1. news@sangjogprotidin.online : ADMIN : ADMIN ADMIN
  2. info@www.sangjogprotidin.online : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন :
বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ০২:১৪ পূর্বাহ্ন
বিজ্ঞপ্তি :
জরুরী সাংবাদিক নিয়োগ চলছে আপনার কাছে একটি দুর্দান্ত সুযোগ! "সংযোগ প্রতিদিন" সংবাদপত্রে জরুরী ভিত্তিতে সাংবাদিক নিয়োগ চলছে।

সুন্দরবনের জানা-অজানা বিভিন্ন ইতিহাস নিয়ে জানতে হবে নতুন প্রজন্মকে পর্ব ৩৩

  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ৮ জুলাই, ২০২৫

 শ্যামনগর।প্রতিনিধি সাতক্ষীরা ‌সুন্দরবনের কথা মনে হলেই সুন্দরবনের হরিনের কথা মনে পড়ে যায়। অপুর্ব সুন্দর, টানা টানা চোখ, মায়াবী চাহনি, গুনে গুনানিত। সুন্দরবনের হরিণ মানুষের মনকে এক পলকে কেড়ে নেয়। হরিণেরা নিশাচর বা দিবাচর। ঘাস, লতাপাতা ও ফুলফল এদের প্রধান খাদ্য। এরা ছোট ছোট দলে বাস করে। এক-দুই বছরেই যৌনতাপ্রাপ্তি ঘটে। সাত-আট মাস গর্ভধারণের পর একটি, দৈবাৎ দুটি বাচ্চা প্রসব করে। সুন্দরবনে দু-ধরনের হরিণ আছে যথা চিত্রল হরিণ ও মায়া হরিণ। বন্য প্রাণীর সংখ্যার দিক দিয়ে সুন্দরবনে হরিণের সংখ্যা বেশী। হরিণ Artiodactyla বর্গের Cervidae গোত্রের রোমন্থক একদল স্তন্যপায়ী। গোত্রের সব সদস্যই স্বভাব ও গড়নের দিক থেকে প্রায় অভিন্ন। পুরুষ হরিণের মাথায় থাকে এক জোড়া শিং। এগুলি প্রথমে কোমল ভেলভেট-এর মতো রোমশ চামড়া দিয়ে ঢাকা থাকে এবং পরে পরিণত বয়সে চামড়া শুকিয়ে যায় ও এক সময় খসে পড়ে।বাংলাদেশের কয়েক প্রজাতির হরিণের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর ও পরিচিত প্রজাতি হলো চিত্রা হরিণ (C. axis)। এর হলুদ, হালকা বা গাঢ় বাদামি পিঠ জুড়ে থাকে সাদা রঙের গোল গোল ফোঁটা। এদের আবাস প্রধানত সুন্দরবন। এক সময় সিলেটের বনাঞ্চলে নাত্রিনি হরিণ (hog deer, C. porcinus) দেখা গেলেও বাংলাদেশে এটি এখন আর টিকে নেই। মায়াহরিণ (Muntiacus muntjac) আকারে সবচেয়ে ছোট। সুন্দরবনের চিত্রা হরিণ ছাড়া বাংলাদেশের অন্য সবগুলি হরিণের সংখ্যা মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে। যদৃচ্ছা শিকার, মানুষের হস্তক্ষেপ ও আবাসভূমি ধ্বংসের জন্য বনের এসব সুদর্শন প্রাণী আজ বিপন্ন।হরিণেরা নিশাচর বা দিবাচর। ঘাস, লতাপাতা ও ফুলফল এদের প্রধান খাদ্য। এরা ছোট ছোট দলে বাস করে। এক-দুই বছরেই যৌনতাপ্রাপ্তি ঘটে। সাত-আট মাস গর্ভধারণের পর একটি, দৈবাৎ দুটি বাচ্চা প্রসব করে।মায়াবী চিত্রলহরিণ প্রজাতিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন চিত্রা হরিণ। বিভিন্ন তথ্য মাধ্যম হতে জানতে পারি, এই হরিণকে চিত্রা হরিণ, চিত্রল হরিণ, চিত্র মৃগ, চিতল বলা হয় । বৈজ্ঞানিক নাম: ( Axis axis)। হরিণ প্রজাতি গুলোর মধ্যে সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন এই চিত্রা হরিণ। এদের (ইংরেজি ভাষায়: chital বা cheetal) নামটি এসেছে বাংলা চিত্রা বা চিত্রল থেকে যার অর্থ ফোঁটা বা ছোপযুক্ত।