ডেস্ক রিপোর্ট : জুলাই গণঅভ্যুত্থানে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাইদ হত্যা মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রতিবেদন দাখিল করেছে তদন্ত সংস্থা। তদন্ত প্রতিবেদনে আবু সাঈদ হত্যার সঙ্গে ৩০ জনের সম্পৃক্ততার বিষয় উঠে এসেছে।
আজ বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রসিকিউশনে এই মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ প্রতিবেদন দাখিল করা হতে পারে বলে জানা গেছে।
এর আগে গত ১৫ জুন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাইদ হত্যা মামলায় আগামী ১৪ জুলাই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে এই মামলার শুনানির জন্য ২৬ জুন দিন নির্ধারণ করেন ট্রাইব্যুনাল।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারকের বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
আদালতে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন, বি এম সুলতান মাহমুদ ও এস এম মঈনুল করিম। আসামি পক্ষে ছিলেন আইনজীবী রাশেদুল হক খোকন ও দেলোয়ার হোসেন সোহেল।
গত ৯ এপ্রিল ট্রাইব্যুনাল এই চারজনকে হাজির করার নির্দেশ দেয় এবং ১৫ জুনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল।
প্রসিকিউশন ট্রাইব্যুনালকে জানিয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন আবু সাঈদ। এই ঘটনায় সরাসরি জড়িত ছিলেন সাবেক এসআই আমির হোসেন ও কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়।
এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শরিফুল ইসলাম ও ছাত্রলীগ কর্মী ইমরান চৌধুরী আকাশসহ আরও অনেকে সহায়তা ও উসকানি দিয়েছেন।
ওই চার আসামি অন্য মামলায় আগে থেকেই গ্রেফতার ছিলেন।
২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আন্দোলনের মধ্যে ১৬ জুলাই রংপুরে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ নিহত হন।
সেদিন সাঈদ দুই হাত প্রসারিত করার মধ্যে তাকে গুলি করার ভিডিও সংবাদ মাধ্যমে প্রচার হলে ছাত্র- জনতা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। সেদিন থেকেই সারাদেশে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। পরদিন থেকে সারা দেশে ডাকা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করা হয়। এরপর একের পর এক মৃত্যু, সরকারি সম্পত্তিতে হামলা, আগুনের মধ্যে ১৯ জুলাই কারফিউ দিয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি শেখ হাসিনা সরকার। তুমুল গণ-আন্দোলনের মধ্যে ৫ আগস্ট পতন হয় টানা সাড়ে ১৫ বছরের আওয়ামী লীগের শাসন, শেখ হাসিনা তার বোন শেখ রেহানাকে ভারতে পালিয়ে যান।
সরকার পতনের আন্দোলনে সরকারি হিসাবে সাড়ে আটশর মতো মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এসব ঘটনায় পতিত সরকারের নেতৃত্বে থাকা সদস্য এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্তা এবং মাঠ পর্যায়ে যাদের বিরুদ্ধে গুলি করার অভিযোগ আছে, তাদের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যে ট্রাইব্যুনালটি মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের জন্য ২০১০ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছিল।