দাকোপ (খুলনা) প্রতিনিধি : খুলনার দাকোপে বিভিন্ন নদ-নদীতে আহরণ করা হচ্ছে গোলদা চিংড়ির রেণু ও বাগদার পোনা। বিভিন্ন বয়সের লোক নিষিদ্ধ নেটজাল দিয়ে এ পোনা আহরণ করছেন। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে নেটজাল জব্দ করলেও থেমে নেই এ পোনা আহরণ। ফলে চিংড়ির পোনার সঙে দেশীয় প্রজাতির অন্যান্য মাছের পোনাও প্রতিনিয়ত ধ্বংস হচ্ছে।
সরেজমিন এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, প্রতি অমাবস্যা ও পূর্ণিমার গোনে উপকূলীয় উপজেলার কাজিবাছা, পশুর, চুনকুড়ি, ঢাকি, কালাবগী ও শিপসাসহ বিভিন্ন নদীতে গোলদা ও বাগদা চিংড়ির পোনা আহরণ করা হচ্ছে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নিষিদ্ধ নেটজাল দিয়ে শিশু নারীসহ বয়ঃবৃদ্ধ লোক প্রকাশ্যে আহরণ করছেন এ পোনা। এতে একটি রেণু ও বাগদার পোনা আহরণ করতে গিয়ে প্রায় শতাধিক প্রজাতির মাছের পোনা নিধন হচ্ছে। আর প্রতিদিন এভাবে লাখ লাখ পোনা নিধন হওয়ায় দেশীয় প্রজাতির অনেক মাছ বিলুপ্তির পথে। স্থানীয় মৎস্য বিশেষজ্ঞদের এক সমীক্ষায় জানা গেছে, প্রতিটি চিংড়ির রেণু পোনার সঙে অন্য প্রজাতির অন্তত ১২০টি পোনা নিধন হয়। তাদের মতে নেটজাল টেনে তীরে উঠিয়ে বেছে বেছে চিংড়ির রেণু পোনা রেখে অন্য পোনা ফেলে দেয় তীরে যা পরে কাকের খাবারে পরিনত হয়। যুগ যুগ ধরে এমন চিত্র প্রদর্শিত হওয়ায় দেশীয় প্রজাতির অনেক মাছ নেই বললেই চলে। আহরণ করা এসব পোনা আবার প্রকাশ্যে বিভিন্ন উপজেলার আড়তে বেচা কেনাও হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কালাবগি ও বানিশান্তা এলাকার একাধিক রেণু পোনা আহরণকারীর সঙে আলাপকালে তারা জানান, তারা অনেকেই জানেন যে নিষিদ্ধ নেটজাল দিয়ে রেণু পোনা আহরণ করা সম্পূর্ণ বে-আইনি। তারপরও তাদের অন্য কোন আয় না থাকায় শিবসা নদীতে নেটজাল ধরে বা নদীর তীর দিয়ে টেনে যে পোনা পায় তা বিক্রি করে সংসার চালান। প্রতি হাজার রেণু পোনা ২২০০ থেকে ২৩০০ টাকা এবং বাগদার পোনা প্রতি হাজার ৭০০ থেকে ৮০০ দরে স্থানীয় বিভিন্ন ফড়েদের কাছে তারা বিক্রি করে থাকেন।
এব্যাপারে উপজেলা সিনিয়ার মৎস্য কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার দাম বলেন, নদীতে নেটজাল দিয়ে কোন প্রকার মাছ ধরা সম্পূর্ণ বেআইনি। কিন্তু বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে নেটজাল ধরায় আমার অল্প জনবল দিয়ে কোন প্রকার দমন করা যাচ্ছে না। আজকে যেখানে অভিযান পরিচালনা করে জাল পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে পরদিন সেখানে আবার নেটজালে সয়লাব হচ্ছে। তা ছাড়া এসব জেলেরা অনেক গরীব অসহায়। তারপরও অভিযান চালিয়ে এপর্যন্ত ২০ হাজার ১৫০ মিটার নেটজাল জব্দ করে বিনষ্ট করা হয়েছে। এ ছাড়া কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশও পৃথক পৃথক অভিযান পরিচালনা করেছেন। কিন্তু পর্যাপ্ত জনবল সংকটের কারণে অনেক অসুবিধা হচ্ছে। নেটজালের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যহত থাকবে।