হরিণ সুন্দরবনের সর্বত্র বিচরণ করে। তবে সর্বত্র এদের প্রচুর দেখা যায় না। কটকা, কচিখালী, নীলকমল, কালিরচর, মান্দারবাড়িয়া ইত্যাদি এলাকায় প্রায়ই খুব কাছ থেকে হরিণ দেখা যায়, যা পর্যটকদের প্রচুর আনন্দ দেয়। দ্রুত গতির এ হরিণগুলো বেঙ্গল টাইগারের প্রধান খাদ্য। এই হরিণ ও বানরের মধ্যে একটি সুন্দর সম্পর্ক রয়েছে। করমজল দর্শনার্থী কেন্দ্রে বেশ কিছু চিত্রল হরিণ দর্শনার্থীদের আনন্দ দেবার জন্য বেড় দিয়ে ঘিরে রাখা আছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভৃমি সুন্দরবনের চিত্রা হরিণ পৃথিবী বিখ্যাত।চিত্রা হরিণের দেহ লালচে বাদামী লোমযুক্ত চামড়া দ্বারা আবৃত যাতে সাদা সাদা ফোঁটা দেখা যায়। ফোঁটাগুলো ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত না থেকে আনুভূমিক রেখার উপর অনিয়মিতভাবে বিন্যাস্ত রয়েছে বলে মনে হয়। লালচে বা বাদামী চামড়ার উপর সাদা ফোঁটার সমাহার হরিণের সৌন্দর্যকে অনুপম করে তুলেছে। গলার নীচে, পেট, লেজের নিচে ও চার পায়ের ভেতরের চামড়ার বর্ণ সাদা। হাঁটু থেকে পায়ের খুর অবধি হাল্কা সাদা বা ধুসর রং রয়েছে। এদের কাঁধ বরাবর একটি গাঢ় রেখা পিঠ দিয়ে লেজ পর্যন্ত চলে গিয়েছে। পুরুষ হরিণের রেখাটি অধিক দৃশ্যমান আর গাঢ় হয়। যে সব হরিণের শিং আছে সেগুলো হলো পুরষ হরিণ। অনেক সময় স্থানীয়ভাবে এদের শিংগেল হরিণও বলা হয়। পুরুষ হরিনের শিং গুলো বড় এবং ডাল পালা থাকায় খুব সুন্দর দেখায়। শিং বিহীন চিত্রা হরিণ হলো মহিলা হরিণ। চিত্রা হরিণ দলবদ্ধ ভাবে চলাফেরা করতে ভালবাসে। এদের এক দলের মধ্যে হরিণ শাবক থেকে শুরু করে ছোট বড় বিভিন্ন সাইজের ও বয়সের হরিণ থাকে। হরিণ সাধারণ স্যাতস্যাতে ও ঠান্ডা জায়গায় বসবাস করতে ভালবাসে। এরা রাতের বেলায় পরিস্কার এবং অপেক্ষাকৃত উঁচু জায়গায় ঘুমায়। হরিণের ঘুমানোটাও একটু অদ্ভুদ ধরনের। এরা দল বদ্ধ ভাবে বৃত্তাকারে ঘুমায়। বাঘের হাত হতে রক্ষার জন্য ঘুমানোর সময় এদের মাথা গুলো চারিদিকে থাকে এবং পেছনটা একত্রে থাকে। সুন্দরবনের মত আর কোন স্থানে এক সাথে এত বেশি চিত্রা হরিণ দেখা যায় নাসুন্দরবনে প্রায় ৮০ হ্জার চিত্রা হরিণ আছে। সুন্দরবনের যে সব এলাকায় প্রচুর ঘাস ও কেওড়া বন রয়েছে সেসব এলাকায় চিত্রা হরিণের জন্য উপযুক্ত ক্ষেত্র আর কেওড়া পাতা হরিণের প্রিয় খাদ্য। চিত্রা হরিণ মূলত ঘাস খেয়ে জীবন ধারণ করে। ঘাস পাওয়া না গেলে গাছের কচি পাতা খায়। সুন্দরবনের চিত্রা হরিণ চরে জেগে উঠা কচি দুর্বা ঘাস, নলখাগড়া, উলুঘাস, মালিয়া ঘাস, বাউড়ি ঘাস খেতে বেশী পছন্দ করে। তাছাড়া তারা বাইন, গেওয়া, গরাণ, গর্জন, কাকড়া গাছের চারা, পাতা ও ছাল খায়।চিত্রা হরিণের প্রজননের জন্য নির্দিষ্ট কোন সময় নেই। উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন সময়ে চিত্রা হরিণ বংশবৃদ্ধি করে। তবে বর্ষার পূর্বে যখন সবুজ ঘাসের সমারোহ ঘটে এবং গাছের চারা ও লতা-পাতায় বন ছেয়ে যায় তখনই বাচ্চা প্রসবের প্রকৃষ্ট সময়। প্রজনন ঋতুতে পুরুষ চিত্রা হরিণ উত্তেজিত হয় ও দলে একাধিক পুরুষ হরিণ থাকলে তারা একের সাথে অপরের শিং ঠেকিয়ে দ্বন্দ্বযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। প্রচন্ড লড়াইয়ের সময় অনেক সময় শিং ভেঙে যায় বা খসে পড়ে। পুরুষ চিত্র হরিণ এপ্রিল ও জুন মাসে সর্ব্বোচ্চ প্রজননের সময়। তখন এরা মহিলা হরিনের সাথে দলে দলে চলে। পুরুষ হরিণ আকৃতিতে মহিলা হরিনের চেয়ে বেশী বড় এবং ঘাড় ও গর্দান মোটা হয়।