1. news@sangjogprotidin.online : ADMIN : ADMIN ADMIN
  2. info@www.sangjogprotidin.online : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন :
শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ১১:৪২ পূর্বাহ্ন
বিজ্ঞপ্তি :
জরুরী সাংবাদিক নিয়োগ চলছে আপনার কাছে একটি দুর্দান্ত সুযোগ! "সংযোগ প্রতিদিন" সংবাদপত্রে জরুরী ভিত্তিতে সাংবাদিক নিয়োগ চলছে।

কপোতাক্ষ নদে ডিঙি নৌকায় ভাসমান জীবন যাপন সুখেন দম্পতির

  • প্রকাশিত: শুক্রবার, ১৩ জুন, ২০২৫
পাইকগাছা প্রতিনিধি : চোখে বেশ পুরু গ্লাসের চশমা। তবুও ঠিক মত ঠাহর করতে পারে না। তার চোখ- জলের আয়নায় আটকে থাকা এক ঝাঁক বিষণ্ন তারা। যেবড়থেবড়ো চুলগুলো পেকে সাদা হয়েছে অনেক আগে। চোয়ালের চামড়া কঠরে ঠেকেছে। বয়সের ছাপ দেখেই বোঝা যায় প্রৌঢ়। নাম সুখেন বিশ্বাস। সত্তর বা তদূর্ধ্ব বয়স হবে। জীবন যুদ্ধে হার না মানা এক নাম। একমাত্র সম্বল ডিঙি নৌকা। পাইকগাছার গদাইপুর ইউনিয়নের বোয়ালিয়া জেলেপল্লী (মালো পাড়ায়) তার জন্ম। কয়েক যুগ হলো তার বসতভিটা সহায় সম্বল রাক্ষুসী কপোতাক্ষ গ্রাস করেছে। সেই থেকে একমাত্র সহধর্মিণী কে নিয়ে ডিঙি নৌকায় ভাসমান জীবনযাপন করে চলেছেন সুখেন বিশ্বাস। নদই জীবন নদই সম্বল। ডিঙি নৌকা একমাত্র অবলম্বন। তার দেখা মেলা ভার। জীবন যুদ্ধে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হচ্ছে। আজ এই নদীর বোয়ালিয়া অঞ্চলে, তো কাল আগড়ঘাটা, শিববাটি এভাবে দিন রাত কপোতাক্ষ, শালিখা, শিবসা সহ অন্যান্য নদীতে মাছ ধরে চলেছেন তিনি। সারা দিনের ক্লান্তি শেষে যে মাছ পান সেটা বিক্রি করে কোন ভাবে জীবনযাপন করে চলেছেন। সব দিন সমান যায় না। কোন দিন তাদের আধাপেটা, কোন কোন দিন তাদের মোটেও জোটে না। বেশি ভাগ সময় শুকনা খাবার, চিড়া, মুড়ি, বিস্কুটই ভরসা। এই বৃষ্টি বাদল, বৈরী আবহাওয়া, ঝড়ঝঞ্ঝাট, তপ্ত রোদ তাকে দমাতে পারে না। তাঁকে সর্বক্ষণ সাহস অনুপ্রেরণা দিয়ে যাচ্ছেন সহধর্মিণী অন্নাদেবী (ছদ্মনাম)। তাদের মধ্যে এক অপূর্ব প্রেম, গভীর ভালোবাসা। মাঝে মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার শেষ থাকে না। তার স্ত্রীর মুখ- যেন সন্ধ্যাবেলার স্তব্ধ নদীর প্রার্থনা। “আমার সব ছিল,  ঘরবাড়ি, বাগ বাগিচা, গরু, জায়গা জমি। ওই রাক্ষুসী নদী সব কেড়ে নিয়েছে। এটা আমার নিয়তি। আজ জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসে গেছি। সৃষ্টিকর্তার কাছে একমাত্র প্রার্থনা সাখা সিঁদুর নিয়ে যেন মরতে পারি। ছল ছল চোখে কথা গুলো বলছিলেন অন্নাদেবী। তাদের একটি মাত্র মেয়ে থাকে মালোপাড়ায়। মাঝে মধ্যে প্রাণের টানে ছুঁটে যায় সেখানে। আজ হঠাৎ দেখা হয়ে গেল সুখেন দম্পতির সাথে। গল্পকথায় বাবু, আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে। এখন আর নদীতে আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। যেতে হবে বহুদূর। যদি বেঁচে থাকি কথা হবে অন্যদিন নৌকার দড়ি খুলতে খুলতে বলছিল সুখেন বিশ্বাস। এভাবেই জীবন যুদ্ধে টিকে থাকার লড়াইয়ে ছুটে চলেছেন নদীর নানা প্রান্তে। স্বার্থের এই দুনিয়ায় তাদের আপন বলে কেউ নেই। তাদের নেই কোন মাথাগোঁজার ঠাঁই। অনেক স্বপ্ন নিয়ে বিগত সরকারের আমলে একটি ঘর পাওয়ার জন্য দিয়েছিলেন দরখাস্ত। তদবির আর অন্যদের ভিড়ে জোটেনি তার একখানা ঘর। জীবনের সন্ধিক্ষণে এসে শরীর আর সায় দেয় না। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া সুখেনের নদীতে মাছ ধরাও কঠিন হয়ে পড়েছে। ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ তাদের মনের আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরেছে। ভাগ্যের নির্মমতায় কাহারও উপর আর ভরসা নেই তবুও সরকারি ভাবে বা কোন মানবাধিকার সংস্থা, ব্যক্তি যদি তাদের মাথাগোঁজার ঠাঁই করে দিতো তাহলে জীবনের সন্ধিক্ষণে এসে নিশ্চিতে মরে শান্তি পেত সুখেনেরা।
ভেসে যায় সে—
সুখেন বিশ্বাস, এক নাম নয়,
এক শব্দ—
যার প্রতিধ্বনি কপোতাক্ষের বাঁকে বাঁকে বয়ে চলে
যেমন বয়ে চলে কোনো প্রাচীন বেদনার সারস্বত সূত্র।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
© সংযোগ প্রতিদিন
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট