তালা : তালা উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে দিগন্ত জুড়ে এখন সবুজের সমারোহ। যেদিকে চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। সবুজ ধানে দখিনা বাতাসে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। বৈরী আবহাওয়ার কারণে আমন চাষ না হওয়াতে কৃষক আগে থেকেই বোরো চাষাবাদে মনোযোগী ছিল। এদিকে বোরো চাষে বাম্পার ফলনের আশায় এবার বুক বেঁধেছে কৃষকরা। বিগত বছরের চেয়ে এ বছর অধিক জমিতে বোরো চাষাবাদ হয়েছে। এ বছর চাষাবাদের শুরুতে বৃষ্টিপাত কম থাকার কারণে উপজেলার সকল এলাকায় ব্যাপকহারে বোরো চাষাবাদ হয়েছে। অনেক নিচু এলাকার জমিতে কৃষক সেচের মাধ্যমে চাষাবাদ করেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কারণে রোগবালাই অনেকাংশে কম হয়েছে। বিগত কয়েক বছর ব্লাস্টের আক্রমনে তালার কৃষকের স্বপ্ন ভঙ্গ হযেছে। তাই এ বছর অনেক আগেভাগেই জমিতে ব্লাস্ট প্রতিরোধে স্প্রে কার্যক্রম চালাচ্ছে কৃষক। এখনও পর্যন্ত কৃষকের জমিতে ব্লাস্টের আক্রমনের তেমন কোন তথ্য পাওয়া যাযনি বলে কৃষকেরা জানিয়েছেন।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ইরিবোরো চাষে দিগন্ত জুড়ে সবুজ ফসলের সমারোহ। কোথাও আবার ধানে সোনালী রঙ আসতে শুরু করেছে। উপজেলার শতকরা ৮০জন সরাসরি কৃষিকাজের সাথে জড়িত। কৃষিকাজ করেই তারা জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার প্রায় ১৯ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হলেও ধানের মূল্য বেশি হওয়াতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৫০০ হেক্টরের বেশি জমিতে বোরো চাষাবাদ হয়েছে। কপোতাক্ষ নদ খননে জলাবদ্ধতা না থাকায় এ বছর উপজেলার ধানদিয়া, নগরঘাটা, সরুলিয়া, কুমিরা, খলিষখালী, তেঁতুলিয়া তালা, জালালপুর, মাগুরা, খলিলনগর, সরুলিয়া, খেশরাসহ সর্বত্রই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে বোরো চাষাবাদ হয়েছে।
উপজেলার লালচন্দ্রপুর গ্রামের ধানচাষী শওকাত হোসেন জানান, আবহাওয়া ও প্রকৃতির কারণে এবছর এই ব্লকে গতবারের চেয়ে বর্তমানে ধান ভালো বোঝা যাচ্ছে। এ বছর আমার ব্লকে ব্রি-ধান-২৮ বেশ ফলেছে। বর্তমানে আবহাওয়া ভালো, ধান ঘরে না উঠা পর্যন্ত কিছুই বলা যাচ্ছেনা। ব্লাস্ট প্রতিরোধে এমিস্টার টপ, ট্রুপার স্প্রে করেছি। ধানে সোনালী রঙ আসা শুরু হযেছে। ঈদের পর কাটা যাবে।
লক্ষণপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রহমান জানান, এ বছর আমাদের এলাকায় ধানের ফলন খুব ভালো দেখা যাচ্ছে, জমিতে সব ধরনের পরিচর্যা করেছি ধান খুবই ভালো। যদি এভাবে শেষ নামে আবহাওয়া ভালো থাকে তাহলে বাম্পার ফলন হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
খলিষখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সাবির হোসেন জানান, গত বছরের তুলনায় এবছর ধান ভালো ও রোগবালাই কম আছে। তাছাড়া উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সব সময় কৃষকের পাশে থেকে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। তবে ধান কেটে ঘরে না তোলা পর্যন্ত কৃষকের চিন্তার শেষ নেই।
তালার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কল্যাণ কুমার পাল বলেন, ‘ইরি-বোরো মৌসুমে কৃষক যাতে লাভবান হয় সে জন্য আমরা সার্বক্ষণিক নজর রাখছি ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। যেখানেই সমস্যা দেখা যাচ্ছে সেখানেই দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছি। প্রাকৃতিক কোন দূর্যোগ না হলে ধানের বাম্পার ফলন আশা করা যায়। তবে এ বছর কৃষকের তৎপরতার কারনে পোকামাকড় অনেকাংশে কম লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ব্লাস্ট প্রতিরোধে কৃষক অনেক সচেতন।
তালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাজিরা খাতুন জানান, এবছর আবহাওয়া ভালো থাকার কারণে অনেক এলাকায় চাষাবাদ হয়েছে। এবছর উপজেলায় ব্রি-ধান ২৮ বেশি পরিমান জমিতে চাষাবাদ হয়েছে, তাছাড়া ব্রি ৮৮, শুভলতা, ৬৭, বিনা-১০হাইব্রিড ধানের চাষ ও কিছু এলাকায় লবণ সহিষ্ণু ধান চাষাবাদ হয়েছে। ‘অধিক ফলনের জন্য পরিমিত সার ব্যবহার, পানি সাশ্রয় এবং সার্বিক পরিচর্যায় কৃষকদের সচেষ্ট হতে আমরা সব সময়ই পরামর্শ দিয়ে আসছি। কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করায় এখনো পর্যন্ত রোগবালাই কিছুটা কম আছে। ব্লাস্ট রোগ দমনে আগাম পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। ফলে তিনি আশা করেন, এবার রেকর্ড পরিমাণ জমিতে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হবে।