চিত্রা হরিণ উচ্চতায় ৩ ফুট হয়। ওজনের দিক দিয়ে একটি চিত্রা হরিণ ১ মণ হতে ৩ মণ পর্যন্ত হয়ে থাকে। চিত্রা হরিণ ১০ থেকে ১৫ বছর বেঁচে থাকে। হরিণ বছরে একবার বাচ্চা প্রসব করে। চিত্রা হরিনের বয়স ৯ মাস হতে ১ বছরের মধ্যেই এরা মা হবার যোগ্যতা অর্জন করে থাকে। চিত্রা হরিণী ২১০-২২৫ দিন গর্ভধারণের পর একটিমাত্র বাচ্চা প্রসব করে। শিশু হরিণ ৬ মাস পর্যন্ত স্তন্য পান করে। স্ত্রী হরিণ ১৪-১৭ মাসে (কারো কারো মতে ১০ মাসে) বয়োঃপ্রাপ্ত হয়। অপরদিকে পুরুষ হরিণ ১৪ মাসে বয়োঃপ্রাপ্ত হয়। এদের শিং প্রতি বছর নতুন করে গজায়। বৈশাখ -জ্যৈষ্ঠ মাসে পুরাতন শিং পড়ে যায় এবং নতুন শিং গজায়।মায়া হরিণচিত্রা হরিণের পাশাপাশি সুন্দরবনে রয়েছে অসংখ্য মায়া হরিণ। ছোট আকারে লালচে বাদামী পিংগল রং এর ফোটা বিহীন এ হরিনের চলাফেরা ও জীবন ধারণ খুবই চমৎকার। ভয় পেলে মায়া হরিণ অনেকটা কুকুরের মত ঘেউ ঘেউ করে বলে এদের বার্কিং ডিয়ার বলে। সুন্দরবনের একটা পরিপক্ক মায়া হরিণের গড় ওজন ১৭ কেজি হয়। পুরুষ হরিণের উপরের চোয়ালের কেনিন দাত খুব বড় এবং দুর থেকে তা স্পষ্ট ভাবে দেখা যায়। সুন্দরবনের উত্তরাংশে মায়া হরিণ বসবাস করে। দক্ষিণ অংশে সমুদ্র উপকুলে এদের দেখা যায় না। চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল, জোংড়া, ঢাংমারী বনাঞ্চলে মায়া হরিণ অবাধে বিচরণ করতে দেখা যায়।সুন্দরবনে প্রায় ৩০ হাজার মায়া হরিণ আছে। মায়া হরিণ সাধারণত ৩ ফুট লম্বা হয়। উচ্চতা ১ ফুট ৮ ইঞ্চির মত এবং লেজ ৭ ইঞ্চির মত হয়। মায়া হরিণের শিং প্রায় ৬ ইঞ্চি লম্বা হয়। মারা হরিণ তৃণ ভৃমির প্রাণী নহে। মায়া হরিণ একা চলতে ভালবাসে। তবে ২টি মায়া হরিণ একত্রে বিচরণ করতে বিরল দেখা যায়। কখনো কখনো মহিলা ও মায়া হরিণের বাচ্চা বা মহিলা ও পুরুষ হরিণ এক সাথে দেখা যায়। মায়া হরিণ বছরের যে কোন সময় প্রজনন সক্ষম। তবে শীতকালে ডিসেম্বর/জানুয়ারী মাসে মায়া হরিণের প্রধান প্রজনের সময়। এর গর্ভধারণ কাল ছয় মাস। বর্ষার শুরুতে বাচ্চা প্রসব করে। মায়া হরিণ পোষ মানানো যায়। মায়া হরিণ ভোরে এবং গোধুলীতে ঘাস ও তৃনলতা খায়। বনের মাঝে বা ধারে ঘাস বহুল জায়গায় এরা থাকতে বেশী পছন্দ করে।১। সুন্দরবনের অপার সৌন্দর্য (প্রথম পর্বঃ সুন্দরবন নামকরণ ও ইতিহাস)২। সুন্দরবনের অপার সৌন্দর্য (দ্বিতীয় পর্বঃ ভৌগলিক অবস্থা ও ভূ-প্রকৃতি)৩। সুন্দরবনের অপার সৌন্দর্য (৩য় পর্ব: জীববৈচিত্র্য ও বন্যপ্রানী)৪। সুন্দরবনের অপার সৌন্দর্য (চতুর্থ পর্বঃ “ রয়েল বেঙ্গল টাইগার”)তথ্যসূত্রঃ বাংলাপিডিয়, উইকিপিডিয় ও বিভিন্ন ব্লগ।ভিজিট সুন্দরবন- সুন্দরবনের স্বর্গ রাজ্যে আপনাদের স্বাগতমবিস্তারিত চলবে, জানতে-পড়তে আমাদের সাথে থাকুন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
© সংযোগ প্রতিদিন
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট