1. news@sangjogprotidin.online : ADMIN : ADMIN ADMIN
  2. info@www.sangjogprotidin.online : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন :
শনিবার, ০৭ জুন ২০২৫, ১২:০৬ অপরাহ্ন
বিজ্ঞপ্তি :
জরুরী সাংবাদিক নিয়োগ চলছে আপনার কাছে একটি দুর্দান্ত সুযোগ! "সংযোগ প্রতিদিন" সংবাদপত্রে জরুরী ভিত্তিতে সাংবাদিক নিয়োগ চলছে।

১৬ দিনে ৫০৭ জনকে ভারত থেকে পুশইন

  • প্রকাশিত: রবিবার, ২৫ মে, ২০২৫

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : বাংলাদেশের ওপর একের পর এক আগ্রাসন চালাচ্ছে প্রতিবেশী ভারত। সীমান্তজুড়ে জবরদখল-হতাহতের ঘটনাসহ নানাভাবে এই আগ্রাসন চালানো হচ্ছে যুগের পর যুগ। এবার আগ্রাসনের তালিকায় যুক্ত হয়েছে “পুশইন”( ঠেলে পাঠানো)।

এ ধরনের কার্যক্রমের কোনো আইনি বৈধতা নেই
বাংলাদেশের ওপর একের পর এক আগ্রাসন চালাচ্ছে প্রতিবেশী ভারত। সীমান্তজুড়ে জবরদখল-হতাহতের ঘটনাসহ নানাভাবে এই আগ্রাসন চালানো হচ্ছে যুগের পর যুগ। এবার আগ্রাসনের তালিকায় যুক্ত হয়েছে “পুশইন”( ঠেলে পাঠানো)। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে এই পুশইন শুরু করেছে ভারত। গত ৭ মে থেকে শুরু করা এই পুশইনের মাধ্যমে গত ১৬ দিনে (২২ মে পর্যন্ত) রোহিঙ্গাসহ কমপক্ষে ৫০৭ জনকে বাংলাদেশে জোর করে ঠেলে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় উদ্বেগ-উৎকন্ঠা জানিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়। আর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবিও যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে পুশইন করায় বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স-বিএসএফের সাথে বিভিন্ন পর্যায়ে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে মৌখিক ও লিখিতভাবে প্রতিবাদলিপি পাঠিয়ে জোরালো প্রতিবাদ জানিয়েছে। এছাড়া পুশইন রোধে বিজিবি সীমান্তে গোয়েন্দা নজরদারি ও টহল তৎপরতা বৃদ্ধি করে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থেকে সজাগ দৃষ্টি রাখছে বলে সীমান্তরক্ষাকারী এই বাহিনীর দাবি।
বিজিবি সদর দফতরের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ মে থেকে ২২ মে পর্যন্ত ১৬ দিনে খাগড়াছড়ি, কুড়িগ্রাম, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, কুমিল্লা, ফেনী জেলার সীমান্ত দিয়ে ৪২৯ জনকে পুশইন করেছে ভারত। এছাড়া সুন্দরবনের গহীন অরণ্যের মান্দারবাড়িয়া এলাকায় ৭৮ জনকে পুশইন করা হয়েছে। সবমিলে ৫০৭ জনকে পুশইন করেছে ভারত। এরমধ্যে ২২ মে বৃহস্পতিবার একদিনেই দেশের ছয় জেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে নারী, শিশুসহ অন্তত ১০৫ জন জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ। বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত কুমিল্লা, পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, মৌলভীবাজার, খাগড়াছড়ি ও ফেনী জেলায় এসব ঘটনা ঘটে। পরে এই ব্যক্তিদের তাৎক্ষণিকভাবে আটক করে বিজিবি।
জানা গেছে, ভারতে অবৈধভাবে বসবাসকারী বাংলাদেশি সন্দেহে ধরপাকড় শুরু হওয়ার পর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর (পুশব্যাক) একাধিক ঘটনা ঘটেছে। ভারতে যাকে পুশব্যাক বলা হয়, বাংলাদেশ সেটিকে পুশইন হিসেবে দেখে। এ পদ্ধতিতে আটক ব্যক্তিদের সীমান্ত পর্যন্ত নিয়ে গিয়ে জোর করে অন্য দেশের ভূখণ্ডে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। যদিও ভারতে এ ধরনের কার্যক্রমের কোনো আইনি বৈধতা নেই, তবুও এটি বহু বছর ধরেই অনানুষ্ঠানিকভাবে চলে আসছে, যা কেউ প্রকাশ্যে স্বীকার করে না।
