সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : ঘূর্ণিঝড় শক্তির সংকেত পেয়ে অথবা ঘূর্ণিঝড় শক্তি উপকূলের দিকে যত ধেয়ে আসছে ততই শ্যামনগর আশাশুনি ও কয়রার মানুষের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য দৌড়ঝাপ শুরু হয়ে গেছে,,, এই সমস্ত এলাকার মানুষ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে করতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে সে কারণে ঘূর্ণিঝড়ের সংকেত পেলে তাদের মাথায় আর কাজ করে না কোথায় যে আশ্রয় নিবে গবাদি পশু চিংড়ি ঘের কিভাবে রক্ষা করবে এইসব বিষয় নিয়ে মাতাল হয়ে যায় তাই শুরু হয়েছে আবারও ঘূর্ণিঝড়ের খবর শুনে দৌড়ঝাপ করছেন এই তিন উপজেলার মানুষ,,, এই প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় শ্যামনগর উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন ঘাবড়ার রজব আলী ৩০ আনসার আলী ৩২ শওকত হোসেন ৪৩ মনসুর আলী ৫৫ রেজাউল করিম ৬৫ মোকসেদ মোল্লা ৬৩ আবু বক্কর ৫৫ সাবের হোসেন ২৩ মান্নান গাজী ৬৫ আলাউদ্দিন ৮২ সালে খাতুন ৪৩ বাঘ বিধবা মনারা খাতুন ৩৬ আগলীমা বেগম ৩৫ মমতাজ বেগম ৬৫ শামসুর রহমান ৬৫,,, কথা হয় পদাপুকুর ইউনিয়নের শাহাজান ৭৫ মানিক গাজী ৭৩ আবুল হাসান ৬৫ রমজান মোল্লা ৭৩ বাকের আলী ৬৫ শওকত হোসেন ৩৭ আইয়ুব আলী ৫৩ ফারহাদ হোসেন ৬৫ দাউদ গাজী ৭৭ মোকসেদ মোল্লা ৫৩ হাসান আলী ৬৫,,, বুড়ি গোয়ালের ইউনিয়নের কার্তিক মন্ডল ৮২ গণেশ মণ্ডল ৫৩ হরিপদ মন্ডল ৬৫ গৌরপদ মন্ডল ৬৭ রেখা রানী ৭৪ মনিকা রানী ৬৫ অমেলা রানী ৭৩ জাহানারা খাতুন ৬৫ সন্নতালি ৬৩ আমিনুর রহমান পঞ্চান্ন আলমগীর হোসেন ৬৩ । মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ৫০ আমেনা খাতুন ৫৩ রোকেয়া বিবি ৩৫ খালেক গাজী ৫৩ মফিজুর রহমান ৩৫ সিরাজুল ইসলাম ৫৫ আক্তার হোসেন ৬৩ বাহাদুর মোল্লা ৮৫ লিয়াকাত হোসেন ৫৩ জামাল সরদার ৬৫ এরা সবাই একই কথা বলে ঘূর্ণিঝড় যতো লোকালয়ের দিকে এগিয়ে আসছে তাদের মনে মারাত্মক আতঙ্ক বিরাজ করছে সন্তানাদি নিয়ে সাইক্লোন সেন্টারে যাবে কিন্তু বাড়ির হাঁস মুরগি গবাদি পশু মাছ কাঁকড়ার ঘের কি করবে,।, বঙ্গোপসাগরে চোখ রাঙাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় শক্তি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঘোষণা অনুযায়ী ৩০ মে নাগাদ উপকূলে আঘাত হানতে পারে সাগরে সৃষ্ট হতে যাওয়া এই ঘূর্ণিঝড় শক্তি। প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ¡াসে উপকূলের দুর্বল ভেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। ঘূর্ণিঝড় শক্তির আঘাতের শঙ্কায় তাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সাতক্ষীরার উপকূলীয় শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার নদী ভাঙন এলাকায় বসবাসরত সাধারণ মানুষ।ইতিমধ্যে বাংলাদেশ আহবাওবা অধিদপ্তরের এক পূর্বাভাসে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ নম্বর স্থানীয় সর্তক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পূর্বাভাসে আরো বলা হয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি হচ্ছে। এর প্রভাবে রোববার ভোর রাত থেকে সাতক্ষীরায় থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ঘন ঘন এই বিধ্বংসী প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হচ্ছে বাংলাদেশ। সাধারণতঃ এপ্রিল-মে