সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : ‘ঈশ্বর থাকেন ওই ভদ্র পল্লীতে, এখানে তাহাকে খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না।’ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসের একটি উক্তি। উপন্যাসটিতে পদ্মা পাড়ের সহজ সরল জেলেদের জীবন জীবিকার বাস্তব চিত্র ফুটিয়ে তোলার পাশাপাশি নির্যাতিত মানুষের প্রতি শোষক শ্রেণির কিছু মানুষের প্রকৃত রূপ তুলে ধরা হয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার সময় কলেজের বাংলা শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে দুই সারিতে বসা ছাত্রছাত্রীদের মাঝ দিয়ে হেঁটে চলতেন এবং উপন্যাসের প্রতিটি লাইন চোখ বন্ধ করে পড়ে যেতেন। রুম ভর্তি ছাত্রছাত্রীর কোনরকম টু-শব্দ নেই। সবাই মনোযোগ দিয়ে স্যারের কথা শুনছেন। তবে আমি অবাক হতাম এই উপন্যাস সম্পর্কে স্যারের দক্ষতা দেখে। স্যার উপন্যাসের প্রতিটি চরিত্র আঞ্চলিক ভাষার সাথে তালমিলিয়ে এমনভাবে অভিনয় করে বলতেন তাতে মনে হতো আমরা যেন পদ্মাপারের সেই কেতুপুর গ্রামে আছি। মুহূর্তের মধ্যে অনুভব করতাম উপকূলবর্তী মানুষের জীবনজীবিকা নিয়ে। দেশের উপকূলবর্তী অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের বাস্তব চিত্র পদ্মাপারের সেই কেতুপুর গ্রামের মতই। নদী ভাঙন, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসের মতো ভয়াবহ সব দুর্যোগকে সাথী করে দারিদ্র্য, অনিশ্চয়তা এবং দুঃখ-শোকে কাটে অসংখ্য কুবের, মালা আর কপিলাদের নিত্যদিন। আবার আছেন শীতল বাবু এবং হোসেন মিয়ারাও।
দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মুষ্টিমেয় মানুষের জীবিকার প্রধান উৎস লোনা পানির মৎস্য চাষ কিংবা নদীতে মাছ ধরা। বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী হওয়ায় এখানকার জনগণ বাধ্য হয়ে এ ধরনের পেশাকে বেছে নিয়েছে। অনেকের কৃষি চাষাবাদযোগ্য জমি থাকার সত্ত্বেও বছরের অধিকাংশ সময় মাটিতে লবণাক্ততার তীব্রতা থাকায় সেখানে ফসল ফলানো দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। তারপরেও অনেকেই বেছে নেয় লবণাক্ত সহনশীল অভিযোজন ক্ষমতা সম্পন্ন ফসল উৎপাদনের পদ্ধতিকে। উপকূলবর্তী এসব মানুষের অধিকাংশই জীবিকার তাগিদে নিজের জমি বা অন্যের থেকে লিজ নেওয়া জমিতে অক্লান্ত পরিশ্রমে উৎপাদন করে বিভিন্ন প্রজাতির চিংড়ি, কাঁকড়া, কুঁচিয়াসহ হরেক প্রজাতির সুস্বাদু মাছ। যেগুলো দেশের বাজারে জনগণের খাদ্যের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশের বাজারেও বেশ কদর রয়েছে। রপ্তানি বাণিজ্যে উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় এসব মৎস্য সম্পদ বিদেশে রপ্তানি করে প্রতি বছর সরকারি কোষাগারে জমা হয় মোটা অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা। যার ভিতর দেশের ‘হোয়াইট গোল্ড’ খ্যাত চিংড়ি সবার আগে প্রাধান্য পায়। রপ্তানি বাণিজ্যে বৈদেশিক মুদ্রার একটা সিংহ ভাগ আসে এই চিংড়ি রপ্তানি করে। এছাড়া সম্প্রতি দেশের কাঁকড়া ও কুঁচিয়া বিদেশিদের কাছে অনেক বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। অদূর ভবিষ্যেৎ এটি দেশের রপ্তানি বাণিজ্য খাতে অনেক বড় ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।
কিন্তু প্রকৃত বাস্তবতা এমনই যে, দেশের মানুষের মৎস্য চাহিদা মিটিয়ে সরকারি কোষাগারে বৈদেশিক অর্থ যোগানে যে এলাকার মানুষগুলোর ভূমিকা অপরিসীম তাদের জীবনের বেশিরভাগই সময় কাটে গৃহহীন, অনাহার ও অর্ধাহারে। উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় ছোট হতেই দেখে এসেছি বানের জলে সর্বস্ব বিসর্জন দেওয়া সংগ্রামী জীবনগাঁথা মানুষের দুর্বিষহ জীবন। ধনী-গরিব, নিন্মবিত্ত-মধ্যবিত্ত, ছোট-বড় সকলের হাহাকারে আকাশ বাতাস কম্পিত হতে শুনেছি। দিনের ব্যবধানে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া বাপ-দাদার ভিটেবাড়ি, সহায় সম্বল হারিয়ে এসব মানুষ মুহূর্তের মধ্যে পথের ভিখারি বনে যায়। জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড় আসার পূর্বে এসব মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য সরকারের পাশাপাশি অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে বারবার তাগিদ দেওয়া হয়। কিন্তু বানের জলে ডুবে মরলেও অনেকে বসত ভিটে ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চায় না। গবাদি পশু, ছাগল, ভেড়া, হাঁস-মুরগিসহ সমস্ত সহায় সম্বল বানের জলে ছেড়ে যেতে কার বা মন চায়! তারপরেও জীবন বাঁচাতে হবে। আবারো টিকে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত হতে হবে। সেই আশাকে পুঁজি করে বেশিরভাগ মানুষ তিলতিল করে গড়ে তোলা সকল স্বপ্নকে জলাঞ্জলি দিয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে যায় আশ্রয়কেন্দ্রে। চারদিকে থৈ থৈ জল, বৈরি আবহাওয়া, তীব্র বাতাসের ঝাঁপটা, সেইসাথে অঝোরে ঝরতে থাকা বৃষ্টির ধারা। এসব প্রতিকূলতার মধ্যেও অনেকে গলা পানিতে নিমজ্জিত হয়ে, দিন রাত একাকার করে খুঁজতে থাকে নিরাপদ জীবনের আশ্রয়। কিন্তু সেই আশ্রয়টুকুও তাদের কাছে অপ্রতুল। কেননা, দুর্যোগ প্রবণ এলাকার মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে নির্মিত সাইক্লোন শেল্টারগুলোও প্রয়োজনের তুলনায় বেশ অপ্রতুল। বহুকষ্টে সেখানে আশ্রয় পাওয়ার পর গাদাগাদি করে গবাদি পশু মানুষ একসাথে কোনো রকমে দিনাতিপাত করে। যেখানে নেই শুকনো কাপড়ের ব্যবস্থা। নেই সুপেয় পানির ব্যবস্থা। নেই প্রয়োজনীয় সংখ্যক শৌচাগারের ব্যবস্থা। সাথে যুক্ত হয় নিত্যদিনের খাবারের সংকট। এভাবে নানান সংকটের মধ্য দিয়ে কাদামাটি মাখা মানুষগুলো গাদাগাদি করে থাকতে শুরু হয় ডায়েরিয়া, কলেরা, আমাশয়, সর্দি, কাশি, জ্বরসহ নানান ধরনে
মানবেতর এই জীবনযাপনের চিত্র স্বচক্ষে দেখলে যেকোন বিবেকবান ব্যক্তির মনে হয়, এ যেন এক নতুন মহামারী। নিজেদের বসতবাড়ি, ভিটেমাটি, সহায় সম্বল, আপনজন জলাঞ্জলি দিয়ে সবাই বাধ্য হয়ে অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। শুরু হয় টিকে থাকার সংগ্রাম। জীবনকে বাঁচিয়ে রাখার সংগ্রাম। এই সংগ্রামে অনেকেই হেরে যায় আবার অনেকেই টিকে থাকে। এই টিকে থাকার সংগ্রামে যারা হেরে যায় তারা হয়তো হেরে গিয়েই বেঁচে যায়। আর টিকে থাকা মানুষগুলো আবারো প্রহর গুনতে থাকে পরবর্তী সংগ্রামের। কেননা, ক্ষত শুকানোর আগেই প্রকৃতি আবারো তার প্রলয়ংকারী সাজে আবির্ভূত হয়ে ধেয়ে আসে সবকিছু ল-ভ- করে দিতে। বিগত বছরগুলোতে ঘটে যাওয়া সিডর, আইলা, বুলবুল, নার্গিস, ফনি, আম্ফান, ইয়াস, রিমাল তারই স্বাক্ষর বহন করে। উপকূলীয় এসব মানুষের জন্মই যেন আজন্ম পাপ।
গেল বছর সর্বশেষ আঘাত আনা প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘রিমালের’ তান্ডবে ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল উপকূল। পরিসংখ্যান বলছে, রিমালের তান্ডবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের ১৩টি জেলা। প্রাণ হারিয়েছিল ২৩ জন। প্রায় ২ লাখ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছিল। বেড়িবাঁধের ৪০০ জায়গা ভেঙে তলিয়ে গিয়েছিল গ্রামের পর গ্রাম। রিমালের আঘাতে ক্ষতি হয়েছিল ১ লাখ ৭১ হাজার ১০৯ হেক্টর ফসলি জমির। সম্প্রতি সৃষ্ট হওয়া গভীর নি¤œচাপে উপকূলবর্তী অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। নদী ভাঙনে ভেসে গেছে বসতবাড়ি, পুকুরের মাছ, চিংড়ি ঘেরসহ ফসলি জমি। প্রতিবছরে এমন একাধিক নি¤œচাপ এবং ঘূর্ণিঝড় উপকূলে আঘাত হানে। সাথে সাথে ধ্বংসযজ্ঞ সামনে উন্মোচন হয়। দুর্যোগ পরবর্তী উপকূলবাসীর বাস্তব চিত্র একবার স্বচক্ষে দেখলে গায়ের লোম শিউরে ওঠে। মনে হয়, উপকূলীয় এসব মানুষের জন্মই হয়েছে প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকার জন্য। এমনকি বছরের প্রায় ছয়মাসেরও বেশি সময় তাদের ঠাঁই হয় নিজেদের বসতভিটা ছেড়ে রাস্তার উপরে কোনো রকমে টঙ বেঁধে। গোটা পরিবার মিলে দিনের পর দিন না খেয়ে সময় পার হয়। অনেক পরিবার ভিটেমাটি ছেড়ে শহরের ভাসমান, ভিক্ষুক কিংবা ভবঘুরের খাতায় নাম লেখায়।
প্রতি বছরেই একাধিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপকূলীয় মানুষের দুর্দশা এতগুণে বাড়িয়ে দেয় সেটা দুর্যোগ পরবর্তী ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশ পায়। মিডিয়া আসন্ন দুর্যোগ নিয়ে সরাসরি সম্প্রচার করে। দুর্যোগ পরবর্তী কিছুদিন পর্যন্ত এই মহড়া চলতে থাকে। যেটা ১/২ সপ্তাহ পেরোতেই থেমে যায়। আর মিডিয়া সংবাদ প্রচার বন্ধ হলেই এসব মানুষের দুর্দশা আবারো আগের মতই সুপ্ত হয়ে যায়। কিন্তু প্রকৃত দুর্বিষহ বাস্তবতা ভুক্তভোগীরা উপলদ্ধি করে। অন্যদিকে দুর্যোগ পরবর্তী সরকারের ত্রাণ তহবিল থেকে বরাদ্দকৃত অর্থের খুবই সামান্য পরিমাণ পৌঁছায় এসব দুর্দশাগ্রস্তদের কাছে। দেশের প্রেক্ষাপটে সরকার থেকে জনপ্রতি বরাদ্দের অর্থ বিভিন্নজনের হাত বদলে ভুক্তভোগীদের কাছে পৌঁছাতে পৌঁছাতে তার পরিমাণ লোপ পেতে থাকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই লোপ পাওয়ার পরিমাণ পুরোপুরি শূন্যের কোটায় গিয়ে পৌঁছায়। যাদের মাধ্যমে বরাদ্দ ভুক্তভোগীদের কাছে পৌঁছায় তাদের প্রায় সবার কাছেই এটি একটি অতি লাভজনক এবং পুঁজিহীন সফল ব্যবসা। তাই এই ব্যবসায় সকলেই মেতে ওঠে। রক্ষকই ভক্ষকের ভূমিকা পালন করে। কোনো রকম বিনিয়োগ ছাড়া গরিব মেহনতি জনগণের মাথা বিক্রি করে সরকারি বরাদ্দের অর্থ দিয়েই জনপ্রতিনিধিসহ অনেকের সম্পদের পাল্লা ভারী করার রেকর্ড পূর্বে দেখা গেছে। পক্ষান্তরে দুর্দশাগ্রস্ত জনগণ তাদের জন্য বণ্টিত প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ একটি নৈমিত্তিক ঘটনা এবং মাঝেমধ্যে প্রকৃতিতে সেটার উপস্থিতিও স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু দুর্যোগ মোকাবেলা করার মতো যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে দেশের একটা বড় অংশের মানুষ, তাদের বসতভিটা, তাদের সংস্কৃতি ক্রমান্বয়ে বিলীনের পথে যাচ্ছে। এটার ইঙ্গিত আমরা ইতোমধ্যে বহুবার পেয়েছি। নদীমাতৃক দেশে সাগরের সাথে সংযুক্ত নদীসমূহতে খরাস্রোত থাকবে সেটাও স্বাভাবিক। কংক্রিটের টেকসই বাঁধ ছাড়া এসব খরাস্রোতা নদীকে কোনভাবেই সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। যেখানে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা দরকার। দরকার টেকসই বেড়িবাঁধের। বার বার অর্থ বরাদ্দের চেয়ে একেবারে মোটা অঙ্কের বাজেট দিয়ে সরকারের কোনো বিশ্বস্ত এবং নির্ভরযোগ্য বিশেষ বাহিনীকে এই টেকসই বাঁধের দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। যাতে করে জনগণের টাকা জনগণের কল্যাণে সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হবে। এসব বাঁধ তৈরির জন্য প্রয়োজনে মেগা প্রকল্প হাতে নিতে হবে। কেননা, দুর্যোগ পরবর্তী এসব বাঁধ মেরামতের জন্য সরকার প্রতিবছর মোটা টাকার বাজেট দিলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় পূর্বের যাবতীয় বরাদ্দ পানিতে ভেসে শেষমেশ জনগণের একই দুর্দশার পুনরাবৃতি ঘটে। যেটা স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনার ব্যর্থতা বলে প্রতীয়মান হয়। নীতিনির্ধারকদের উচিত বিষয়টিকে অতীব গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে টেকসই বেড়িবাঁধের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে দুর্যোগ পূর্ববর্তী যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া।
প্রতিবছর মে থেকে জুলাই এর মধ্যে সাগরে বেশিরভাগ নি¤œচাপ, ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়। সাথে উপকূলবাসীর দুশ্চিন্তা বেড়ে যায়। বর্ষার দিনে আমরা শহুরে মানুষেরা যেখানে আয়েশ করে ভিন্ন ভিন্ন রেসিপিতে খাবারের পসরা সাজিয়ে বৃষ্টি উপভোগ করি, সেখানে উপকূলবর্তী মানুষেরা সীমাহীন দুর্ভোগ নিয়ে প্রতিটি ক্ষণ অতিবাহিত করে। যার প্রতিটি ক্ষণই আতঙ্কের। পাশেই বঙ্গোপসাগর, তাই প্রাকৃতিক দুর্যোগকে সাথে নিয়েই উপকূলবাসীর চলতে হবে, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই বলে প্রতিবার ঘটে যাওয়া দুর্যোগে এই সীমাহীন দুর্ভোগ মেনে নেওয়া যায় না। আগামীতে আরও ভয়ানক কিছু তাদের সামনে অপেক্ষা করছে সেটা ভাবতেই সবাই শিউরে ওঠে। যে এলাকার মানুষ একটা দেশের রাজস্ব খাতে বেশ অবদান রাখে, তাদের এই দুর্দশা স্বচক্ষে অবলোকন বেশ কষ্টকর। একমাত্র টেকসই বেড়িবাঁধই তাদের এই দুর্দিন থেকে রক্ষা করতে পারে। তা নাহলে এভাবে চলতে থাকবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম, বছরের পর বছর। আর মাঝ দিয়ে ‘হোসেন মিয়া’ রূপধারী রাঘব বোয়ালেরা ঠিকই তাদের সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলবে। খরাস্রোতা নদীর কাছে মাটির রাস্তা কোনভাবেই টেকসই নয়। যেটা বহু পূর্বে প্রমাণিত হয়েছে। বাইরের দেশগুলোতে দেখা যায়, সেখানে নদী অনেক ছোট কিন্তু নদীর দুইপাশের বাঁধ কংক্রিটের গাঁথুনি দিয়ে গড়া। যে গাঁথুনি হাজার বছরেও কিছু হওয়ার নয়। সেখানে আমাদের উপকূলবর্তী এসব নদীর স্রোত অনেক বেশি। নিন্মচাপ শুরু হওয়ার সাথে সাথে অস্বাভাবিক আকারে পানিবৃদ্ধি, জলোচ্ছ্বাস, মাটির বাঁধ ভেঙে বা উপছে ভিতরে প্রবেশ করা খুবই সহজ। অনেক সময়ে দেখা যায়, কোনো রকম নিন্মচাপ ছাড়াই অমাবস্যা বা পূর্ণিমা তিথিতে ভরা জোয়ারে এসব নদীর বাঁধ ভেঙে বা উপছে নি¤œ এলাকা প্লাবিত হয়। নীতি নির্ধারকদের বিষয়টিকে অতীব গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ উপকূলীয় মানুষের একান্ত কাম্য।