ভারতের মানবাধিকারকর্মীরা এটিকে পুরোপুরি বেআইনি বলে অভিহিত করেছেন। তবে শিশু বা পাচারের শিকার নারীদের ক্ষেত্রে বিএসএফ মাঝে মাঝে মানবিক বিবেচনায় আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশে ফেরত পাঠায়।
সম্প্রতি ভারতের গুজরাট ও রাজস্থানে এক হাজারেরও বেশি সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে এবং তাদের মধ্যে অনেককেই আইনি প্রক্রিয়া না মেনে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পুশব্যাক করা হয়েছে। যদিও ভারতীয় আইন অনুযায়ী কাউকে আটক করলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করার বিধান রয়েছে, বাস্তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আটককৃতদের সরাসরি জেরা কেন্দ্রে পাঠিয়ে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো এটিকে অবৈধ ও সংবিধানবিরোধী বলে অভিযোগ তুলেছে। অপরদিকে ভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন, প্রচলিত আইনি পদ্ধতি অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ হওয়ায় এই ‘পুশব্যাক’ পদ্ধতিই ব্যবহার করা হচ্ছে। যদিও বিএসএফ এবং পুলিশ আনুষ্ঠানিকভাবে এই পদ্ধতির অস্তিত্ব স্বীকার করেনি।
দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গাসহ কয়েকশত ব্যক্তিকে বাংলাদেশে ‘পুশইন’ এর ঘটনায় নিন্দা ও উদ্বেগ জানিয়ে ভারতকে অন্তত চারবার চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ। চিঠিতে পুশইনের পুনরাবৃত্তি বন্ধের অনুরোধ জানানো হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের এসব অভিযোগকে প্রত্যাখ্যান করে ভারত বলেছে, তারা বাংলাদেশিসহ অবৈধ বিদেশিদের বিষয়টি স্থানীয় আইন ও রীতি অনুযায়ী মোকাবিলা করছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বুধবার দেওয়া এক চিঠিতে ভারত এ দাবি করে।
সংশ্লিষ্ট সুত্রগুলো জানায়, ভারত ৪ ও ৭ মে দেশের কয়েকটি জেলার সীমান্ত দিয়ে প্রায় ২০০ ব্যক্তিকে পুশ ইন করে। এর পর থেকে বিষয়টি সুরাহার জন্য বাংলাদেশ অন্তত চারবার ভারতকে কূটনৈতিক পত্র দেয়। যদিও পুশ ইন থামেনি। ৮, ১৩, ১৫ ও ২০ মে পাঠানো চার দফার চিঠিতে বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে বলেছে, পুশইনের পদক্ষেপগুলো গভীর উদ্বেগের, যা চূড়ান্তভাবে সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর প্রভাব ফেলছে এবং জনমনে নেতিবাচক মনোভাবও তৈরি করছে। পুশইনের ওই পদক্ষেপগুলো ১৯৭৫ সালের সীমান্ত কর্তৃপক্ষের জন্য যৌথ ভারত-বাংলাদেশ নির্দেশিকা, সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (সিবিএমপি) ২০১১ এবং বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের আলোচনায় দুই পক্ষের পারস্পরিক সম্মত সিদ্ধান্তের পরিপন্থী। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে এ ধরনের পুশ ইন অগ্রহণযোগ্য এবং তা পরিহার করা উচিত।
পর্যবেক্ষকদের মতে, অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে পরিবর্তিত রাজনৈতিক বাস্তবতায় এবং প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে একটা যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে গত কয়েক দিনের পুশইনের পদক্ষেপগুলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত; যা গভীর উদ্বেগের একটি বিষয়। এটি চূড়ান্তভাবে সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর প্রভাব ফেলছে এবং জনমনে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করছে।
