
বিশেষ প্রতিনিধি : খুলনা জেলার রূপসা থানাধীন হযরত খান জাহান আলী সেতু ( রুপসা সেতু) ‘র টোল প্লাজা সংলগ্ন জাবুসা এলাকায় একটি সঙ্ঘবদ্ধ দুর্ধর্ষ চোর চক্রের ব্যাপক উপদ্রব দেখা দিয়েছে। ৫ থেকে ৭ জনের কিশোর ও যুবকদের সমন্বয়ে গঠিত এই চক্রটি পেশাগতভাবেই চোর এবং নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত। এই চক্রটির কারো কারো পরিবার থেকেই অবারিত ভাবে এই অপকর্মে অনুপ্রাণিত করা হয়। এলাকায় পুলিশের কোন তৎপরতা না থাকায় চক্রটির অপকর্ম চলছে দুর্বার গতিতে। অসহায় ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ রয়েছে চরম আতঙ্কে। ৫ আগস্টের পরে এলাকায় পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা একেবারে নেই বললেই চলে। তারপরেও ২০২৪ সালের শেষের দিক পর্যন্ত চুরির ঘটনায় এলাকাবাসী পূর্ব রূপসা বাস স্ট্যান্ড পুলিশ ফাঁড়ি এবং কাজদিয়া এলাকায় বিদ্যমান রূপসা থানায় অভিযোগ, জিডি, এজাহার দায়ের করলেও দৃশ্যমান পুলিশি তৎপরতা না থাকায় এবং আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোন উন্নতি না হওয়ায় – ভুক্তভোগীরা এখন আর পুলিশের কাছে যেতে চায় না। রূপসা থানায় জিডি, অভিযোগ, এজাহার দায়ের করতে গেলেও ডিউটি অফিসার এবং থানার কর্তা বাবুদের নানা অজুহাত ও তালবাহানায় দীর্ঘ সূত্রিতার কারণে ভুক্তভোগীরা পুলিশ ফাঁড়ি বা থানায় যাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। ফলে এলাকায় সংগঠিত অপরাধের সঠিক চিত্র যেমন পাওয়া যায় না – তদ্রুপ সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হচ্ছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে ঘুরে দেখা ও জানা যায়, ১৫ জুন থেকে ০৭ জুলাই ‘২৫ পর্যন্ত ২২ দিনে জাবুসা,রুপসা ব্রিজ টোল প্লাজা সংলগ্ন আবাসিক এলাকা, একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার রুপসা থানা আঞ্চলিক কার্যালয়, টোল প্লাজার পার্শ্ববর্তী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন ছোটখাটো দোকানপাটে অন্তত ১৮ থেকে ২০টি দুর্ধর্ষ চুরি সংগঠিত হয়েছে।
সঙ্ঘবদ্ধ চোর চক্র এই এলাকা থেকে কমপক্ষে ১০ লক্ষ টাকার মালামাল চুরি করে নিয়ে গেছে।
সরেজমিন পর্যবেক্ষণে আরো দেখা যায়, টোল প্লাজার সন্নিকটে গ্রীনবাংলা আবাসিক এলাকার হাইওয়ের পার্শ্বস্থ হাওলাদার গার্ডেনে ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকা ” দৈনিক বর্তমান সময় ” এর রুপসা থানা আঞ্চলিক কার্যালয়ে গত ১৯.০৬.২৫ তারিখ রাতে বাড়ির মেইন গেট ভেঙ্গে দ্বিতীয় গেটের দেয়াল টপকিয়ে বাড়ির ভিতরে চোর ঢুকে একটি আধুনিক এয়ার কুলার, কাস্ট আয়রনের দুইটি বিদেশি গার্ডেন টেবিল, কয়েকটি চেয়ার এবং অন্যান্য মালামাল সহ দেড় লক্ষাধিক টাকার মালামাল চুরি করে নিয়ে যায়। পত্রিকাটির খুলনা ব্যুরো প্রধান রুহুল আমিন হাওলাদার রূপসা থানায় একটি এজাহার দায়ের করেছেন যার নম্বর -০২ তারিখ ০৩.০৭.২৫। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রূপসা থানার এস আই আব্দুস সাত্তার তার সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে গত ০৪.০৭.২৫ তারিখ অপরাহ্নে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং পার্শ্ববর্তী লোকদের সাথেও কথা বলেছেন। এর আগে চুরির ঘটনা পরিলক্ষিত হওয়ার সাথে সাথে রূপসা থানার ওসি মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমানকে বিষয়টি জানালে তার নির্দেশে রুপসা বাস স্ট্যান্ড পুলিশ ফাঁড়ির এ এস আই আমিনুল ইসলাম এবং এএসআই ওয়াহিদুজ্জামান গত ২০.০৬.২৫ তারিখ অপরাহ্নে ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ ছবি ভিডিও ধারণ করে প্রয়োজনীয় প্রাথমিক আলামত সংগ্রহ করেন। কিন্তু যথাযথ পুলিশী তৎপরতার অভাবে এলাকায় চুরি ছিনতাই আরো বেড়ে গিয়েছে।
