মাদারীপুর অফিস : আজ কবি ও লোক সংস্কৃতি গবেষক সুবল বিশ^াসের ৬৮ তম জন্মদিন। সুবল বিশ্বাস ১৯৫৭ সালের ৫ জুলাই ফরিদপুর সদর উপজেলার ঈশানগোপালপুর গ্রামে এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা চুনীলাল বিশ্বাস এবং মাতা ননীবালা বিশ্বাস। তার পিতা ছিলেন ডাক বিভাগের ডাক হরকরা। ২ ভাই ২ বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। তিনি ১৯৬৮ সালে ঈশান গোপালপুর প্রাইমারী স্কুল থেকে প্রাথমিক, ১৯৬৯ সালে রাজবাড়ি জেলার বালিয়াকান্দির মাজবাড়ি হাই স্কুল (সোনাপুর) থেকে ৬ষ্ঠ শ্রেণি, ১৯৭০ সালে ঈশান গোপালপুর আশুতোষ বিদ্যাপীঠ থেকে সপ্তম শ্রেণি পাস করে ১৯৭১ সালে ফরিদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হন।
সুবল বিশ্বাস ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ফরিদপুর সদরের শিবরামপুর আর.ডি একাডেমিতে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে ১৯৭৪ সালে দ্বিতীয় বিভাগে এসএসসি পাস করেন। ১৯৭৬ সালে ৮ মাস ঈশান ইনস্টিটিউশন প্রতিষ্ঠাকালে তিনি শিক্ষকতা করেন। একই সময় তিনি ‘স্বনির্ভর বাংলাদেশ’ ইউনিসেফ প্রকল্পে নিজ গ্রামে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭৭ সালে কলেজে অধ্যয়নকালে ফরিদপুর থেকে প্রকাশিত জাগরণ পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক আবদুর রাজ্জাকের কাছে সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি নিয়ে সাংবাদিকতা পেশায় জড়িয়ে পড়েন। সেই থেকে লেখালেখি শুরু। পাশাপাশি অভাবের সংসারে জোড়াতালি দিতে কাজ শুরু করেন শহরের থানা রোডের ওরিয়েন্টাল প্রিন্টিং ওয়ার্কস নামে একটি ছাপাখানায়। এ কারণে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্তই লেখাপড়ার ইতি টানতে হয়েছে তাকে। অভাবের কারণে তিনি ১৯৮৪ সালে কাজের সন্ধানে ঢাকায় চলে যান এবং মগবাজার মেঘলা আর্ট প্রেস নামে একটি ছাপাখানায় ২ বছর চাকরী করেন। ১৯৮৬ সালের ডিসেম্বরে মাদারীপুরে চলে আসেন এবং জমাদার কোম্পানীর পেট্রল পাম্প ও পরিবহনে চাকরী নেন।
আশির দশক থেকে তার লেখালেখি জোয়ার লক্ষ্য করা যায়। প্রচার বিমূখ এই লেখকের অসংখ্য ছড়া, কবিতা, প্রবন্ধ, নিবন্ধ, ফিচার ও ইতিহাস-ঐতিহ্য ভিত্তিক প্রচুর লেখা স্থানীয় এবং জাতীয় পত্র-পত্রিকা ও সংকলিত বহুগ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছে। ২০১৮ সালে ‘সভ্যতার মানচিত্র’ তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ২০১৯ সালে প্রকাশ পায় আরো একটি কাব্যগ্রন্থ ‘মেঘের বাড়ি অন্য পাড়ায়’। ২০১৬ সালে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা’ মাদারীপুর জেলার তথ্য সংগ্রাহক। এ ছাড়া বেশকিছু পান্ডুলিপি অর্থের অভাবে অপ্রকাশিত রয়ে গেছে।
এর মধ্যে ‘ভাটি অঞ্চলের লোকাচার’ (লোকসংস্কৃতি গ্রন্থ), ‘ভাষা আন্দোলন ও বাংলা ভাষার উৎপত্তি’ (ইতিহাস গ্রন্থ), ‘নীলপদ্ম সরোবর’ (কাব্যগ্রন্থ), ‘কালের শঙ্খধ্বনি’ (সাংবাদিকতায় লোকসংস্কৃতি) এবং ‘ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি’ (নির্বাচিত ফিচার গ্রন্থ), মাদারীপুর জেলার ইতিহাস। তার লেখা দুই শতাধিক প্রবন্ধ বিভিন্ন সাপ্তাহিক এবং দৈনিক পত্রিকায় ও দেশের অনেক স্মরণিকায় প্রকাশ পেয়েছে। তার উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধের মধ্যে ‘মাদারীপুর জেলার সাংস্কৃতিক মনীষী’, ‘মাদারীপুরে নজরুল’, মাদারীপুরের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য’। তার ব্যাপক পরিচিতি এনে দেয় কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘সভ্যতার মানচিত্র’ নিয়ে কবিতালেখ্য পরিবেশনা ধৈবত আবৃত্তি ভূমির প্রতিষ্ঠাতা বিশিষ্ট আবৃত্তিশিল্পী ইমরান সাগর। ২ঘন্টার অনুষ্ঠানটি মাদারীপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে পরিবেশিত হয়। দর্শনীর বিনিময়ে ৬০জন শিল্পীর অংশগ্রহণে ইমরান সাগরের পরিবেশনা ব্যাপক সাড়া ফেলে এবং প্রশংসিত হয়।
১৯৮৬ সাল থেকে তিনি মাদারীপুর শহরে বাসা ভাড়া করে বসবাস করছেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তার অবদান অনস্বীকার্য। তিনি একজন সফল নাট্যাভিনেতাও। সুবল বিশ্বাস বর্তমানে ছড়া ও কবিতা রচনার পাশাপাশি লোকসংস্কৃতি (ফোকলোর) ও ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে লেখালেখি করছেন। তিনি মাদারীপুর থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক আড়িয়ালখাঁ ও আনন্দবাংলার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। বেশকিছু সাহিত্য পত্রিকা ও স্মরণিকা প্রকাশনার সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি (১৯৯৩) দৈনিক জনকণ্ঠের জন্মলগ্ন থেকে মাদারীপুর জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত। এ ছাড়া তিনি বিভিন্ন সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সভাপতি, সহ-সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। সাহিত্য কর্মের স্বীকৃতি স্বরূপ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পেয়েছেন ২৫টি সম্মাননা স্মারক। এছাড়া একবার তিনি উদ্ভাস পদকে ভূষিত হন।