এবং অক্টোবর-নভেম্বর হলো ঘূর্ণিঝড় প্রবন মাস। সে হিসাবে এখন চলছে ঘূর্ণিঝড় মৌসুম। এই মে মাসে সুন্দরবন উপকূলে আছড়ে পড়েছিল আইলা, ফণী, বুলবুল, ইয়াস, আম্পান, রোমেল এর মতো প্রলয়ঙ্করী সব ঘূর্ণিঝড়। এর মধ্যে সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকায় ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় সিডর, ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলা, ২০১৩ সালের ১৬ মে মহাসেন, ২০১৫ সালের ৩০ জুলাই কোমেন, ২০১৬ সালের ২১ মে রোয়ানু, ২০১৭ সালের ৩০ মে মোরা, ২০১৯ সালের ৩ মে ফণী, ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর বুলবুল, ২০২০ সালের ২০ মে আম্পান, ২০২১ সালে ২৬ মে ইয়াস, ২০২২ সালের ১২ মে অশনি এবং ২০২৩ সালের ১৪ মে মোখা আঘাত হানে। এসব ঘূর্নিঝড়ে সৃষ্ট জলোচ্ছ¡াসে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ভেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় উপকূলের বিস্তীর্ণ জনপদ। তাই উপকূলীয় এলাকার সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় শক্তির চোখ রাঙানীতে উপকূলের ঝুঁকিপূর্ণ ভেড়িবাঁধ নিয়ে উৎকণ্ঠা বাড়ছে সাতক্ষীরার উপকূলের মানুষের মনে। সবচেয়ে শঙ্কায় রয়েছে দুর্বল বাঁধ নিয়ে। কেননা প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ¡াসে দুর্বল বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলবাসীর ভরসারস্থল ভেড়িবাঁধ। সেই ভেড়িবাঁধ দূর্বল থাকায় উপকূলবাসীর মনে শঙ্কা বাড়ছে।
উপকূলের বাসিন্দা আশাশুনির বিছট গ্রামের আব্দুল হাকিম মোড়ল জানান, পাউবো বিভাগ-২ এর আওতাধীন ৭/২ পোল্ডারের বিছট সরকারি প্রাইমারী স্কুল থেকে বিছট খেয়াঘাট পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার ভেড়িবাঁধ খুই ঝুঁকিপূর্ণ। গত ৩১ মার্চ ঈদের দিন সকালে স্কুলের কিছু দূরে ভেড়িবাঁধ ভেঙে আনুলিয়া ইউনিয়নের ৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়। বর্তমানে বিছট গাজী বাড়ি, সরদার বাড়ি ও মোড়ল বাড়ির সামনের ভেড়িবাঁধ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণ এই তিনটি পয়েন্টে মেরামতের কাজ শুরু হলেও দীর্ঘদিন ধরে তা বন্ধ রয়েছে। ফলে এই তিনটি পয়েন্টে বাঁধের অবস্থা খুবই নাজুক।
তিনি বলেন, খরস্রোতা খোলপেটুয়া নদীতে জোয়ারের সাথে একটু জোরে বাতাস হলেই এই ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ ভেঙে যাবে। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরকে জানানোর পরও তারা এ বিষয়ে কোন গুরুত্ব দিচ্ছে না। তিনি দ্রুত এই বাঁধ সংস্কারের কাজ শেষ করার দাবি জানান।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দু’টি বিভাগের আওতাধীন জেলায় ৬৭৮ কিলোমিটার ভেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ২১টি পয়েন্টের ৩৩ কিলোমিটার ভেড়িবাঁধ বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে পাউবো বিভাগ-১-এর অধীনে ৬টি পয়েন্টে ৩ কিলোমিটার ও বিভাগ-২ এর অধীনে ১৫টি পয়েন্টে ৩০ কিলোমিটার ভেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। ঘূর্ণিঝড় যদি সাতক্ষীরা উপকূলে আঘাত নাও হানে, তবুও এর প্রভাবে নদ-নদীতে পানির চাপ বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। আর পানি বাড়লে ভেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার ভয় আছে।
সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সালাউদ্দিন জানান, আমার বিভাগের আওতাধীন ৩৮০ কিলোমিটার ভেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ৬টি পয়েন্টে ৩ কিলোমিটার ভেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণ এসব ভেড়িবাঁধের মেরামতের কাজ চলমান রয়েছে। যে কোন আপদকালীন পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের বিশেষ প্রস্তুতি রয়েছে। অমাদের ৭৫টি জিও টিউবের পাশপাশি ৭৫ হাজার জিও ব্যাগ রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টে গুলো আমাদের স্পেশাল কেয়ারে আছে। এ ছাড়া আমরা জিও ফিল্টার ও জি পলেস্টার মজুদ করে রেখেছি। যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে তৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।
সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আব্দুর রহমান তাজকিয়া বলেন, আমার বিভাগের আওতাধীন প্রায় সাতক্ষীরা জেলায় ২৯৮ কিলোমিটার ভেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ৪,৬, ৭/১, ৭/২ ও ৮ এই ৫টি পোল্ডারের ১৫টি পয়েন্টে ৩০ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণ এই ১৫টি পয়েন্টে ঠিকাদার নিয়োগ করা রয়েছে। এসব স্থানে ভেড়িবাঁধের মেরামতের কাজ চলমান আছে। জরুরি কাজে ব্যবহারের জন্য আমাদের বিভাগে ২০ হাজার জিও ব্যাগের পাশপাশি ১৫টি জিও রোল মজুদ রয়েছে। এ ছাড়া আগাম প্রস্তুতি হসেবে ঝুঁকিপূর্ণ ভেড়িবাঁধ এলাকায় পর্যাপ্ত সংখ্যাক জিও ফিল্টার ও জি পলেস্টার মজুদ রাখা হয়েছে। কোন স্থানে সমস্যা হলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারবো। ঘূর্ণিঝড়ের আগাম বার্তা পাওয়ার পর থেকে ঝুঁকিপূর্ণ ভেড়িবাঁধের ওপর নজর রাখা হবে বলে জানান তিনি।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের উপকূলীয় জনপদগুলো প্রতিবছরই প্রকৃতির এক কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যায়। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে এই ঘূর্ণিঝড় এখন আগের তুলনায় আরও অপ্রত্যাশিত, তীব্র ও ক্ষতিকর হয়ে উঠেছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া প্রতিটি নিম্নচাপ যেন একটি সম্ভাব্য দুর্যোগের আশঙ্কা নিয়ে আসে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাগরে ঝড়, নিম্নচাপ, লঘুচাপের মতো দুর্যোগ এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। কাজেই ঘূর্ণিঝড় নামের এক ভয়াল বাস্তবতা তাদের জন্য নতুন কিছু নয়। এদিকে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ জানান সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় শক্তি ধুয়ে আসছে সে কারণে প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসেবে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির মিটিং হয়েছে সেখানে দুর্যোগ মোকাবেলার সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে এবং মন্ত্রণালয় শুকনা খাবার সহ প্রয়োজনীয় বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে এছাড়াও প্রতিটি উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের সভাপতিত্বে উপজেলা দুর্যোগ কমিটির মিটিং হয়েছে সেখানেও স্থানীয়ভাবে দুর্যোগ মোকাবেলা করার জন্য সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।