দশমিনা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ফসলি জমিতে লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ করা এখন আর আগের মত দেকা যায় না। আধুনিকতার স্পর্শে ও বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কারের ফলে কৃষকদের জীবনে এসেছে নানা পরিবর্তন। আর সেই কৃষি ছোঁয়ায় পরিবর্তন দেখা যায় বেশ। উপজেলায় সকালবেলা কাঁধে লাঙ্গল-জোয়াল আর জোড়া গরু কৃষকদের দড়ি হাতে নিয়ে মাঠে যেতে দেখা যায় না। তাই এ উপজেলা থেকে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য লাঙ্গল দিয়ে হালচাষ। বাংলার রূপের কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে হাজার বছরের কৃষি উপকরণের সঙ্গী লাঙ্গল-জোয়াল ও গরু। লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ করা এখন কালের স্বাক্ষী হয়ে গেছে।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের দীর্ঘ ৩৯ বছরের হাল-চাষে পরিশ্রমি কৃষক লাল মিয়া বলেন, চাষের জন্য দরকার ছিলো এক জোড়া বলদ,কাঠের তৈরি লাঙ্গল, বাঁশের তৈরি জোয়াল, মই, লরি (বাঁশের তৈরি গরু তাড়ানোর লাঠি) গরুর মুখের টোনা ইত্যাদি । আগে গরু দিয়ে হালচাষ করলে জমিতে ঘাস কম হতো । অনেক সময় গরুর গোবর জমিতে লাগতো, এতে করে জমিতে অনেক জৈবসার হতো ফলে ক্ষেতে ফলন ভালো হতো। আধুনিকতার সঙ্গে সঙ্গে হাল চাষের পরিবর্তনে এখন ট্রাক্টর এবং ( ট্রলির ) নাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ করা হয় । এক সময় উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে কৃষক গরু পালন করতো হাল চাষ করার জন্য। আবার কিছু মানুষ গবাদিপশু দিয়ে হাল চাষকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। এখন আর চোখে পড়ে না গরুর লাঙ্গল দিয়ে চাষাবাদ। ধান রোপা থেকে ফসল ঘরে তোলা সবই মেশিনের কাজ । আগের মতোন পরিশ্রম করতে হয়না ।
কৃষক মোসলেম মহল্লাদার বলেন, আমার বাব-দাদার আমল থেকে কৃষি জমিতে চাষাবাদ করতাম লাঙ্গল আর হালের বলদ দিয়ে এখান আর তার প্রয়োজন হয় না কৃষি ক্ষেত্রে প্রযুক্তির নতুন নতুন আবিস্কারের ফলে কৃষিতে ফসল উৎপাদন পরিধি সিমিত হয়ে গেছে । শখ করে ৫-৬টি মহিষ লালন পালন করি । এই বছর প্রায় ২-৩ একর জমি ধানের জন্য চাষাবাদ করেছি তা ট্র্যাক্টর দিয়ে । সময় কম লেগেছে ।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃসিবিদ মোঃ আবু জাফর আহম্মেদ বলেন, গ্রামবাংলার ঐতিহ্য সোনালী প্রান্তর থেকে হারিয়ে যাচ্ছে এক সময় কালের হালচাষ। এখন নতুন নতুন আধুনিক বিভিন্ন মেশিন এসেছে, সেই মেশিন দিয়ে এখানকার লোকজন জমি চাষাবাদ করে। তাই গরু, মহিষ, লাঙ্গল, জোয়াল নিয়ে জমিতে হাল চাষ করা এখন আর নেই। এক সময় গরু,মহিষ, লাঙ্গল ও জোয়াল ছিল আমাদের ঐতিহ্য ও পরিবেশ বান্ধব কৃষি পদ্ধতি। তাঁই বিগত দিনকে পিছনে ফেলে বর্তমান সময়ে কৃষি প্রযুক্তি আধুনিকতার ছোঁয়াই বেড়ে চলেছে। আগামীতে কৃষিতে আরও পরিবর্তন আসবে যা কৃষকদের কৃষি কজে সময়ের অপচয় হবেনা এবং শ্রমও কম লাগবে।