কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: পঙ্গুত্বের কাছে হার না মানা অমরেশ অধিকারীকে নতুন হাত চালিত হুইল চেয়ার উপহার দিলেন খোকসা উপজেলা নির্বাহী অফিসার অতিরিক্ত রায় দীপন। হাটে-ঘাটে, হাসপাতাল করিডোরে ও ধর্মীয় উৎসব আঙ্গিনায় বাদাম-চানাচুর বিক্রি করেন। কিন্তু ভিক্ষা করতে রাজি নন তিনি। শারীরিক অক্ষমতার ফলে চানাচুর তৈরি করতে পারেন না। তাই আয়-রোজগার খুব কম হয়। তাদের ৫ জনের জীবন সংসার চলে অনাহারে-অর্ধাহারে।
কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার জানিপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের একতারপুর গ্রামের মৃত অভিমান্য অধিকারীর ছেলে প্রতিবন্ধী অমরেশ অধিকারী। সাত বছর বয়সে পোলিও রোগে তার দুটো পা হারিয়ে পঙ্গু হয়ে যায়। এভাবে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে দশম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। বছর দশেক আগে তার বাবার মৃত্যুর পর সংসারের দায়িত্ব এসে পরে তার কাঁধে। পঙ্গুত্বের অভিশাপ নিয়ে জীবন যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরেন। বাবার চানাচুর তৈরির পেশাকে বেছে নেন। গ্রামের রাস্তার মোড়ে চানাচুরের দোকান দেন। সংসারের চাহিদা বাড়ায় ভ্যানে চড়ে গ্রামের হাট-ঘাট ও ধর্মীয় উৎসব আঙ্গিনায় দোকান দিতে শুরু করেন। ভ্যান ভাড়া দিয়ে পোষায় না। কয়েক বছর আগে স্থানীয় ভাবে কাঠের চাকার তৈরী ছোট হুইল চেয়ারে দোকানের মালামাল নিয়ে চলাফেরা করতো। পরে স্থানীয় এক ব্যক্তি বাই-সাইকেলের যন্ত্রাংশ দিয়ে একটি হুইল চেয়ার বানিয়ে দিয়েছিল সেটিও অকেজো হয়ে যায়।
প্রতিবন্ধীর বৃদ্ধা মা সবিতা রানী, দুই সন্তান ও স্ত্রী পঞ্চমী রানী শর্মাকে নিয়ে বাবার ভিটার পুরাতন ঘরে বসবাস করছেন। এক কক্ষের পুরোনো দিনের ইটের তৈরী ঘরটিও জীর্ণ হয়ে গেছে। সামান্য বৃষ্টিতে ঘরের চালা দিয়ে পানি পড়ে সব ভিজে যায়। নিজের মা সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে অনেক রাত তাদের বসে কাটাতে হয়। অমরেশের নিজের চলাচলের চাকাওয়ালা হুইল চেয়ারটি অতিশয় পুরাতন হয়ে গেছে। এর পেছনে মেরামত ব্যয়ও বেড়ে গেছে। গাড়িটি খারাপ থাকায় ঠিকমত হাট ঘাটে যেতে পারছে না। তবুও সংসারের সবার খাবারের যোগান দিয়ে গিয়ে তাকে জলকাঁদা মাড়িয়ে ওই গাড়ি ঠেলে চলাচল করতে হচ্ছে।
এ সকল বিষয়ের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রতিবন্ধী অমরেশকে নিয়ে জীবনমুখী একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তারই ফলশ্রুতিতে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলা মানবিক নির্বাহী অফিসার প্রদীপ্ত রায় দীপন উপজেলা সমাজসেবা অফিসার জহুরুল ইসলাম এর সাথে আলাপ করে প্রতিবন্ধী কল্যাণ ফান্ডের অর্থে প্রতিবন্ধী অমরেশের জন্য হাত চালিত হুইল চেয়ার উপহার দেওয়া হয়।
প্রতিবন্ধী অমরেশের মা জানান, তার আরও চার ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছে। তারা সবাই অভাবী। অমরেশের চিকিৎসা করতে কলিকাতা পর্যন্ত গিয়েছেন। সেখানে চিকিৎসা দিয়ে মাজা থেকে হাত পর্যন্ত উন্নতি হয়েছিল। পরে আর টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারেননি। ছেলের চিকিৎসা করতে গিয়ে তিনি সর্বশান্ত হয়েছেন। ছেলে চলাচল ও ব্যবসার মালামাল আনা নেওয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের কমকর্তাদের কাছে একটি ব্যটারী চালিত হুইল চেয়ারের দাবি করেন তিনি।
প্রতিবন্ধী অমরেশ জানায় , পুরোনো লক্কর-ঝক্কর হুইল চেয়ারে বসে চালাতে খুব কষ্ট হত। এখন থেকে আর এত কষ্ট করা লাগবে না। নতুন হুইলচেয়ারে করে আমি গাড়ি চালিয়ে বিভিন্ন বাজার ও জায়গায় গিয়ে চানাচুর ভাজা, বাদাম ভাজা বিক্রি করতে পারব।