গত ০২.০৭.২৫ তারিখ রাতে গ্রীন বাংলা আবাসিক এলাকার অভ্যন্তরে মান্নান সাহেবের বাড়ির ভাড়াটিয়া মাসুম খানের ভ্যান গাড়ির ব্যাটারি ও একটি সাইকেল চুরি হয়। ঐ একই রাতে পার্শ্ববর্তী মুদি দোকানদার ফরিদের বাড়ি থেকে একটি মোবাইল ফোন ও অন্যান্য মালামাল চুরি যায়। ০৩.০৭.২৫ তারিখ রাতে গ্রীন বাংলা অফিস সংলগ্ন ভাড়াটিয়া আফজাল শেখের ঘর থেকে দুইটি মোবাইল ফোন, নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও ব্যবহার্য সামগ্রী চুরি হয়। ০৪.০৭.২৫ তারিখ রূপসা থানার এস আই আব্দুস সাত্তার সঙ্গীয় ফোর্সসহ এসব ঘটনাস্থলও পরিদর্শন করেন।
রূপসা ব্রিজ টোল প্লাজা সংলগ্ন ব্যবসায়ীরা ও ছোট দোকান পাটের মালিকরা রয়েছে মহা আতঙ্কে। রাত ১০টা/১১টার দিকে দোকান বন্ধ করে তালা দিয়ে বাড়ি গিয়ে সকালে ফিরে এসে প্রায়ই দেখা যায় তাদের দোকানের তালা ভাঙ্গা, নগদ টাকা ও মালামাল উধাও। বেশ কয়েকজন দোকানদার চোরের উপদ্রবে এখন পথে বসার উপক্রম। সরেজমিনে গিয়ে দেখা ও জানা যায় , গত ২৬.০৬.২৫ তারিখ রাতে মোঃ শুকুর সরদারের মালিকানাধীন ” ফ্রেন্ডস জোন ক্যাফে ” র তালা ভেঙ্গে নগদ টাকা ও বেশ কিছু মালামাল চুরি হয়। একই রাতে পার্শ্ববর্তী তরিকুল ইসলামের মালিকানাধীন ” তরিকুল টি স্টল ” এর তালা ভেঙ্গে চোর ঢুকে নগত টাকা এবং বেশ কিছু মালামাল চুরি করে নিয়ে যায়। ঐ একই রাতে পার্শ্ববর্তী রবিউল গাজীর মালিকানাধীন রবি টি স্টলেও তালা ভেঙ্গে নগদ টাকাও মালামাল চুরি হয়। টোল প্লাজা এলাকায় সবচেয়ে দুর্ধর্ষ চুরি সংগঠিত হয় মেজবানবাড়ী রেস্টুরেন্টের নিচ তলার গোডাউনে। গোডাউনের পিছনের দিকের দরজার কয়েকটি তালা ভেঙ্গে ২ লক্ষাধিক টাকার মালামাল চুরি হয় বলে ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়।
এলাকার “আহাদ স্টোরের” মালিক আব্দুল আহাদ জানান, “২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে আমার দোকানের টিনের চাল কেটে ভিতরে ঢুকে চোরচক্র লক্ষাধিক টাকার মালামাল চুরি করে নিয়ে গেলে আমি রূপসা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলাম, স্থানীয় ও জাতীয় পত্র-পত্রিকায় খবরও বেরিয়েছিল। রূপসা বাসস্ট্যান্ড পুলিশ ফাঁড়ির এস আই নকিব ইকবাল তদন্তও করেছিলেন। চোর চক্রের ফেলে যাওয়া আলামতের ভিত্তিতে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় তাদের দল নেতা আরব আলি গাজীকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়। পরবর্তীতে আর কোন খবর পাওয়া যায়নি। দেখা যায়, কয়েকদিন পরে আরব আলী গাজী(৩০) এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং চোর চক্রের উপদ্রব আগের চেয়েও বৃদ্ধি পেয়েছে। “
০৮.০৭.২৫ তারিখ সকালের দিকে টোল প্লাজা সংলগ্ন আবাসিক হোটেলের চুরি যাওয়া মালামালসহ সম্রাট (২৮) নামের এক চোরকে এলাকাবাসী ধরে হোটেল স্থাপনার মালিক জুয়েলের মাধ্যমে রূপসা থানার পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। এসব বিষয়ে রূপসা থানার পুলিশ বলছে, তৎপরতা অব্যাহত আছে, দ্রুতই অবস্থার উন্নতি হবে।