ডেস্ক রিপোর্ট : ঝিনাইদহের শৈলকুপায় চলছে অবৈধ মাদক ও জুয়ার রমরমা ব্যবসা। প্রশাসন নিরব। গাঁজার পাশাপাশি ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে মরণ নেশা ইয়াবা। আর উঠতি বয়সের যুবকরা মাদকের প্রধান ক্রেতা। উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জ সহ হাটে-ঘাটে মাঠে ময়দানে সর্বত্র চলছে মাদকের বেঁচাকেনা। ফলে হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক। এই উপজেলার উত্তর দিকে রাজবাড়ি, পশ্চিমে কুষ্টিয়া ও দক্ষিণ পূর্বে রয়েছে মাগুরা জেলা।ত্রীসীমান্ত এলাকা হওয়ার সুবিধার্থে মাদক ব্যবসায়ীরা সহজেই নানা রুট ব্যবহার করে গাজা ইয়াবাসহ নানা রকমের মাদক ব্যবসা চালিয়ে আসছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরসহ প্রশাসনেয় যেন মাদক নিয়ন্ত্রণে কোনো উদ্যোগই নেই। যার ফলে আন্তর্জাতিক মাদক চোরাকারবারিদের সাথে যোগসাজস করে এ উপজলোয় অবৈধ মাদকের চালান আসছে। ছোট ব্যবসায়ীরা মাঝে মাঝে গ্রেফতার হলেও, ধরা ছোয়াঁর বাইরে রয়েছে মাদকের শীর্ষ গডফাদাররা। যে কারণে মাদকদ্রব্য উপজেলা জুড়ে ব্যাপক প্রসার লাভ করেছে। মাদকের এমন প্রসারের কারণে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা ও আশঙ্কাজনকভাবে মাদকের দিকে ঝুঁকছে। এই উপজেলায় গাঁজা থেকে শুরু করে ভারতীয় মদ, বাংলা মদ, ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ নানা রকম মাদক কেনাবেচা হচ্ছে। যা উঠতি বয়সি তরণ-তরুনীদের হাতে খুব সহজেই পৌছে যাচ্ছে। বিশেষ করে ইয়াবা নামের এই মরণ নেশার বড়িটি আকৃতি ছোট হওয়ায় মাদক ব্যবসায়ীরা মাদক সেবীদের হাতে এমনকি বাড়িতে বাড়িতে খুব সহজেই পৌঁছে দিতে সক্ষম হচ্ছে। যা ভয়ংকর রুপে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও এই মরণ নেশা ইয়াবা সেবন করছে বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়ার মাদকের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার হতো শেখপাড়া এলাকাটি। সেখানে এক সময় ট্রাক ট্রাক ও বস্তা বস্তা গাঁজা আমদানি হয়ে তা দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়তো। কিন্তু বর্তমানে মাদক সেবীরা গাঁজা ছেড়ে মরণ নেশা ইয়াবার দিকে ঝুঁকছে। যে কারনে ওই এলাকায় অধিকাংশ গাঁজা ব্যবসায়ীরা গাঁজার ব্যবসা ছেড়ে ইয়াবা ব্যবসা শুরু করেছে। ওই এলাকায় মাদক সম্রাট হিসেবে পরিচিত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি তোক্কেল জোয়াদ্দার এর ছেলে বকুল জোরদার ও শিপন। এছাড়াও অসংখ্য মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে।আগস্টের পর বকুল জর্দার গা ঢাকা দিলেও তিনি গোপনে চালিয়ে যাচ্ছে রমরমা ভাবে মাদকের বাণিজ্য।
সাহায্য করছে রতিডাঙ্গা গ্রামের কয়েকজন বলে জানা গেছে।
শেখ পাড়া বাজারে সুইপার পট্টিতে চায়ের দোকানের আড়ালে দোকান খুলে নির্দিষ্ট সময়ে চলছে এই বাণিজ্য। এবং এই সুইপার পট্টিতে বাড়ির ভিতরে ঢ়ুকে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা মাদক সেবন করে।
বালাপাড়া গ্রামের চায়ের দোকানে কেরাম বোর্ড খেলার আড়ালে গভীর রাত পর্যন্ত মাদক সেবন চলে। উপজেলার রামচন্দ্রপুর, খুলুমবাড়ী, লাঙ্গলবাঁধ বাজার, নাগিরাট , ধাওড়া ধলহরাচন্দ্র কুশবাড়িয়া, আওধা, হাটফাজিলপুর,, রয়েড়া, বগদিয়া, গোবিন্দপুর-
ফজিলপুর, পৌর সাতগাছি, কবিরপুর, ফাজিলপুর,হাবিবপুর, এলাকার বিভিন্ন স্পটে মাদক সেবন ও কেনাবেচা হচ্ছে। এছাড়াও হাকিমপুর ইউনিয়নের চামটাইলপাড়া মোড়ে হিন্দু পাড়া নিলের ভিটা মাদক কেনাবেচা ও সেবন করা হয়। এমনকি শৈলকুপা থানার পাশে। ও লাঙ্গল বাঁধ বাজারে হরিজন সম্প্রদায়ের মধ্যে মদপানের জন্য মাসে নির্দিষ্ট হারে বাংলামদ নিয়ে আসার পারমিট থাকলেও সেটাকে পুঁজি করে শত শত লিটার বাংলা মদ, ভারতীয় মদ মাদকসেবীদের কাছে বিক্রি করছে। এ উপজেলায় মাদকের অবাধ বিচরনে শংকিত হয়ে পড়েছে উঠতি বয়সী তরুন-তরুনী ও ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকরা।
এদিকে জানা যায়, ১৪টি ইউনিয়ন আর ১টি পৌরসভার মধ্যে বিস্তীর্ণ এলাকায় এখন চলছে রমরমা জুয়ার আসর। উপজেলার আলমডাঙ্গা বাজারে, রয়েড়া মাদ্রাসা মাঝামাঝি পশ্চিম পাশে রশিদ ও রফিকের বাড়িতে জুয়ার আসর চালায় গানো ফজলুর ছেলে,রতিডাঙ্গা উওর পাড়া দুইটা চায়ের দোকানে নিয়মিত জুয়া খেলা চলছে, এছাড়াও জাঙ্গালীয়া চাষী ক্লাব, বোয়ালিয়া ভূমিহীন সাকাতলি দোকান, কাঁচেরকোল পরিবার ও পরিকল্পনা পাশে মা নার্সারিতে কাঁচেরকোল ডাকুয়া ব্রীজের পাশে সোহেল এর চায়ের দোকান। কাতলাগাড়ী বাজারে খালের পাড়ে চায়ের দোকান, ধুলিয়াপাড়া, সিদ্ধি পাকার মাথা, পুরাতন বাখরবা গ্রামের একজনের বাড়িতে দীর্ঘদিন জুয়ার আসর বসে। এছাড়াও মীনগ্রাম পূর্ব পাড়া চায়ের দোকানে জুয়ার আসর বসে, বাগুটিয়া এমপির মোড় ও ভান্ডাররিপাড়ায় নিয়মিত জুয়ার আসর বসানো হয়, পদমদী (মাজার রোড), বগুড়া গ্রামের পশ্চিম পাড়া একটি দোকান, শ্যামপুর গ্রামের মোড়ে সদর ও চায়ের দোকান, রামচন্দ্রপুর কাজীপাড়া মোনছুড়ের চায়ের দোকান, বেনীপুর বাজার,সাধুহাটি, সীমান্তবাজার, মহিষাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ সংলগ্ন চায়ের দোকান, সিদ্দি, তামালতলা বাজার, বাগুটিয়া মুদিপাড়া, নাগপাড়া চামটিপাড়া ঝাউদিয়ী ফালিপাড়া মহিরের দোকানসহ এই উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় মাদক ও রমরমা জুয়ার হাটে পরিণত হয়েছে। এসব এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, জুয়ার আড্ডায় যুবসমাজ নষ্ট হচ্ছে এবং সামাজিক অবক্ষয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় এই অবৈধ কার্যক্রম দিন দিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই জানান স্থানীয় রাজনীতি নেতাদের ও পোশাসনের সহযোগিতায় এসব মাদক ও জোয়ার ব্যবসা চলছে। যে কারণে এলাকার অনেকেই প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। এদিকে নেশা ও জুয়ার টাকার জন্য এলাকায় চুরি ডাকাতি অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে।
এ ব্যাপারে শৈলকুপা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাসুম খান জানান, ইতি মধ্যে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে পুলিশ বেশকয়েকজন জুয়াড়িকে অভিযান চালিয়ে আটক করেছে। তিনি আরো জানায়, মাদক ও জুয়ার বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া হবেনা। যেখানেই মাদক ব্যবসা ও জুয়ার আসরের খবর পাওয়া যাবে সেখানেই অভিযান চালানো হবে। মাদক ও জুয়ার বিরুদ্ধে পুলিশ সক্রিয় রয়েছে। আলামত ছাড়া কাউকে গ্রেফতার করা যায় না।