1. news@sangjogprotidin.online : ADMIN : ADMIN ADMIN
  2. info@www.sangjogprotidin.online : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন :
শনিবার, ০৭ জুন ২০২৫, ০২:৪৫ অপরাহ্ন
বিজ্ঞপ্তি :
জরুরী সাংবাদিক নিয়োগ চলছে আপনার কাছে একটি দুর্দান্ত সুযোগ! "সংযোগ প্রতিদিন" সংবাদপত্রে জরুরী ভিত্তিতে সাংবাদিক নিয়োগ চলছে।

ঘূর্ণিঝড় আসলে মনে হয় সুন্দরবনের কথা, থেমে গেলে ভুলে যায়

  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৭ মে, ২০২৫

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : ঘূর্ণিঝড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসলে উপকূলের মানুষ মনে করে সামনে সুন্দরবন আছে বেঁচে যাব ক্ষতি হবে না ঠিক তাই হয় কিন্তু ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাস থেমে গেলে মানুষের আর সুন্দরবনের কথা মনে থাকে না। আবারও অপরাধমূলক কাজের সাথে জড়িয়ে পড়ে উপকূলের মানুষ এটাকে ভুলে যেয়ে সুন্দরবন নিয়ে চিরস্থায়ী চিন্তা উপকূলের মানুষের প্রত্যেককে হৃদয়ে গেঁথে রাখতে হবে,,, তা না হলে আমাদের জাতীয় সম্পদ হারিয়ে যাবে হারাবো আমরা জান মাল,,, ‌বাংলাদেশে প্রকৃতিক দুর্যোগ নতুন কোনো বিষয় নয়। প্রতি বছরই কোনো না কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে দেশ। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, নদীভাঙন এদেশের অতি পরিচিত সব প্রাকৃতিক দুর্যোগ। দেশব্যাপী এসব দুর্যোগের আতঙ্ক বিরাজ করলেও প্রতিবারের প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ। একটির আঘাত কাটিয়ে ওঠার আগেই নতুন অন্য একটি দুর্যোগের আবির্ভাবে উপকূলবাসীর সমস্ত স্বপ্ন তছনছ হয়ে যায়। বিগত দিনের ঘটে যাওয়া সিডর, আইলা, মহাসেন, বুলবুল, আম্পান, ইয়াস তারই স্বাক্ষর বহন করে চলেছে। এসব দুর্যোগের ক্ষত কাটিয়ে ওঠার পূর্বেই সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’ আঘাত হেনেছে উপকূলে। রিমালের ক্ষয়ক্ষতির পুরোপুরি পরিসংখ্যান এখনো নিরূপণ করা হয়নি। তবে যে শক্তি নিয়ে ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হেনেছে এবং উপকূল অতিক্রম করতে দীর্ঘ সময় নিয়েছে। তাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হওয়াই স্বাভাবিক। প্রলয়ঙ্ককরী এসব দুর্যোগের প্রতিটিতে প্রাণহানির পাশাপাশি বিপুল অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়, যা পুষিয়ে নিতে সময় লাগে বছরের পর বছর। ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা’র ক্ষয়ক্ষতি এবং ক্ষত এখনো দৃশ্যমান। তার উপর নতুন করে রিমাল সেই ক্ষতকে অনেক বেশি উস্কে দিল। মে-জুন মাস এলেই উপকূলবাসীর সামনে নেমে আসে অতি ভয়ঙ্কর সব দুর্যোগ। স্বভাবত উপকূলীয় জনপদ বারংবার অবহেলিত। অবহেলিত হওয়ায় তাদের জানমালের রক্ষায় সুদূরপ্রসারী ও সুচিন্তিত তেমন পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। ফলে প্রতিবছর উপকূলীয় জনপদে আতঙ্ক বিরাজ করে।