পুশইনের সাম্প্রতিক ঘটনা : পুশইনের প্রথম ঘটনা ঘটে গত ৭ মে। ওইদিন বুধবার পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি ও উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে পুশ ইন করানোর পর ১২৩ জনকে আটক করে বিজিবি। তাদের ভেতর খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা, শান্তিপুর ও পানছড়ি সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশকারী ব্যক্তিরাও জানান, তাদের গুজরাট থেকে বিমানে করে প্রথমে ত্রিপুরায় নিয়ে আসেন বিএসএফ সদস্যরা। তারপর এক ঘণ্টা হাঁটিয়ে সীমান্ত দিয়ে এ পারে ঠেলে দেওয়া হয়। এই অনুপ্রবেশকারীদের ভেতর বাংলা ভাষাভাষী ছাড়াও রোহিঙ্গা ও গুজরাটি ভাষায় কথা বলা মানুষও ছিল বলে জানায় স্থানীয় প্রশাসন। তাদের মধ্যে মাটিরাঙ্গা উপজেলার শান্তিপুর দিয়ে ২৭ জন, তাইন্দং দিয়ে ১৫ জন ও পানছড়ি উপজেলার লোগাং সীমান্ত দিয়ে ৩০ জনকে বাংলাদেশ সীমান্তে ঠেলে দেয়া হয়।
আর সর্বশেষ বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত কুমিল্লা, পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, মৌলভীবাজার, খাগড়াছড়ি ও ফেনী-এই ছয় জেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে নারী, শিশুসহ অন্তত ১০৫ জন জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ। পরে এই ব্যক্তিদের তাৎক্ষণিকভাবে আটক করেছে বিজিবি।
ফুলগাজী থানার ওসি মোহাম্মদ লুৎফর রহমান জানান, সীমান্তে আটক ২৭ জনকে বিজিবি থানায় হস্তান্তর করেছে।
কুমিল্লার সীমান্ত দিয়ে ১৩ জনকে ঠেলে পাঠিয়েছে বিএসএফ। বৃহস্পতিবার ভোর ৪টার দিকে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার গোলাবাড়ী সীমান্ত এলাকা থেকে নারী, পুরুষ, শিশুসহ ওই ১৩ জনকে আটক করে বিজিবি। বিজিবির কুমিল্লা ব্যাটালিয়নের (১০ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মীর আলী এজাজ এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিজিবির কুমিল্লা ব্যাটালিয়নের (১০ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মীর আলী এজাজ বৃহস্পতিবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, কুমিল্লা ও ফেনী জেলার সীমান্ত এলাকা দিয়ে রাতের আঁধারে সর্বমোট ৫২ বাংলাদেশি নাগরিক পুশইন করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৯ জন পুরুষ, ১৫ জন নারী এবং শিশু ও কিশোর ১৮ জন।
পুশইন বা পুশব্যাক কোনো আইনসম্মত পদ্ধতি নয়: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
ভারত যেভাবে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে মানুষ ঠেলে (পুশইন) দিচ্ছে, তা আইনসিদ্ধ নয় বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। গত ১৭ মে শনিবার সকালে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার রায়মঙ্গল নদ ও বয়েসিং খালের সংযোগস্থলে সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে ‘বয়েসিং ভাসমান বিওপি’-এর উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ের সময় তিনি এ কথা বলেন।
পুশইন সমস্যার বিষয়ে বাংলাদেশ কূটনৈতিক সমাধানে বিশ্বাসী উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশ সব সময় আন্তর্জাতিক আইন ও প্রটোকল অনুসরণ করে আসছে। আমরা ইতিমধ্যে এ সমস্যা সমাধানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারতকে চিঠি লিখেছি। আমাদের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এ সমস্যার সমাধানে কূটনৈতিক যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

© সংযোগ প্রতিদিন
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট