ডেস্ক রিপোর্ট : খুলনায় গত পাঁচ দিন ধরে তাপ প্রবাহ বয়ে চলেছে। প্রথমে মৃদু আকারে শুরু হলেও গত রোববার তাপপ্রবাহ তীব্র আকার ধারণ করেছিল। যদিও সোমবার তাপমাত্রা সামান্য কমেছে। প্রচণ্ড দাবদাহে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। তপ্ত বাতাস এবং প্রচণ্ড খরায় কঠোর শ্রমে নিয়োজিত মানুষকে কাহিল করলেও দমাতে পারেনি। সংসারের চাঁকা সচল রাখতে তাদেরকে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি নিয়েও কাজ করতে হচ্ছে। অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তারা কাজ ছেড়ে ঘরে ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন।
আবহাওয়া অফিস কর্তৃপক্ষ বলছেন, ভৌগলিক অবস্থানের কারণে সূর্য এপ্রিল-মে মাস থেকেই লম্বালম্বি ভাবে কিরণ দেয়। যে কারণে গরমের তীব্রতা বাড়ে। গত ৭ মে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে গেলেও ৮ থেকে ১০ মে পর্যন্ত মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। কিন্তু ১১ মে তাপপ্রবাহ তীব্র আকার ধারণ করে। সূত্র জানান, ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ মৃদু, ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তীব্র তাপপ্রবাহ।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মিজানুর রহমান বলেন, এবছর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় গত রোববার, ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সোমবার তাপমাত্রা আগের দিনের তুলনায় ১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে। তবে, বাতাস কম থাকায় এবং আকাশে হালকা মেঘ ভেসে বেড়ানোর কারণে গরম প্রায় একই রকম অনুভূত হচ্ছে। মঙ্গলবার সামান্য তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
নগরীর বড় বাজারে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা নানা পণ্য মাথায় করে আনলোডের কাজ করেন অন্তত ২৫শ’ হ্যাণ্ডলিং শ্রমিক। তারা ২৫ কেজি থেকে ৮০ কেজি ওজনের বস্তা মাথায় করে মহাজনের ঘরে পৌছে দেন। সকাল ৮ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত তাদের কাজ চলে। শ্রমিকদের বয়স ২৫ থেকে ৫০ পর্যন্ত। বস্তা প্রতি তারা ওজন অনুপাতে ৫ টাকা থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত মজুরি পেয়ে থাকেন। খুলনা হ্যাণ্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়ন (১২১২) এর সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফি দৈনিক জন্মভূমিকে এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, প্রচণ্ড গরমে হাড় ভাঙ্গা খাটুনিতে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তখন তারা কাজ ছেড়ে দিয়ে বাসায় ফিরছেন। সুস্থ হয়ে আবারও কাজে আসছেন।
সোমবার বেলা ১১ টা পেরিয়েছে। রূপসা উপজেলার একটি ইটভাটা থেকে আব্দুল্লাহ নামে এক শ্রমিক আঁধা ঘন্টার নাস্তা বিরতীতে চায়ের দোকানে এসেছিলেন। ঘামে ভেজা শরীর। চোঁখে-মুখে সর্বোচ্চ ক্লাািন্তর ছাপ। তিনি জানান, ভোর ৬ টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত তিনি ৩শ’২০ টাকা মজুরিতে কাজ করেন।
কার্তিক থেকে ৩০ চৈত্র পর্যন্ত মৌসুমি কারখানা ইটভাটায় কাঁচা ইট তৈরির কাজ চলে। এরপর স্টক করা ইট বর্ষাকাল না আসা পর্যন্ত পোড়ানো হয়। এখন ভাটায় বিভিন্ন সেকশনের কাজ বন্ধ থাকলেও কাঁচা ইট বহন করে পোড়ানোর স্থান ক্লিন পর্যন্ত নেয়্,া পোড়া ইট ক্লিন থেকে বের করা, ফায়ার ম্যান এবং দিন মজুরেরা কাজ করছেন। খুলনা জেলা ইটভাটা শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি আব্দুল জলিল মোড়ল এসব তথ্য জানান। তিনি দৈনিক জন্মভূমিকে বলেন, জেলার নয়-উপজেলায় বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে দুই শতাধিক ইটভাটা রয়েছে। প্রত্যেক ইট ভাটায় এখন তিন থেকে চার লাখ করে ইট পোড়ানোর জন্য মজুদ রয়েছে। হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি নিয়েও সেখানকার শ্রমিকরা নিম্ন মজুরিতে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
গ্রাম-শহরের সর্বত্র প্রখর রোদে খেটে খাওয়া মানুষদের দুর্দশার চিত্র প্রায় একই। রিক্সাচালক, ফেরিওয়ালা, নির্মাণ শ্রমিক, চাল কল শ্রমিকসহ নানা সেক্টরে রোদে পুড়ে কাজ করা মানুষদের জন্য বৈরী আবহাওয়া অবর্ণনীয় কষ্ট বয়ে এনেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছেন।
আবহাওয়াবিদ মিজানুর রহমান বলেন, আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে খুলনার বিভিন্ন স্থানে বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টি হলে তাপপ্রবাহ কেটে যাবে।