সিডর থেকে ইয়াস পর্যন্ত সব ঘূর্ণিঝড়েই সুন্দর বনের প্রাণী ও উদ্ভিদের বিস্তর ক্ষতি হলেও রিমালের তা-ব ছিল সব থেকে দীর্ঘস্থায়ী। এর অবস্থান এবং আক্রমণের প্রভাব ছিল ৩৮ ঘণ্টারও অধিক সময় ধরে। এই সময়ের মধ্যে ছিল তিনবার ছিল পূর্ণ জোয়ার। প্রতিবার এই পূর্ণ জোয়ারের সাথে ঝড়ের তীব্রতা মিলিয়ে এটি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে অধিক মাত্রার জোয়ার এবং জলোচ্ছ্বাসে পরিণত হয়। সে জলোচ্ছ্বাসে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে উপকূলবাসীর সহায় সম্বল, বসত ভিটা, চিংড়ি ঘের, ফসলের ক্ষেতসহ গবাদি পশু, হাঁস-মুরগিসহ সর্বস্ব। ভৌগোলিক অবস্থান এবং বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাংলাদেশের জন্য অধিকতর হুমকি। তবে আশার বিষয় হল, বাংলাদেশের অবহেলিত উপকূলীয় জনপদকে সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করে আসছে সুন্দরবন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আঘাত হানা ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় এবং জলোচ্ছ্বাস থেকে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলকে রক্ষা করতে সুন্দরবনের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
প্রকৃতির আশীর্বাদ এই সুন্দরবন পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন বা লবণাক্ত বনাঞ্চল। সুন্দরবনের মোট আয়তন প্রায় ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার, যা যৌথভাবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অবস্থিত। সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের আয়তন ৬,৫১৭ বর্গ কিলোমিটার, যা সমগ্র আয়তনের ৬৬ শতাংশ। এই বৃহৎ অংশ আমাদের দেশের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। কেননা, প্রতিবার ঘূর্ণিঝড় এবং জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে এই বন উপকূলবাসীর জন্য ঢাল হয়ে ওঠে। দুর্যোগের সবটুকু ক্ষতি নিজে সয়ে মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। সুন্দরবন যদি আগলে না রাখত তাহলে দেশের উপকূল ধ্বংস হয়ে যেত। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে কিছুটা প্রশমিত করে সুন্দরবনের সবুজ প্রকৃতি। এক কথায় সুন্দরবন উপকূল তথা পুরো দেশের রক্ষাকবচ। অন্যদিকে সুন্দরবনসহ উপকূলীয় জনপদ আমাদের খাদ্যনিরাপত্তা ও প্রাকৃতিক সম্পদের আধার। দেশের একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠী উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাস করে। জাতীয় অর্থনীতিতে যাদের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। এসব জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা সুন্দরবন কেন্দ্রিক। সুন্দরবন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ঢাল হয়ে উপকূলীয় জনপদকে রক্ষা করার পাশাপাশি তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিন্তু বিশ্ব উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ধারায় সাম্প্রতিক দশকগুলোতে সুন্দরবনসহ উপকূলীয় জনপদের মানুষ ও প্রাণপ্রকৃতি বার বার মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ২০০৭ ও ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডর ও আইলার তান্ডবে শত শত কিলোমিটার উপকূলীয় বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে কৃষিজমি, মৎস্যখামার ও জনবসতিপূর্ণ এলাকায় সামুদ্রিক লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়েছিল। কিন্তু সুন্দরবনের কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকাংশে কমে আসে। অতীতের মতো এবারো উপকূলীয় জনপদের প্রাকৃতিক সুরক্ষাব্যুহ সুন্দরবন রিমালের তান্ডব নিজের বুক পেতে প্রতিহত করার চেষ্টা করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সাক্ষী