সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : কোরবানির ঈদ মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। এই দিনে আল্লাহর নামে পশু কোরবানি করা হয় এবং সেই মাংস আত্মীয়স্বজন ও গরিব-দুঃখীর মধ্যে বিতরণ করা হয়। ঈদ আনন্দ ও উৎসবের বার্তা নিয়ে এলেও, পশু কোরবানি করা, মাংস কাটাকুটি ও বিতরণের কারণে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে ওঠে। সঠিকভাবে পরিষ্কার না করলে স্বাস্থ্যঝুঁকি, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও দূষণের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। শুধু ঈদের দিন নয়, আগাম প্রস্তুতি ও পরবর্তী করণীয় মিলিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থাপনা থাকলে ঝামেলা এড়ানো যায় সহজে।
কোরবানির কয়েক দিন আগে থেকে পুরো বাড়ি পরিচ্ছন্ন করার উদ্যোগ নিন। বিশেষ করে রান্নাঘর ভালোভাবে পরিষ্কার করে জীবাণুমুক্ত করা প্রয়োজন, যেখানে মাংস কাটা ও রান্না করা হবে। মেঝে পরিষ্কার রাখতে হবে। রান্নার জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখলে ঈদের দিন কাজের সুবিধা হবে।
ঈদের আগে বাজারের একটি তালিকা তৈরি করে প্রয়োজনীয় পরিচ্ছন্নতার সামগ্রী কিনে রাখুন। শেষ মুহূর্তে তাড়াহুড়ো এড়াতে আগে থেকে ডিটারজেন্ট, জীবাণুনাশক (যেমন- ব্লিচিং পাউডার, স্যাভলন), গার্বেজ ব্যাগ ও গ্লাভস কিনে রাখা ভালো।
পশু জবাইয়ের স্থান নির্বাচনে সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। সম্ভব হলে পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত স্থানে পশু কোরবানি করুন। যদি বাড়িতে কোরবানি করতে হয়, তবে এমন একটি খোলা জায়গা নির্বাচন করুন, যা সহজে পরিষ্কার করা যায় এবং যেখানে জনসাধারণের চলাচল কম থাকে। জবাইয়ের স্থানটিতে পাটি বিছিয়ে নিলে রক্ত সরাসরি মাটি বা মেঝেতে লাগবে না। রক্ত ধুয়ে ফেলার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পানির ব্যবস্থা রাখুন।
রক্ত ও অন্যান্য বর্জ্য জমে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি করে এবং রোগজীবাণু ছড়াতে পারে। প্রথমে প্রচুর পরিমাণে পানি দিয়ে জবাইয়ের স্থানটি ভালোভাবে ধুয়ে নিন। এরপর জীবাণুনাশক যেমন ব্লিচিং পাউডার, স্যাভলন বা ডেটল পানির সঙ্গে মিশিয়ে সেই স্থানে ব্যবহার করলে জীবাণু ও দুর্গন্ধ দূর হবে। গরম পানি ব্যবহার করলে আরও ভালো ফল পাওয়া যায়। কোনো জমাট বাঁধা রক্ত বা আবর্জনা থাকলে তা ঝাড়ু বা ব্রাশ দিয়ে ঘষে তুলে ফেলতে হবে। খোলা জায়গায় কোরবানি করা হলে ধোয়ার পর ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে দিন।
কোরবানির পশুর বর্জ্য সঠিকভাবে অপসারণ করা পরিবেশ সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সম্ভব হলে বাড়ির আশপাশে গর্ত করে বর্জ্য মাটি চাপা দিন। শহরাঞ্চলে যেখানে মাটি চাপা দেওয়ার সুযোগ নেই, সেখানে বর্জ্যগুলো শক্ত গারবেজ ব্যাগে ভরে সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত স্থানে ফেলুন। কোনোভাবেই খোলা জায়গায়, ড্রেনে বা জলাশয়ে বর্জ্য ফেলবেন না।
মাংস কাটার কাজে ব্যবহৃত ছুরি, বঁটি এবং অন্যান্য সরঞ্জাম সাবান ও গরম পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে। জীবাণুমুক্ত করার জন্য ব্লিচের হালকা দ্রবণ ব্যবহার করা যেতে পারে অথবা কিছুক্ষণ গরম পানিতে ফুটিয়ে নেওয়া যেতে পারে। লোহার সরঞ্জাম ধোয়ার পর ভালোভাবে মুছে শুকিয়ে রাখুন, নাহলে মরিচা ধরতে পারে।কোরবানির ঈদের পরে ঘরের ভেতর পরিষ্কার করুন। মাংস ঘরে আনার পর যেখানে কাটা-বাছা করা হয়েছে, সেই স্থানটি ভালোভাবে পরিষ্কার করুন। প্রথমে রক্তের দাগ বা মাংসের টুকরা সরিয়ে ফেলতে হবে। এরপর সাবান ও গরম পানি দিয়ে সেই স্থান ধুয়ে পরিষ্কার করুন।
মেঝেতে রক্তের দাগ লাগলে ঠাণ্ডা লবণ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে দাগ সহজে উঠে যায়। পানি ও ট্যালকম পাউডার মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে দাগের ওপর লাগিয়ে কিছুক্ষণ পর ঘষে ধুয়ে ফেললেও রক্তের দাগ দূর হয়। ভিনেগারও কাপড়ে রক্তের দাগ তোলার জন্য খুব কার্যকর। দাগের ওপর ভিনেগার স্প্রে করে কিছুক্ষণ ঘষে নিলে দাগ উঠে যায়। গরম পানির সঙ্গে ডিটারজেন্ট মিশিয়ে মেঝে পরিষ্কার করলে মাংসের আঠালো ভাব ও রক্তের দাগ দূর হয়ে যায়।
মাংসের গন্ধ দূর করার জন্য হাতে লেবুর রস ঘষলে উপকার পাওয়া যায়। ঘরের দরজা-জানালা খুলে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা করলে মাংসের গন্ধ দূর হয়। এ ছাড়া ভিনেগার ফুটিয়ে বা বাটিতে করে ঘরের বিভিন্ন স্থানে রাখলে দুর্গন্ধ শোষণ করে নেয়। পরিষ্কার করার পর এয়ার ফ্রেশনার ব্যবহার করা যেতে পারে। মেঝের তেলতেলে ভাব দূর করতে গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে মেঝে মোছা যেতে পারে। মাংস প্রক্রিয়াকরণের জন্য ব্যবহৃত থালা-বাসন লিকুইড ডিশওয়াশার ও গরম পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিন।