশ আমল থেকে এই ব্যবস্থার প্রচলন ছিলো। কিন্তু হঠাৎ করে সরকারের সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কি এক অজানা কারনে প্লাস্টিক বোতলে লেভেলিং করে মার্কেটিং করার উদ্যোগ নিচ্ছেন। এর ফলে দেশী মদের বাজার মুল্য বহুগুনে বেড়ে যাবে। সাধারণ ভোক্তাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেলে এই দেশী মদের বাজার ধ্বংস হবে। যার প্রভাবে কালক্রমে বন্ধ হয়ে যাবে কেরু এন্ড কোম্পানীর উৎপাদন। আর সত্যিকার অর্থে যদি এই কারখানাটি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে একদিকে সরকার হারাবে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আর বেকার হয়ে যাবে এই কারখানার শত শত শ্রমিক। একই ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে এই বাংলা দেশী মদের লাখ লাখ ভোক্তা। যার প্রভাবে সমাজে বাড়বে নানা রকমের অবিচার আর অনাচার। সেই ক্ষেত্রে বাংলা দেশী মদের বাজার দখলে নিতে চেষ্টা করবে ভারতীয় ফেনসিডিল, ইয়াবা, হেরোইনসহ নানা রকমের অখাদ্য কুখাদ্য স্প্রীট,চোলাই মদ, তাড়িসহ নানা রকমের স্বাস্থ্যঝুকিপূর্ণ নেশাজাতীয় দ্রব্যাদি। অপর দিকে প্লাস্টিক বোতলে দেশী বাংলা মদ বাজারজাতকরণ শুরু হলে তা হবে পরিবেশের জন্য মারাত্নক ক্ষতির কারন। যেখানে সরকারের বন, পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রনালয় দেশব্যাপী পলিথিন ও প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করে পরিবেশ রক্ষার চেষ্টা করছে সেখানে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা খামখেয়ালীপনা করে দেশী বাংলা মদকে প্লাস্টিক বদলে লেভেলিং করে বাজারজাতকরণের উদ্যোগ নিচ্ছেন। এ যেন মরার উপর খাড়ার ঘা। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ডঃ সাইবুর রহমান মোল্যা বলেন, যে কোন ধরনের প্লাস্টিক পরিবেশ ও প্রতিবেশের জন্য মারাত্নক ক্ষতিকর ও ঝুঁকিপূর্ণ। মাইক্রো প্লাস্টিক মানুষের শরীরের জন্য মারাত্নক ক্ষতি। এই মাইক্রো প্লাস্টিকের প্রভাবে মানুষের শরীরে মরনব্যাধি ক্যন্সার থেকে শুরু করে নানা রকম দূরারোগ্য ব্যাধি হতে পারে। আর চঊঞ বোতল ওটিএম আরো বেশি মারাত্নক ক্ষতিকর। কারন এটা ভূমিতে যাওয়ার আগেই মাইক্রো আকারে মানুষের পাকস্থলিতে যাবে, যার ফলে মানুষের শরীরে মারাত্নক ক্ষতির কারন হবে। এছাড়া এই প্লাস্টিকের বোতল লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকবে। ফলে এটা জমির ও পরিবেশের জন্য মারাত্নক ক্ষতি হবে। এটা রিসাইক্লিনের আওতায়ও আনা সম্ভব হবে না। ফলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের এই সিদ্ধান্তটি পুন:বিবেচনা করা দরকার। যশোর সরকারী এম এম কলেজের ভূগোল বিভাগের অধ্যাপক সোলজার হোসেনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, প্লাষ্টিক সে পলিথিন হোক, আর বোতল হোক – দুটিই মানুষ ও পরিবেশের জন্য মারাত্নক ক্ষতিকর। এক দিকে সরকার পলিথিনের উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করছে, পলিথিন বিরোধী অভিযান চালাচ্ছে। অন্যদিকে সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রনালয় চঊঞ বোতল ওটিএম উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে উৎসাহিত করছে। যা কোন ক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাই অবিলম্বে সরকার এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়কে এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা উচিৎ হবে। না হলে পরিবেশ রক্ষায় পরিবেশবাদীদের রাস্তায় নামার কোন বিকল্প থাকবে না। পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রীন ওয়ার্ল্ডের নির্বাহী পরিচালক আশিক মাহামুদ সবুজ এই প্রসঙ্গে বলেন,পলিথিন বা প্লাস্টিক পরিবেশের শত্রু। আমরা পরিবেশবাদীরা দীর্ঘদিন পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিন বা প্লাস্টিকের উৎপাদন ও বিপননের বিরুদ্ধে