হয়ে থাকা আইলা, সিডর, আম্পান, ইয়াস, রিমালের ক্ষতবিক্ষত জায়গাগুলোয় দাঁড়িয়ে কিছুটা অনুধাবন করা যায় সুন্দরবন ছাড়া আমাদের ভবিষ্যৎ কতটা ভয়ানক হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় আইলা ও সিডর পরবর্তী সময়ে সুন্দরবনের যে ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছিল সেটি কাটিয়ে উঠতে বহু বছর লাগবে বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছিলেন। সেই ক্ষতি পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠার আগেই সুন্দরবনের উপর বার বার দুর্যোগ হানা দিচ্ছে। ল-ভ- হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। একদিকে প্রকৃতিক দুর্যোগ অন্যদিকে মানুষ্য সৃষ্ট কারণে সুন্দরবন তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। প্রকৃতি আপন খেয়ালে সুন্দরবনের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সচেষ্ট হলেও আমরা নাগরিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হওয়ায় উপকূলীয় জনপদের মানুষ বার বার ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, যে সুন্দরবন আমাদের বেঁচে থাকতে সাহায্য করছে কিন্তু তার প্রতি আমরা সামান্যতম হলেও দায়িত্ববান নই। একেকটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর প্রথমেই উপকূলীয় বেড়িবাঁধ মেরামত, উন্নতকরণ, উপকূলীয় সবুজবেষ্টনী এবং সংরক্ষিত বনভূমি রক্ষা ও উন্নয়নে যে ধরনের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন ছিল, সরকারিভাবে তা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন হচ্ছে না। ফলে এর দায়ভার বহন করতে হচ্ছে উপকূলীয় জনপদের প্রাণপ্রকৃতি ও লাখ লাখ মানুষকে। জলবায়ু পরিবর্তন, ক্ষতিকর কর্মকা-, বন উজাড়, আমাদের অসচেতনতা, লোভী মানসিকতা ও বনবিভাগের দুর্নীতির কারণে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় উপকূলীয় বনাঞ্চল আমাদের সুন্দরবন আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল এর জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত বৈশ্বিক দুর্নীতি শীর্ষক প্রতিবেদনের বলা হয়েছে, ‘সুন্দরবন থেকে বছরে ১৩৫ কোটি টাকার কাঠ পাচার হয়। কিছু ব্যবসায়ী, অসাধু বন কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রশাসনের যোগসাজশে নির্দ্বিধায় সুন্দরবন থেকে অবৈধভাবে গাছ কাটা হচ্ছে। ফলে প্রতিবছরই একটু একটু করে কমে যাচ্ছে সুন্দরবনের গাছের পরিমাণ। হুমকির মুখে পড়ছে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ প্রভাব-সংক্রান্ত আন্তঃসরকারি প্যানেলে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বাংলাদেশের গোটা দক্ষিণাঞ্চল মানুষের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। ইতোমধ্যে যার প্রভাব লক্ষণীয়। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরার উপকূল এখন বসবাসের উপযুক্ত নয়। জোয়ার ভাটার পানির সঙ্গে লড়াই করতে করতে এসব এলাকার জনগণ আজ ক্লান্ত। নিজেদের বসতভিটার সঙ্গে গৃহপালিত পশুর থাকা-খাওয়ায় সংকট উপলব্ধি করার মতো। এদিকে লবণাক্ততার আগ্রাসনে জমির স্বাভাবিক উর্বরতা বিপন্ন হয়ে ফসলি জমিতে সম্ভব হচ্ছে না ফসল ফলানোর। অন্যদিকে নিজেদের দু’মুঠো আহার সংকটের সঙ্গে দেখা দিয়েছে মারাত্মক সুপেয় পানির অভাব। কিছু কিছু এলাকাভিত্তিক সুপেয় পানির সংকট সামান্য মিটলেও তার পরিমাণ খুবই কম। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় অগভীর নলকূপ থেকে সুপেয় পানি পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া এসব নলকূপের পানিতে অতিমাত্রার আর্সেনিক এবং আয়রনের উপস্থিতির কারণে তা পানের অনুপযোগী।
যেখানে স্বাভাবিক সময়ে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের দুর্দশার সীমা থাকে না, সেখানে দুর্যোগকালীন কিংবা দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে এই দুর্দশার মাত্রা অবর্ণনীয়। বানের জলে সর্বস্ব জলাঞ্জলি দিয়ে বাপ-দাদার ভিটা ছেড়ে উপকূলবাসীর পাড়ি দিতে হয় অজানার উদ্দেশ্যে। বারংবার সংঘটিত প্রাকৃতিক দুর্যোগে ইতোমধ্যে এসব অঞ্চল থেকে উদ্বাস্তু হয়েছে হাজার হাজার পরিবার। কেউ জেলা শহরে উঠছে, কেউ রাজধানীতে পাড়ি জমিয়েছে, কেউ উদ্বাস্তু কিংবা শহরের ভাসমান জনগোষ্ঠীর খাতায় নাম লিখেয়েছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে গ্রামাঞ্চলে খেটে খাওয়া মানুষগুলো শহরে উঠে কোনরকমে টিকে থাকতে নতুন করে সংগ্রামে লিপ্ত হচ্ছে। দারিদ্রে পড়ে অনেকেই ফুটপাতে খোলা আকাশের নিচে দিনাতিপাত করে অনাহারে দিন কাটাচ্ছে।
দুর্যোগকালীন কোটি কোটি মানুষ বিদ্যুৎ ও টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্কের বাইরে চলে যায়। আপদকালীন মানুষের আবহাওয়ার কোনো পূর্বাভাস পাওয়ার কোনো নির্ভরযোগ্য মাধ্যম থাকে না। পুরো দেশ থেকে উপকূলীয় জনপদ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ঘরে ঘরে চলে স্বজন হারানোর শোকের মাতম, সহায়সম্বল হারানো আর্তজনের আহাজারিতে উপকূলীয় জনপদের আকাশ-বাতাস স্তব্ধ হয়ে যায়। বরাবরের মতো ঘূর্ণিঝড় রিমাল আঘাত হানার পর ব্যাপক ধ্বংসাত্মক ক্ষয়ক্ষতিতে শতাধিক উপজেলার মানুষের মধ্যে মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। সংবাদপত্রের প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুসারে শুধুমাত্র খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় ১ লাখ ৩২ হাজার পরিবার বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়ে গৃহহীন হয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় হাজার হাজার গৃহপালিত গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগি মারা গেছে। পূর্ব সতর্কতার কারণে মানুষের প্রাণহানির সংখ্যা কিছুটা কমিয়ে আনা সম্ভব হলেও অন্তত ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। সুন্দরবনের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা এখনই সম্ভব নয়। কারণ জীববৈচিত্র্য, বন্যপ্রাণী ও গাছপালার যে ক্ষতি হয় তা নিরূপণ করা সময়সাপেক্ষ। তবে রিমালের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে পুরো সুন্দরবন ডুবে ছিল ৩৮ ঘণ্টারও বেশি সময়। এতো দীর্ঘ সময় জোয়ারের পানি থাকায় বন্য প্রাণীদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
অতীতের কোনো ঘূর্ণিঝড় পুরো সুন্দরবনকে একসঙ্গে ডুবিয়ে দেয়নি এবং এত দীর্ঘ সময় ধরে এত উঁচু জলোচ্ছ্বাসের প্রভাবে বন নিমজ্জিত থাকেনি। তাই এবার প্রাণি মারা যাওয়ার সংখ্যা অনেক বেশি। যদিও সুন্দরবনের অধিকাংশ প্রাণিই প্রতিনিয়ত জোয়ার-ভাটার সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে পারে। কিন্তু রিমালের প্রভাব এবং আক্রমণ, যা ছিল অন্য সব ঘূর্ণিঝড়ের তুলনায় প্রায় চার-পাঁচ গুণ বেশি। এজন্য সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় অধিক গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। কীভাবে এসব বন্যপ্রাণী বিরূপ পরিবেশে টিকে থাকতে পারে তার সঠিক উপায় বের করতে পারে একমাত্র গবেষকরাই। গবেষকদের সরেজমিনে পর্যবেক্ষণপূর্বক সঠিক ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করার প্রয়োজন রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে যথেষ্ট সহায়তা প্রদান করাবাংলাদেশের উপকূলের প্রকৃতিক ঢাল সুন্দর বন। মায়ের মত নিজের বুক পেতে দিয়ে ভয়াবহ দুর্যোগ থেকে বার বার এ দেশের উপকূলবাসীকে রক্ষা করছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই ম্যানগ্রোভ বন। অতীতে সিডর, আইলা, নার্গিস, ফণি, বুলবুল, আম্পান, মখার মতো বড় বড় ঘূর্ণিঝড়ের সাথে বুক উঁচিয়ে লড়াই করে উপক’লের মানুষদের বাঁচিয়েছে।এবারও প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাত বুক পেতে নিয়ে উপকূলকে রক্ষা করলো প্রাকৃতিক ঢাল সুন্দরবন। ঝড়ের সামনে লড়াই করে বাতাসের গতিবেগ অনেকটাই কমিয়ে দিয়ে উপকূলের মানুষদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করেছে এই ম্যানগ্রোভ বন। বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা সুন্দরবন পৃথিবীর অনন্য সম্পদ। মাকড়সার জালের মতো ছোট-বড় অসংখ্য নদ-নদীতে বেষ্টিত সুন্দরবন কতবার যে ঘূর্ণিঝড়সহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করেছে, তার কোনো পরিসংখ্যান নেই। তারই ধারাবাহিকতায় শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’ থেকে রক্ষায় এবারও বুক পেতে দিল সুন্দরবন। বাংলাদেশে এই ঝড় প্রবেশের মুখেই সুন্দরবনের অবস্থান। এর কারণে ঝড় প্রবেশ করতেই বনে বাধার সম্মুখীন হয়েছে। যেন সুন্দরবনের জন্মই প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করার জন্য।সুন্দরবন দেশের উপকূলকে মায়ের মতো আগলে রেখেছে সবসময়। সুন্দরী-গেওয়াসহ নানা বৃক্ষের মজবুত বেষ্টনী আর অসংখ্য নদীনালা বছরের পর বছর ধরে প্রাণী ও সম্পদ রক্ষা করে আসছে। নিজে ক্ষত-বিক্ষত হলেও উপকূলের তেমন ক্ষতি হতে দেয়নি এই বন।সুন্দরবন একাডেমির পরিচালক ফারুক আহমেদ বলেন, সুন্দরবন আমাদের রক্ষাকবচ। সুন্দরবনের জন্মই হয়েছে আমাদের রক্ষা করার জন্য। সুন্দরবন না থাকলে উপকূলে ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে বড় ধরনের তাণ্ডব হতে পারতো। বরাবরের মতো এবারও সুন্দরবন ঝড়ের গতি কমিয়ে দিয়েছে। অথচ এ সুন্দরবন আমরা প্রতিনিয়ত ধ্বংস করে চলছি। বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন সুরক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।খুলনা অঞ্চলের প্রধান বন সংরক্ষক (সিএফ) ইমরান আহমেদ এই প্রতিবেদককে বলেন, সুন্দরবনের অনেক এলাকা ৮-১০ ফুট জোয়ারের পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এতে সুন্দরবনের মধ্যে যে মিষ্টি পানের পুকুর ছিল তা ডুবে গেছে। পুকুরের পাড় ভেঙে গেছে। কটকাতে বড় কাঠে জেটি ছিল তা জলোচ্ছ্বাসের সময় ভেঙে গেছে। সুন্দরবনের কারণে এবারও ঝড়ের বাতাসের গতি কমেছে। তবে সিডরের মতো এবার ততো গাছের ক্ষতি হয়নি। কিছু ক্ষতি হয়েছে। ঝড় কমে গেলে বনে গিয়ে কতটা ক্ষতি হয়েছে তা বোঝা যাবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

© সংযোগ প্রতিদিন
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট