শ্যামনগর সাতক্ষীরা : সুন্দরবনে জুড়ে আবারও বেড়েছে দস্যু আতঙ্ক। দস্যু বাহিনীর আত্মসমর্পণের কারণে ভয়ানক দস্যু আতঙ্ক কাটিয়ে কিছুদিন স্বস্তিতে ছিল বনের ওপরে নির্ভরশীল মানুষেরা। কিন্তু আবারও নতুন করে মাথাচাড়া দিতে শুরু করেছে দস্যুরা। এতে সুন্দরবনের মূর্তিমান আতঙ্ক বনদস্যু বাহিনীর কারণে বনে যেতে ভয় পাচ্ছেন বনজীবীরা।বনবিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র বলছে, সুন্দরবনের বনদস্যুরা কয়েক দফায় আত্মসমর্পণ করে আলোর পথে ফিরেছিল। ২০১৬ সালে সুন্দরবনের সাতটি বনদস্যু দল একসঙ্গে আত্মসমর্পণ করে। সে সময় ৩২জন বনদস্যু অস্ত্র সমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার অঙ্গীকার করে। এরপর ২০১৮সালের পহেলা নভেম্বর ৯টি বনদস্যু বাহিনীর ৫৭জন বনদস্যু আত্মসমর্পণ করে। পরে আরেক দফায় ২০১৯সালের পহেলা নভেম্বর আরো ২৫জন বনদস্যু আত্মসমর্পণ করে। প্রায় শতাধিকের বেশি বনদস্যু আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে, যার কারণে সুন্দরবন দস্যুমুক্ত হওয়ার পথে অগ্রসর হয়। তবে গত কয়েক মাসে জেলে বাওয়ালিদের অপহরণের মতো ঘটনাগুলো আবারো জানান দিচ্ছে সুন্দরবনে নতুন দস্যু বাহিনীর উত্থান ঘটেছে।অনুসন্ধানে জানা যাচ্ছে, গত তিন মাসে সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ৫০-৬০ জনেরও বেশি জেলে ও মৌয়াল অপহরণের শিকার হয়েছেন। মুক্তিপণের জন্য তাদের কাছে দাবি করা হয়েছে অন্তত ১০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা। বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে কোস্টগার্ড সফল অভিযানের মাধ্যমে জেলে বাওয়ালিদেরকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে।দৈনিক পত্রদূত পত্রিকায় ২১ এপ্রিল তারিখে ‘সুন্দরবনের ডাকাত করিম বাহিনীর ২সদস্য আটক, জিম্মি থাকা দুই জেলে উদ্ধার’ শিরোনামে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়Ñকোস্ট গার্ডের অভিযানে অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ সুন্দরবনের দুর্ধর্ষ ডাকাত করিম শরীফ বাহিনীর ২সহযোগী আটক করা হয়েছে। একইসঙ্গে ডাকাতদের হাতে জিম্মি থাকা ২জন জেলে উদ্ধার করেছে তারা। অপর দিকে কোস্ট গার্ডের সাঁড়াশী অভিযানে সুন্দরবনের আড়শিবসা নদী সংলগ্ন এলাকা থেকে সুন্দরবনের কুখ্যাত ডাকাত করিম শরীফ বাহিনীর নিকট জিম্মি থাকা ২জেলেকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত জেলেরা গত ৮এপ্রিল থেকে ডাকাত করিম শরীফ বাহিনীর কাছে জিম্মি ছিলো বলে জানা যায়।বনজীবীদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হচ্ছে, বর্তমানে বিভিন্ন নামে নতুন বনদস্যু বাহিনী গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে করিম শরীফ বাহিনী, দয়াল বাহিনীসহ অন্তত ৫-৭টি ডাকাত দল রয়েছে। নৌকায় করে এসব বনদস্যুরা সুন্দরবনের গহীনে অবস্থান করে। বনের বিভিন্ন পয়েন্টে রয়েছে এদের ডেরা। সুযোগ বুঝে এই বনদস্যুরা কখনো মাছ ধরার ট্রলার কিংবা বনজীবীদের জিম্মি করে। অপহরণের পর বনদস্যু বাহিনীর ডেরায় নিয়ে করা হয় অমানসিক নির্যাতন। অনেকেই মুক্তিপণ দিয়ে সেখান থেকে ছাড়া পেয়েছেন। গত ১০এপ্রিল সুন্দরবনের গহীন হতে বনদস্যু করিম শরীফ বাহিনীর জিম্মি থেকে ৬নারীসহ ৩৩জেলেকে উদ্ধার করে কোস্টগার্ড। এর আগেও অস্ত্রসহ কয়েকজন দস্যুকেও গ্রেপ্তার করে কোস্টগার্ড।বনদস্যুরা সাধারণত বনজীবী কিংবা জেলে বাওয়ালিদের ছদ্মবেশে সুন্দরবনের প্রবেশ করে দস্যুতায় জড়িয়ে পড়ে। এসব বনদস্যুদের ডাটাবেজ তৈরি করে তাদেরকে ডিজিটালাইজড করতে হবে, যাতে সহজেই তাদেরকে চিহ্নিত করা যায়। এসব দস্যুদের চিহ্নিত করে তাদের সুন্দরবনে যাওয়া আটকাতে হবে। পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াতে হবে এবং পরিবারের প্রতিও নজর রাখতে হবে। সুন্দরবনের বিভিন্ন পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল এবং নজরদারি বাড়াতে হবে। তাদেরকে বিকল্প কর্মসংস্থানের সাথে যুক্ত করতে হবে। সুন্দরবনের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য এটি শুধু একটি নিরাপত্তার ইস্যু নয়, বরং এটি অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত সংকটের দিকেও ইঙ্গিত করছে। যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়া হয়, তবে এই প্রাকৃতিক সম্পদ ও এর উপর নির্ভরশীল মানুষের ভবিষ্যৎ আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।