ডেস্ক রিপোর্ট : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ মঙ্গলবার (৩ জুন) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ দায়ের করেছেন। এ সময় তিনি বলেন— ফ্যাসিস্ট শাসনে যারা গুম, খুন এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তারা অভিযোগ দায়ের করতে পারেন।
অভিযোগ দায়ের করার পর সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, গুম, খুনের ঘটনা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা হিসেবে দায়ের হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম দেখা যায়নি, যা অত্যন্ত হতাশাজনক। তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনাসহ গুম-খুনের সাথে যারা জড়িত, তাদের অবশ্যই বিচার হতে হবে।
এ সময় সালাহউদ্দিন আহমেদ গুমের ঘটনায় এখন পর্যন্ত গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের শাস্তি এবং যারা পালিয়ে গেছেন তাদের খুঁজে বের করার জন্য গুম কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল হাসানসহ গুমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা উচিত। এই সরকারের দায়িত্ব হলো— সবার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া এবং গুম-খুনের সংস্কৃতি বন্ধ করা।
নিজের গুম হওয়া প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, আমি আগে থেকেই গুম কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। ২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাতে উত্তরার একটি বাসা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে সশস্ত্র ব্যক্তিরা আমাকে তুলে নিয়ে যায়। প্রায় ৬১ দিন পর, আমাকে অন্য একটি দেশে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি আরো জানান, যত সময় ধরে আমাকে আটক রাখা হয়েছিল, সেই সময়ের অভ্যন্তরীণ পরিবেশসহ অন্যান্য বিষয় গুম কমিশনের কাছে তুলে ধরেছি।
২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাজধানীর উত্তরা থেকে সালাহউদ্দিন নিখোঁজ হন। ৬২ দিন পর একই বছরের ১১ মে ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে স্থানীয় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।
ভারতের পুলিশের পক্ষ থেকে তখন বলা হয়েছিল, সালাহউদ্দিন শিলংয়ে উদ্ভ্রান্তের মতো ঘোরাঘুরি করার সময় লোকজনের ফোন পেয়ে তাকে আটক করা হয়।
সালাহউদ্দিনকে আটক করার পর বৈধ নথিপত্র ছাড়া ভারতে প্রবেশের অভিযোগে দেশটির ফরেনার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী মামলা করে মেঘালয় পুলিশ। একই বছরের ২২ জুলাই ভারতের নিম্ন আদালতে আনুষ্ঠানিকভাবে তার বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের অভিযোগে অভিযোগ গঠন করা হয়। এ মামলায় নিম্ন আদালতের রায়ে ২০১৮ সালে সালাহউদ্দিন খালাস পান। ভারত সরকার এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে তাকে সেখানেই থাকতে হয়।
২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আপিলেও খালাস পান সালাহউদ্দিন। আদালত তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেন। একই বছরের ৮ মে সালাহউদ্দিন ভ্রমণ অনুমোদনের জন্য আসাম রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করেন। আবেদনে তিনি বলেন, ২০১৫ সাল থেকে তিনি ভারতে আটকে আছেন। দেশটিতে তার বিরুদ্ধে যে অনুপ্রবেশের মামলা হয়েছিল, সেই মামলায় আদালত তাকে খালাস দিয়েছেন। ২০১৬ সালের ১১ জুলাই তার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়েছে। ভারতে থাকার কারণে তিনি নিজের পাসপোর্ট নবায়নের সুযোগ পাননি। ভ্রমণ অনুমোদন দেওয়া হলে তিনি নিজের দেশে ফিরতে চান। দেশবাসী ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হতে চান।
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতনের পর ১১ আগস্ট দেশে ফেরেন সালাহউদ্দিন আহমেদ।