সাতক্ষীরা; আর মাত্র একদিন পরেই ঈদুল আযহা অনুষ্ঠিত হবে। হাতে সময় খুব কম কিন্তু সাতক্ষীরার কোরবানির বাজারগুলোতে ক্রেতা শূন্য হওয়ার পথে। কারণ বাজারের কোরবানির পশুর আমদানির তুলনায় ক্রেতা খুব কম। তারপরেও যে সমস্ত ক্রেতারা সাতক্ষীরার বাজারগুলোতে কোরবানির গরু কিনতে যাচ্ছেন বেপারী ও খামারিরা যা ডাব যাচ্ছেন ক্রেতারা সে তুলনায় আকাশ পাতাল কনে দাম বলছে সে কারণে সাতক্ষীরার কোরবানির বাজার গুলোতে বেপারী ও খামারিরা কোরবানির পশুবিক্রি করতে খুব নাজেহাল হতে হচ্ছে। সাতক্ষীরা জেলার সর্ববৃহৎ পশুহাট পারুলিয়া সেই বাজারের একজন গরু ব্যবসায়ী নাজমুল হোসেন ২০ টি গরু নিয়ে গেছেন আজ এক সপ্তাহ কিন্তু এ পর্যন্ত বিক্রি করেছেন মাত্র তিনটি গরু। নাজমুল হোসেন জানান যে দামে গরু কিনেছি তাছাড়া ক্রেতারা প্রতিটি গরুতে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা দাম কম বলছে তাহলে কিভাবে বাঁচব
আর মাত্র কয়েকদিন পরেই মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হবে। আসন্ন এই পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে জমে উঠতে শুরু করেছে সাতক্ষীরার পশুর হাটগুলো। কোরবানি উপলক্ষে পশু কেনাবেচায় ব্যস্ত সময় পার করছেন ক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা। ভারতীয় গরু আমদানি বন্ধ থাকায় খুশি খামারি ও ব্যবসায়ীরা। সীমান্ত দিয়ে যাতে কোনোভাবেই ভারতীয় গরু দেশে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য বিজিবির পক্ষ থেকেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া খামারিরা এবার গরু মোটা-তাজাকরণে ওষুধ প্রয়োগ থেকেও বিরত রয়েছেন বলে জানিয়েছে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।সাতক্ষীরায় সব চেয়ে বড় পশুরহাট বসে দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়ায়। দ্বিতীয় বৃহত্তম হাট বসে সদর উপজেলার আবাদেরহাটে। সপ্তাহে একদিন রোববার পারুলিয়ার হাট বসলেও সপ্তাহে দু’দিন শনিবার ও মঙ্গলবার আবাদেরহাটে পশু কেনাবেচা হয়। এছাড়া শ্যামনগর, ধুলিহর, কদমতলা, বুধহাটা, কলারোয়া ও তালাসহ বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয়ভাবে সপ্তাহের বিভিন্ন দিনে পশুর হাট বসে। এইসব হাটে দেশীয় প্রজাতির বহু সংখ্যাক গরু, মহিষ, ভেড়া ও ছাগল ওঠে। কিন্তু এবার কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে হাটগুলোতে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেলেও বিক্রি সেভাবে হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন গরুর খামারি ও ব্যবসায়ীরা। এছাড়াও ঈদের দুই থেকে তিনদিন আগে সাতক্ষীরা পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ পশুর হাট বসবে বলে জানিয়েছেন পৌর কর্তৃপক্ষ।গত বছরের তুলনায় এবার দাম বেশি হওয়ায় হাটে পর্যাপ্ত পশু থাকলেও বিক্রি কম। দাম বেশি হওয়ায় মধ্যবিত্তরা এবার ঝুঁকছেন ছোট বা মাঝারি সাইজের পশু ক্রয়ের দিকে। তবে হাটগুলোতে মাঝারি সাইজের গুরু ও ছাগলের চাহিদা তুলনামূলক বেশি। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি আর্থিক সংকটের কারণে সাধ্যের মধ্যে না থাকায় সাধারণ ক্রেতারা এবার বড় গরু কিনতে বেশি আগ্রহী নয়।সরেজমিনে দেখা গেছে, আবাদেরহাটে পশুহাটে অন্যান্য বারের মতো চমকপ্রদ ও বিশালাকৃতির সারি সারি গরুর দেখা মেলেনি। হাতে গোনা কয়েকটি বড় সাইজের গরু হাটে তুললেও, ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রখর রোদে দাঁড়িয়ে থেকে ক্রেতা না মেলায় তা ফিরিয়ে নিয়ে যান ব্যবসায়ী ও খামারিরা। এদিকে কদমতলা বাজারে ও পারুলিয়া হাটে মাঝারি সাইজের খাসি ছাগল ১২ থেকে ১৫ হাজার এবং বড় সাইজের খাসি ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।স্থানীয় খামারিরা বলছেন, এবার পর্যাপ্ত দেশি জাতের গরু পালন করেছেন। গরুকে খাবার হিসেবে কাঁচাঘাস, খৈল, চিটাগুড়, বিচলী, ভুষি, খুদ এবং ধানের কুড়াসহ প্রাকৃতিক খাবার খাওয়ানো হচ্ছে। তবে পশুখাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় গরু পালনে খরচ অনেক বেড়েছে। তারা আরও বলেন, কোরবানির পশুর দাম এবার বেশি হবে। কারণ উৎপাদন খরচ বেড়েছে। উৎপাদন খরচ বাড়ায় তাদের লাভের পরিমাণ কমে গেছে। তবে, কেউ লোকসান দিয়ে গরু বিক্রি করবে না। ক্রেতারা এখন কিনলে কিছুটা কমে কিনতে পারবেন। কোরবানির হাটে তারা প্রত্যাশা অনুযায়ী দাম না পেলে পশু বিক্রি করবেন না। সেক্ষেত্রে ক্রেতাদের বাড়তি দামেই কিনতে হবে।সদরের কাশেমপুর এলাকার গরু ও ছাগল খামারি কামরুজ্জামান টুটুল জানান, আমি কয়েক বছর ধরে গরু ও ছাগল পালন করি, পশুর খাদ্য দাম বেশি হওয়ায় কোরবানি উপলক্ষে এবার কয়েকটি গরু ও ৪০টি ছাগল পালন করেছি। তিনি বলেন, আমার খামারে ৬০ থেকে ৭০হাজার টাকা পর্যন্ত সব সাইজের দেশি গরু আছে। আর ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন প্রজাতের খাসি ছাগল আছে। তবে গত বছরের তুলনায় এবার গরুর দাম অনেক বেশি হওয়ায় ক্রেতার উপস্থিত কম।আবাদের হাটে আসা ক্রেতা হামিদ বলেন, গত বছরের চেয়ে এবার গরুর দাম একটু বেশি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে গরু না আসায় খামারি ও ব্যবসায়ীরা দেশি গরুর দাম একটু বেশি হাঁকাচ্ছেন। যে কারণে বাজারে ক্রেতার উপস্থিতি বেশি থাকলেও সে তুলনায় বিক্রি কম। তবে বড় সাইজের গরুর চেয়ে মাঝারি ও ছোট সাইজের গরুর এবার চাহিদা বেশি। সেই সঙ্গে ছাগলের বিক্রি তুলনামূলক বেশি।