রাজপথে সংগ্রাম করছি। আমাদের আন্দোলনের মুখে সরকার পলিথিন বা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ওয়ান টাইম ইউজ প্লাস্টিক দ্রব্যাদির উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করে। তারপরও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর এই ধরনের একটি কান্ডজ্ঞানহীন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে যা মানুষের জীবনের জন্য এবং পরিবেশের জন্য মারাত্নক ক্ষতির কারন হবে। এমনিতেই পরিবেশ বান্ধব প্লাস্টিকের অভাব প্রকট। তারপরেও যদি সরকারী একটি সংস্থা পরিবেশ,বন ও জলবায়ু মন্ত্রনালয়ের সিদ্ধান্তকে অমান্য করে নিজেদের খেয়ালখুশি মতো চঊঞ বোতল ওটিএম উৎপাদন ও বাজারজাতকরনের ব্যবস্থা করে তা হবে আত্নঘাতিমূলক সিদ্ধান্ত। এছাড়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর যে উদ্দেশ্য নিয়ে এটা করছে তার প্রভাব আরো মারাত্নক। সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষ বিশেষ করে হরিজন সম্প্রদায়, ডোম, মুচি, কামার কুমার, জেলে, তাঁতী, সুতোর, নাপিত তেকে শুরু করে সমাজের নিম্ন শ্রেণীর মানুষ তাদের অ্যালকোহলের চাহিদা পূরণ করতে কেরু এন্ড কোম্পানীর উৎপাদিত বাংলা বা দেশী মদ পান করে থাকে। উচ্চ মুল্যে তারা বিদেশী লিকার ক্রয় করতে পারে না বলেই সস্তা দামে দেশী মদ বা লিকার তারা পান করে। কিন্তু মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের কারনে এই নিম্ন আয়ের বিশাল সংখ্যক ভেক্তা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। বোতলজাত ও লেভেলিং করার কারনে পন্যমুল্য বহুগুনে বৃদ্ধি পাবে। যার ফলে নিম্ন আয়ের মানুষদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ার আশংকা রয়ে যাচ্ছে। আর এই সুযোগটি নেবে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের অসাধু ব্যবসায়ীরা। তারা তাদের দেশের নিম্নমানের ফেনসিডিল, বোতলজাত নানা রকমের পানীয়, রেকটি ফাইড স্প্রীট, আফিম, ভাঙ, গাঁজা, হেরোইন, দেশীয় চুলাই মদ, ইয়াবাসহ নানা অস্বাস্থ্যকর ও ক্ষতিকর দ্রব্যাদি বাজারজাত করনের মাধ্যমে দেশের লাখ লাখ ভোক্তাকে টার্গেট করবে। দেশের মধ্যে এক অরাজক পরিবেশ সৃষ্টি হবে। দেশীয় মদের বাজার বিলুপ্ত হবে। যার ফলে কেরু এন্ড কোম্পানীর উৎপাদন বন্ধ হবার মাধ্যমে ধীরে ধীরে এই কারখানাটি বন্ধ হয়ে যাবে। এরমক একটি সুদুর প্রসারী চিন্তাভাবনা করেই একটি মাফিয়াচক্র সুকৌশলে কেরু এন্ড কোম্পানীকে বন্ধ করার চক্রান্ত হিসেবেই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরকে ব্যবহার করছে। এর ফল ভালো হবে না। এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক সাদিকুল ইসলাম বলেন, যে কোন ধরনের প্লাস্টিক পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এটা বুঝতে পেরেই পরিবেশ অধিদপ্তরের উপসচিব ডঃ মোহাম্মদ শহীদ হোসেন চৌদুরী গত ১২ ফেব্রুয়ারি এক পত্রের মাধ্যমে কেরু এন্ড কোম্পানী (বাংলাদেশ) লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহোদয়কে জানিয়ে দেন যে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর প্লাস্টিক বোতলে বাংলা বা দেশী মদের বাজারজাতকরণের অনুমোদন বাতিল করা হলো। কিন্তু অজ্ঞাত কারনে সেই পত্রের বিষয়টি আড়াল করে গত বছরের ২৬ নভেম্বরের এক পত্রের আদেশ বলে ফের কেরু এন্ড কোম্পানীর উৎপাদিত দেশী বা বাংলা মদ প্লাস্টিক চঊঞ বোতল ওটিএম এর মাধ্যমে বাজারজাতকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। যা পরিবেশের জন্য মারাত্নক ক্ষমিতর কারন হতে পারে। একই সাথে এই প্রাস্টিক বোতলের মাইক্রো প্লাস্টিক ভূমিতে পড়ার আগেই তা মদের সাথে মানুষের শরীরে পৌ৭ছে মারাত্নক স্বাস্থ্য ঝঝুকি তৈরী করবে। এ বিষয়ে কেরু এন্ড কোম্পানী (বাংলাদেশ) রিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাব্বিক হাসানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এটা