কালিগঞ্জ (ঝিনাইদহ) : ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে বারবাজারে আসাদুজ্জামান নামে এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে শারীরিক নির্যাতন ও ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় শুক্রবার আটজনের নাম উল্লেখ করে কালীগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগি আসাদুজামানের শ্যালক মো. সৌরভ। অভিযোগে উল্লেখিত আটজনের মধ্যে তানভির রনি ঝিনাইদহ জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি হিসাবে দ্বায়িত্ব পালন করছেন।
ঘটনাটি ঘটেছে ১১ জুন মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮ টার দিকে উপজেলার বাদেডিহি গ্রামে। অপহৃত আসাদুজামান ফরিদপুর জেলার মধুখালী থানার ডুমাইন গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ব্যবসার সুবাদে কালীগঞ্জ উপজেলার বাদেডিহী এলাকার বাসিন্দা সাবেক সেনা সদস্য আসাদের বাড়ি ভাড়া নিয়ে বসবাস করছিলেন।
লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, অপহরণের ঘটনাটি ঘটে গত ১১ জুন রাত সাড়ে ৮ টার দিকে। উপজেলার বারবাজারের বাদেডিহি গ্রামের তার বর্তমান ভাড়া বাসার সামনের রাস্তার উপর অবস্থানকালে বাদেডিহী গ্রামের মৃত আনিসুর রহমানের ছেলে আঃ করিম এবং বাদুরগাছা গ্রামের আয়ুব হোসেনের ছেলে সবুজ একটি মটরসাইকেল এসে দেশিয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক আসাদুজ্জামানকে মটরসাইকেলে তুলে ঠিকডাঙ্গা দাসপাড়া মাঠে নিয়ে যায়। সেখানে আগে থেকে উপস্থিত থাকা পিরোজপুর গ্রামের মৃত ভোলা জর্দ্দারের ছেলে শরিফুল, মিঠাপুকুর গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমান ফিজুরের ছেলে তানভির রনি, বাদুরগাছা গ্রামের মৃত নান্নুর ছেলে রিয়াজ, ঠিকডাঙ্গা গ্রামের স্বপন, পিরোজপুর গ্রামের ইয়াছিন ও হামিদ ড্রাইভারসহ অজ্ঞাত ৩ থেকে ৪ জন শাহ্ আসাদুজ্জামানকে নির্যাতন করে। এসময় তারা ২ লাখ টাকা দাবি করে।
রাতেই অপহরণকারীদের দাবি অনুযায়ি বিকাশ নম্বরে ০১৮৩০০৪৮৩৫১, ০১৯১৫২৮০১৫১, ০১৮১১১৯৯৪৪৩, ০১৭১২০২৭৭৭৬, ০১৭১১৯৭২৩৩৫ ও ০১৮২০৬৩২৯১২ নম্বরে ২ লাখ টাকা দেওয়া হয়। এরপর তারা উপজেরা রঘুনাথপুর বাজারের বিকে ষ্টোর থেকে ০১৭৭৫৩০১০৮৫ নম্বর এজেন্ট বিকাশ থেকে ক্যাশ আউট করে নেয়। টাকা পাওয়ার পর ওই রাতেই তারা এ বিষয়ে কাউকে কিছু না বলার জন্য খুনের হুমকি দিয়ে আসাদুজ্জামানকে উপজেলার ঠিকডাঙ্গা দাসপাড়া ফাকা মাঠের মধ্যে ফেলে রেখে যায়।
জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি তানভির রনি জানান আসাদুজ্জামান ফরিদপুর মধুখালী আওয়ামীলীগের একজন চিহ্নিত শীর্ষ সন্ত্রাসী এবং হত্যা মামলার আসামি। ৫ আগষ্টের পর তিনি গাঢাকা দিয়ে বারোবাজার এসে ভাড়া বাসায় বসবাস করছিলেন। আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা ষড়যন্ত্র। স্থানীয় বিএনপির মধ্যে একটি অংশের নেতারা ওই ব্যক্তিকে আশ্রয় দিয়েছিলেন। স্থানীয় ছেলেরা তার পরিচয় জানতে পেরে পুলিশে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এতে বিএনপি নেতা অখুশি হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দিয়েছে। পুলিশ তদন্ত করলে সত্য উন্মোচিত হবে। তবে, ঘটনার রাতে আমি যশোরে ছিলাম বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এ ঘটনায় ঝিনাাইদহ জেলা ছাত্রদলের সাধারন সম্পাদক মুশফিকুর রহমান মানিক জানান, তানভির রনি জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি, তবে বিষয়টি আমার জানা নেই। অপহরণ ও মুক্তিপন আদায়ের ঘটনা যদি সত্য হয় তাহলে আবশ্যই তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কালীগঞ্জ থানার অফিসার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শহিদুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, এই বিষয়ে আমরা একটি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগটি স্থানীয় বারোবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জাকারিয়া মাসুদকে তদন্তের দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অভিযোগে উল্লেখিত নম্বরগুলো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্তে যদি প্রমানিত হয় তাহলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
বারোবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জাকারিয়া মাসুদ জানান, আমি অভিযোগটি হাতে পেয়েছি। এখন তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হবে। তখন তারা আইনি ব্যবস্থা নেবেন।