ডেস্ক রিপোর্ট : “আমার প্রশাসন লস অ্যাঞ্জেলেসকে ‘স্বাধীন’ করবে। ” অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে লস অ্যাঞ্জেলেসে চলমান বিক্ষোভ এবং সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্তের পক্ষে এভাবেই জোরালো সাফাই দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর এ সিদ্ধান্তকে বিরোধীরা ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অতিপ্রতিক্রিয়া’ হিসেবে সমালোচনা করেছেন।
গতকাল মঙ্গলবার সেনাদের সম্মানে নর্থ ক্যারোলিনার ফোর্ট ব্র্যাগ সামরিক ঘাঁটিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তৃতায় নিজের অবস্থান এভাবে পরিষ্কার করে তুলে ধরেন ট্রাম্প।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের সেনারা দূর-দূরান্তের যুদ্ধে নিজেদের রক্ত বিসর্জন দেননি—এ দেশকে অবৈধ অনুপ্রবেশ ও তৃতীয় বিশ্বের বিশৃঙ্খলার হাতে নষ্ট হতে দেখার জন্য।’
লস অ্যাঞ্জেলেসে বিক্ষোভ সামাল দিতে সেনা মোতায়েন নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্ক শুরু হলেও ট্রাম্প তার ভাষণে একে যুক্তরাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ হিসেবে তুলে ধরেন।
ক্যালিফোর্নিয়ার পরিস্থিতিকে ‘শান্তি, জনশৃঙ্খলা এবং জাতীয় সার্বভৌমত্বের ওপর সম্পূর্ণ আক্রমণ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর ভাষায়, ‘বিদেশি পতাকা বহনকারী দাঙ্গাকারীদের’ মাধ্যমে এই হামলা চালানো হচ্ছে।
ট্রাম্প এরই মধ্যে লস অ্যাঞ্জেলেসে ৭০০ মেরিন সেনা ও ৪ হাজার ন্যাশনাল গার্ড সদস্য মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছেন। এই সেনা মোতায়েন প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এটি ছিল ফেডারেল সম্পত্তি ও কর্মীদের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।’
তবে ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্রেটিক নেতৃত্বাধীন সরকার ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই শুরু করেছে। তাদের অভিযোগ, এটি ‘ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অপ্রয়োজনীয় উসকানি।’
এদিকে চলমান বিক্ষোভের মধ্যে লুটপাট ও সহিংসতার জেরে লস অ্যাঞ্জেলেসের কিছু এলাকায় কারফিউ ঘোষণা করেছেন শহরটির মেয়র ক্যারেন ব্যাস। স্থানীয় সময় রাত ৮টা (বাংলাদেশ সময় ভোর ৪ টা) থেকে এই কারফিউ কার্যকর হয়।
শহর কর্তৃপক্ষ বাসিন্দাদের মোবাইল ফোনে জরুরি সতর্কবার্তা পাঠিয়ে জানায়, ‘লস অ্যাঞ্জেলেস শহরে রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কারফিউ কার্যকর। কাজের উদ্দেশ্যে যাতায়াত, জরুরি চিকিৎসা দেওয়া বা নেওয়া এবং জরুরি সেবাদানকারীরা এর আওতামুক্ত থাকবেন।’
রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কারফিউ শুরুর পরও অনেকেই সড়কে অবস্থান নিয়েছিলেন। এর মধ্যে কিছু মানুষ কারফিউর বিষয়ে অবগত ছিলেন না আর কিছু মানুষ কারফিউ উপেক্ষা করে সড়কে অবস্থান নেন। এ সময় পুলিশ সড়ক থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে শুরু করে। রাবার বুলেট ছোড়া হয়।
লস অ্যাঞ্জেলেসের কারফিউ চলাকালে একজন বিক্ষোভকারী ছুটে এসে সাংবাদিকদের তাঁর বুকে বড় একটি রাবার বুলেটের ক্ষত দেখান। শহরের এক মোড়ে সাংবাদিকেরা তাঁদের প্রেস পাস দেখালেও পুলিশ তাদের সড়ক থেকে সরে যেতে বলে।
সাংবাদিকরা যখন জানান যে মেয়র ও পুলিশপ্রধান স্পষ্টভাবে বলেছেন, কারফিউর মধ্যেও গণমাধ্যমের চলাচল স্বাধীন, তখন এক পুলিশ কর্মকর্তা সোজাসাপ্টা বলেন, ‘আপনি যে-ই হোন, আমরা আপনাকে গ্রেপ্তার করতে পারি।’
এদিকে টেক্সাস গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে লিখেছেন, ‘টেক্সাসে শান্তি ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে জাতীয় গার্ড মোতায়েন করা হবে। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ আইনসঙ্গত। কিন্তু ব্যক্তিকে আঘাত করা বা সম্পত্তি নষ্ট করা বেআইনি, এবং এর পরিণতিতে গ্রেপ্তার অনিবার্য। টেক্সাস ন্যাশনাল গার্ড আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তায় সব কৌশল ও উপকরণ ব্যবহার করবে।’
বিবিসির সরাসরি সম্প্রচার থেকে জানা যায়, নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের আরও কয়েকটি শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। নিউইয়র্কে ‘একাধিক’ বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় পুলিশ।