মাদারীপুর অফিস : সরকারি চাকরি বিধি লঙ্ঘন করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা হয়েছেন মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শাহাদাত হোসেন খান। তিনি এনসিপির শিবচর উপজেলা শাখার ১ নম্বর যুগ্ম সমন্বয়কারী। এদিকে সরকারি স্কুলের শিক্ষক এনসিপি নেতা হওয়ার খবরে এলাকাজুড়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, একজন শিক্ষক কীভাবে সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত হন।
গত ১৫ জুন শিবচর উপজেলায় এনসিপি ২১ সদস্যের একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় কমিটি। এতে প্রধান সমন্বয়কারী করা হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকা নেতা রাজু আহমেদকে। আগামী তিন মাস অথবা আহ্বায়ক কমিটি গঠনের আগ পর্যন্ত এই কমিটি অনুমোদন করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ। এক মাস আগে এনসিপির এই কমিটি গঠন হলেও সম্প্রতি বিষয়টি জানাজানি হলে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
এনসিপি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এনসিপির পদ পাওয়া শাহাদাত হোসেন খান শিবচর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের ৮৫ নং দত্তপাড়া খারাকান্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে কর্মরত। তিনি জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালীন সময় তাকে কেউ কোথায় দেখেনি। তবে ৫ আগস্টের পর থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিভিন্ন সভা সেমিনারে তাকে দেখা গেছে। হঠাৎ এনসিপির সমন্বয় কমিটিতে ১ নম্বর যুগ্ম সমন্বয়কারী হওয়ায় অনেকেই বিস্মিত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনসিপির এক নেতা বলেন, জুলাই ছাত্র জনতার আন্দোলন চলাকলীন সময় যারা শিবচরে দায়িত্বশীল ভূমিকা রেখেছে তাদের অনেকেই এই সমন্বয় কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়নি। যারা সমন্বয় কমিটিতে আছেন, তারা বেশিরভাগই বহিরাগত বলেও দাবি করেন এই নেতা।
জানতে চাইলে ৮৫ নং দত্তপাড়া খারাকান্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও এনসিপির নেতা শাহাদাত হোসেন খান বলেন, ‘এটি একটি সমন্বয় কমিটি। আমাদের দায়িত্ব দিয়েছে কমিটি করার জন্য। মূল কমিটি যখন হবে তখন তো আমি থাকবো না। আমি নাগরিক কমিটিতে ছিলাম। আর তখন দল মত নির্বিষেশে ওই কমিটিতে আমার মতো অনেকেই ছিল। সেখান থেকে এনসিপির এই কমিটি হয়ে আসছে। সরকারি চাকরি করে তো এখানে এভাবে থাকা যাবে না। আপতত আছি, পরে থাকবো না। এটা তো আর অস্বীকার করবো না। বিষয়টি আমার অথরেটিও জানে।’
সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা- ১৯৭৯ এর ২৫ (১) ধারায় স্পষ্টভাবে বলা আছে, কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী কোনো রাজনৈতিক দল বা তার অঙ্গসংগঠনের সদস্য হতে পারবেন না এবং কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারবেন না। একই ধারার ২৫ (৩) উপধারায় বলা আছে, কোনো সরকারি কর্মচারী নির্বাচন উপলক্ষে কোনো ধরণের প্রচারণায়ও অংশ নিতে পারবেন না।
শিবচর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) রবীন্দ্রনাথ দত্ত বলেন, ‘সরকারি চাকরি করে রাজনৈতিক দলে থাকা প্রশ্নই আসে না। শাহাদাত হোসেন খান নামে ওই শিক্ষক এনসিপিতে থাকার বিষয়টি আমাদের নজরে আসেনি। আমি এক মাস হলো এখানে দায়িত্বে আছি। যদি বিষয়টি সত্যি হয় তাহলে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’