সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের জন্য বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে গতকাল শুক্রবার থেকে। তবে এবারের ঈদযাত্রায় লম্বা ছুটি হওয়ায় বিক্রি বেশি হতে দেখা যায় ৪ ও ৫ জুনের টিকিট। বাসের অগ্রিম টিকিট কাউন্টার ও অনলাইন দুইভাবেই পাওয়া যাচ্ছে। তবে নন এসি বাসে বিআরটিএর নির্ধারিত ভাড়া রাখতে দেখা গেলেও এসি বাসের ভাড়া বাড়তি রাখতে দেখা যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) নন এসি বাসের ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু এসি বাসের ভাড়া এখনো নির্ধারণ করে দিতে পারেনি বিআরটিএ। এ সুযোগে ঈদ এলে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হয় যাত্রীদের কাছ থেকে। রুট ভেদে ১ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত বেশি নেওয়া হচ্ছে।
যদিও গত (১২ মে) রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবনে ঈদ উপলক্ষে আয়োজিত অংশীজন সভায়ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে সড়ক উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে জানানো হয়, গত ঈদুল ফিতরে নন এসি বাসের ক্ষেত্রে ১০-৩০ শতাংশ অতিরিক্ত ভাড়া নিয়েছে পরিবহনগুলো। ভাড়ার চার্টের সঙ্গে তুলনা করে তা দেখা হয়েছে। সেই সঙ্গে এসি বাসের ক্ষেত্রে কোনো নীতিমালা না থাকায় এসি বাসে ৫০ থেকে ১০০ শতাংশ ভাড়া বেশি নিতে দেখা যায়।
জানা যায়, ঢাকা থেকে গাইবান্ধা যাওয়া-আসা করা আল হামরা নামের একটি বাস কোম্পানি তাদের এসি বাসের ভাড়া যেগুলো ১ হাজার ছিল সেটি ঈদযাত্রায় অগ্রিম টিকিটের জন্য ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা বৃদ্ধি করেছে। একই অবস্থা উত্তরবঙ্গের বেশিরভাগ রুটে চলা এসি পরিবহনগুলোর। তবে এত কিছুর পর গত ১২ মে ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ২০০ টাকা ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব দেওয়া হয় বাস মালিকদের পক্ষ থেকে। এ নিয়ে সেই মিটিংয়ে ব্যাপক বাগবিতণ্ডা হয় বাস মালিক ও যাত্রী কল্যাণ সমিতির নেতাদের।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা মো. রেদওয়ান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এসি বাসের ভাড়া নির্ধারণ না করে দেওয়ায় আমাদের থেকে ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করেন বাস মালিকরা। ঢাকা থেকে গাইবান্ধা রুটে চলাচলকারী বেশিরভাগ বাসে আগে ১ হাজার টাকায় এসি বাসে যাওয়া গেলেও সেটির ভাড়া ঈদযাত্রায় ২ হাজারের বেশি চাচ্ছে কাউন্টারগুলো। তাহলে বছরের পর বছর বিআরটিএ কেন এসি বাসের ভাড়া নির্ধারণ করে দিতে পারল না?
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঈদ এলেই যাত্রীদের জিম্মি করে বাড়তি ভাড়া আদায় করার বিষয়টি বেশ পুরনো। সড়কে ১৫ বছরের বেশি সময় আওয়ামী লীগের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট নৈরাজ্য করেছে। এখন অন্তর্বর্তী সরকার দেশ চালাচ্ছে। কিন্তু গত ঈদে স্বস্তির ঈদযাত্রা হলেও বেশিরভাগ রুটে বাড়তি ভাড়া আদায় করতে দেখা গেছে। বিশেষ করে এসি বাসে ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করা যেন বাস মালিকদের প্রধান টার্গেট হয় ঈদযাত্রায়।
তিনি আরও বলেন, সড়কে শৃঙ্খলার জন্য অনেক পদক্ষেপ, কিন্তু প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে বিআরটিএর মতো প্রতিষ্ঠান এখনো এসি বাসের ভাড়া নির্ধারণ করতে পারেনি। ভাড়া নির্ধারণ না করে দেওয়ার সুযোগ নিচ্ছেন বাস মালিকরা। তাই সরকারের কাছে আমাদের দাবি থাকবে দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করা। যেন ঈদযাত্রায় বাড়তি টাকা দিয়ে যেতে না হয় যাত্রীদের।
হানিফ পরিবহনের জেনারেল ম্যানেজার মোশারফ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, নন এসি বাসে আমরা বিআরটিএর নির্ধারিত ভাড়া যেটি, সেই ভাড়া নিই। তবে এসি বাসের ভাড়া বিআরটিএ থেকে নির্ধারিত করে দেওয়া হয়নি। তাছাড়া আমাদের এসি বাসগুলো সবচেয়ে উন্নতমানের। বিভিন্ন ক্যাটাগরির এসি বাস চলে। এখন বিআরটিএ যদি এসি বাসের ভাড়া ক্যাটাগরি অনুযায়ী ঠিক করে দেয় তাহলে আমরা সেই ভাড়াই রাখব।
বাংলাদেশ বাস মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আলমগীর কবির বলেন, আমাদের সমিতি থেকে বাসের বাড়তি ভাড়া না আদায় করার জন্য বলা হয়েছে বাস মালিকদের। তাছাড়া ঈদযাত্রায় টার্মিনালগুলোতে আমাদের মনিটরিং টিম থাকবে।
এদিকে সম্প্রতি এসি বাসের ভাড়া নির্ধারণের বিষয়ে এই প্রতিবেদককে বিআরটিএ চেয়ারম্যান মো. ইয়াসিন বলেন, আমরা নন এসি বাসের ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছি। কিন্তু এসি বাসের ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। বিভিন্ন রকমের এসি বাস সড়কে চলাচল করে। বাস মালিকদের নিয়ে আমরা এসি বাসের ভাড়া সমন্বয় করব। তাছাড়া ঈদের আগে যে ভাড়া নেয় সেটি তারা নিতে পারে। বেশি নেওয়ার তো কোনো মানে হয় না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। এদিকে সাতক্ষীরা থেকে ঢাকা গ্রামে বাসে ৬০০ টাকার ভাড়া, ১২০০ টাকা পর্যন্ত অগ্রিম টিকিট বুকিং দিচ্ছে কাউন্টার গুলো এর মধ্যে রয়েছে মাসটার পরিবহন সাতক্ষীরা লাইন সাতক্ষীরা এক্সপ্রেস এসপি গোল্ডেন একে ট্রাভেল এমআর পরিবহন ঈগল পরিবহন হানিফ পরিবহন রোজিনা পরিবহন সোহাগ পরিবহন সহ প্রায় অর্ধসহ পরিবহন এই অতিরিক্ত টাকায় টিকিট বুকিং দিচ্ছে বলে যাত্রীরা জানিয়েছে।