মন্ত্রনালয় ও অধিদপ্তরের সিদ্ধান্ত। এই বিষয়ে আমার মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তাছাড়া এসব অফিশিয়াল বিষয়ে কথা বলতে হলে, তথ্য জানতে হলে আপনাকে অফিসে আসতে হবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেখুন প্লাস্টিক বোতল ব্যবহার কি ক্ষতি হবে কি হবে না, সে বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তরা ভালো বলতে পারবেন। প্রতিষ্ঠপান প্রধান হিসেবে আমি এতো টুকু বলতে পারি এটা কারোর একার সিদ্ধান্তে হচ্ছে না। এটা সংশ্লিষ্ট সকলের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। তার পরেও বলবো , আগে চালু হোক তার পর দেখা যাবে পরিবেশ বা মানুষের স্বাস্থ্য ঝুকি কতোটা বাড়ছে। এছাড়া দাম বৃদ্ধির বিষয়টিও কর্তৃপক্ষের বিবেচনায় আছে।
এদিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের এই সিদ্ধান্তকে অন্তর্ঘাতমূলক বলছেন সাধারণ ভোক্তাগণ। তাদের সাফ কথা এই ভাবে দাম বৃদ্ধি করলে তারা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। যশোর সদর হাসপাতালের ডোম অরুন ও লক্ষন যারা মানুষের লাশ নিয়ে কাটা ছেড়ার কাজ করেন। তারা দুই জনে প্রতিদিন ২/৩ লিটার দেশী বা বাংলা মদ পান করে। তারা বলেন, সরকার এই ভাবে প্লাস্টিকের বোতলে লেভেলিং করে দাম বৃদ্ধি করলে তারা তা কিভাবে খাবেন। আর মদ না খেলে হাসপাতালের মর্গে মানুষের লাশ কাটা ছেড়া করার কাজ তারা কিভাবে করবেন। যশোর রেল স্টেশন এলাকার হরিজন পল্লীর বাসিন্দা রাম প্রসাদ বলেন, কি বলেন বাবু, এতা দেখি মড়ার পরে খাড়ার ঘা। একটু দেশী মদ খেয়ে মরতে চেয়েছিলাম। তাতো দেখছি হবার না। দাম বৃদ্ধি পেলে আমরা কিভাবে এসব খাবো। শেষ পর্যন্ত তো আমাদের চুলাইমদ খেয়েই মরতে হবে। মনিহার বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন হরিজন পল্লীর বাসিন্দা নিমাই দাস বলেন, আমাদের বোতলের কি দরকার। এতোদিন যে ভাবে আমরা মাল খাচ্ছিলাম সেভাবেই তো ভালো ছিলো। বোতলে ভরার কি দরকার। আমরা ড্রামে করে মদ কিনে আনতাম, মদ খেতাম। তাতে করে কি এমন ক্ষতি হচ্ছিল। যশোর বড় বাজার সুইপার কলোনীর কার্তিক চন্দ্র বলেন, কি জানি বাবু এসব কি হচ্ছে। মাল খেতে না পারলে শহর অচল করে দেব। আমরা কম দামে দেশী মাল খেতে চাই। বোতলে ভরে বিক্রি করার দরকার কি। দাম বাড়ালে আমরা তো আর এই মদ খেতে পারবো না। তখন চুলাই মদ, তাড়ি, ফেনসিডিল এসবের দিকে লোক ঝুকে পড়বে। তাতে করে সরকারের রাজস্ব ঘাটতি দেখা দিবে। কেরু এন্ড কোম্পানী বন্ধ হয়ে যাবে। একটি চক্র তো সেটাই চাচ্ছে। আমাদের মতো গরিবের ভালো তো কেউ দেখতে পায়না। হরিজন সম্প্রদায়ের নেতা হিরোন কুমার দাস বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের এটা একটা চক্রান্ত। বড় বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানী গুলোকে সুবিধা দেওয়ার জন্যই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর দেশী মদ নিয়ে এই চক্রান্ত শুরু করেছে। এটা সহ্য করবো না। হরিজন সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মানুষকে সাথে নিয়ে রাস্তায় নামবো। আমরা বাপ দাদার আমল থেকে বিভিন্ন উৎসব পার্বনে একটু কম দামে বাংলা মদ খেয়ে আনন্দ ফূর্তি করি। তাও যদি এই সরকার বন্ধ করে দেয় তাহলে রাস্তায় নামা ছাড়া আমাদের আর কি করার থাকবে। বড় লোকেদের বিদেশী মদের দাম কমানো হচ্ছে আর গরীবের দেশী মদ বোতলে ভরে বেশি দামে বিক্রি করার চক্রান্ত করা হচ্ছে। এটা আমরা মানবো না। দরকার হলে আমরা সারা দেশের হরিজন সম্প্রদায় রাস্তায় নেমে এর প্রতিবাদ জানাবো। তারপরও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এই বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত বা আচরণ মানবো না ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

© সংযোগ প্রতিদিন
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট