দশমিনা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের চরবাঁশবাড়িয়ায় নির্মিত দশমিনা বীজবর্ধন খামারটি বর্ষা মৌসুমের আগেই বাঁধ নির্মান না করা হলে ধীরে ধীরে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে খামারের অধিকাংশ এলাকা তেঁতুলিয়া নদীর তীব্র ভাঙনের মুখে রয়েছে। বীজবর্ধন খামারের আয়তন নদীর ভাঙনের কারনে দিনে দিনে ছোট হয়ে আসছে। চিঠি চালাচালির মধ্যেই খামারটি ভাঙন প্রতিরোধ ব্যবস্থা সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।
জানা যায়, ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২৫০ কোটি টাকা প্রাথমিক ব্যয়ে ১ হাজার ৪৪ দশমিক ৩৩ একর জমি নিয়ে বীজবর্ধন খামারটি নির্মিত হয়। নির্মানের পরেই খামারের মোট জমির প্রায় ৩০শতাংশ জমি তেঁতুলিয়া নদীর গর্ভে বিলীন হয় আর ভাঙনের আশঙ্কায় আছে খামারের গুদাম ও অফিস ভবন। প্রকূলতা-সহিষ্ণু বীজ উৎপন্ন এবং দক্ষিণ উপকূলীয় এলাকার জন্য উপযোগী শস্যবীজ উৎপাদন করে কৃষকদের হাতে তুলে দেয়ার জন্য এই প্রকল্প নেয়া হয়। শুরু থেকে বীজবর্ধন খামারটি বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) প্রকল্প পরিচালকের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয় এবং প্রকল্পটির মেয়াদ ২০১৭ সালের ৩০জুন শেষ হওয়ার পর খামারটি ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়ে আসছে। আর ২০১৭ সালের সর্বশেষ জরিপে তেঁতুলিয়া নদী গর্ভে ২৫৩ একর জমি বিলীন হয়েছে। বর্তমানে খামারটির অফিস ভবন, ৫০০ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন গুদাম ভবন, শস্য মাড়াইয়ের স্থান ও বীজ শুকানোর স্থানসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নদী ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। দেখা যায়, তেঁতুলিয়া নদীর তীব্র স্রোতে খামারটির উত্তর ও পশ্চিম দিকের চলাচলের রাস্তা নদীগর্ভে বিলিন হয়ে খামারের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো গুলোও ঝুঁঁকির মধ্যে রয়েছে। খামারটিতে গম, আলু, সূর্যমুখী, মশুর, মুগ, ফেলন, সয়াবিন ও তিল বীজ উৎপাদন হলেও বেড়িবাঁধ ও স্লু-ইস গেট না থাকায় বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত জোয়ারের কারণে এসব বীজের উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বর্তমান শুধু বোরো ও আমন ধানের বীজ উৎপাদন হচ্ছে।
খামারের কর্মচারীরা জানান, লোকবল সংকট, নদীভাঙন ও উচ্চ জোয়ারের পানিতে খামারের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ৩ জন কর্মকর্তাসহ ১৮টি পদ থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র ২জন। প্রতিদিন ১০০ থেকে ২০০ জনের বেশি লোক দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে কাজ করছেন। নদী ভাঙন রোধ করে খামারের চারপাশে বাঁধ নির্মাণ করা হলে উৎপাদনের পরিমাণ আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
বীজবর্ধন খামারের উপ-পরিচালকের কার্যালয় থেকে জানা যায়, প্রতি বছর মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত অমাবস্যা-পূর্ণিমার প্রভাবে খামারের বিস্তীর্ণ এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে জোয়ার-ভাটার সময় পানি উঠা-নামা করায় আমন ফসলের উৎপাদনও ব্যাহত হয়। খামারটিতে ডাল জাতীয় ফসল উৎপাদনে ব্যাপক সম্ভাবনা থাকলেও জোয়ারের জলাবদ্ধতার কারণে বীজ উৎপাদন প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে জানা যায়,২০২১/২০২২ অর্থ বছরে ৩২০মিটার অংশে জরুরি প্রতিরক্ষা মূলক কাজ বাস্তবায়ন করেছি। কাজ বাস্তবায়নে ঐ অংশটা ভাঙন রোধ হলেও আপে এবং ডাউনে ভাঙন অব্যাহত আছে। এই ভাঙন রোধে ২০২২/২০২৩ অর্থ বছরে ৫০০ মিটার কাজ বাস্তবায়নের জন্য বাজেট প্রেরণ করেছি, বাজেট প্রাপ্তির সাপেক্ষে আমরা এই ৫০০মিটার অংশের কাজ বাস্তবায়ন করা হয়।