শ্যামনগর প্রতিনিধি।সাতক্ষীরা: ১৪ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবন দিবস। সুন্দরবন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন বা লবণাক্ত বনাঞ্চল। সুন্দরবন বাংলাদেশের প্রশস্ত বনভূমি। এই বন বিশ্বের এক অপার বিস্ময়। সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে সুন্দরবন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখণ্ড বনভূমি। সুন্দরবনকে বলা হয় বাংলাদেশের ‘প্রাণ’। বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ।
২০০১ সালে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ‘সুন্দরবন দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে প্রতি বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি দিবস পালিত হয়ে আসছে। তবে কিছু পরিবেশবাদী সংগঠন ছাড়া বাকিদের কাছে যেন গুরুত্বই পায় না সুন্দরবন দিবসের। এই বন অজস্র উদ্ভিদ-প্রাণিকূলের আশ্রয়স্থল, কিন্তু চোরাকারবারী ও তাদের দোসরদের ক্রমাগত আগ্রাসনের কারণে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন আজ হুমকির মুখে।
সুন্দরবনের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে রয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ গোটা দেশের পরিবেশ। অথচ অসাধু গোষ্ঠী সুন্দরবনকে নিংড়ে নিচ্ছে একটু একটু করে! প্রতিদিন বাঘ হরিণ শিকারী বৃক্ষ নিধন চলছে সীমাহীনভাবে। পুর্ব ও পশ্চিম সুন্দরবনে গত কয়েকমাস ধরে সীমাহীন ভাবে বেড়ে চলেছে বন্যপ্রানী নিধন। অদূর ভবিষ্যতে এই ‘সুন্দর’ বনের গুরুত্ব অনুধাবন করতে না পারাটা আমাদের জন্য চরম ব্যার্থতা। ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের আয়তন ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার। খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালি ও বরগুনা জেলার অংশ নিয়েই বাংলাদেশের সুন্দরবন। জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ সুন্দরবনের ১ হাজার ৮৭৪ বর্গকিলোমিটার জুড়ে রয়েছে নদীনালা ও বিল মিলিয়ে জলাকীর্ণ অঞ্চল। রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ বিচিত্র নানান ধরণের পাখি, চিত্রা হরিণ, কুমির ও সাপসহ অসংখ্য প্রজাতির প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে সুন্দরবন পরিচিত।
এখানে রয়েছে প্রায় ৩৫০ প্রজাতির উদ্ভিদ, ১২০ প্রজাতির মাছ, ২৭০ প্রাজাতির পাখি, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ সরীসৃপ এবং ৮টি উভচর প্রাণী। সুন্দরী বৃক্ষের নামানুসারে এই বনের নাম সুন্দরবন রাখা হয়। সুন্দরবনের বনজ সম্পদ আহরণ শতশত বছরের পুরাতন রীতি। বনের গরান, গেওয়া, হেতাল, জ্বালানী ও কাগজ সম্পদ, গোলপাতা ও ছন ছাউনি, শামুখ বিভিন্ন প্রজাতীর মাছ ও কাকড়া, মধু নিয়মিত সংগ্রহ দোষের কিছু নয়, এগুলো না সংগ্রহ করলে একটা সময় নষ্ট হয়ে যায়। সুন্দরবনের অনন্য গাছ, গাছের ফল, পশুপাখি শিকার বন্ধ করা উচিৎ হয়েছে। প্রজনন মৌসুমে মাছ, কাকড়া বন্ধের কারণ বেশি মাছ কাকড়া হবে, জেলেরা বেশিবেশি মাছ পাবে। সুন্দরবনের বনজ সম্পদ দেশের ও বিদেশের বাজারে অর্থনিতী প্রবৃদ্ধি ও স্থানীয়দের জীবীকার পথ। আপনি সুন্দরবনে না গেলে আড়ালে চোরাকারবারী বেশি বাড়ে,
একদিকে অসাধু বনবিভাগের সদস্যদেরও ঘুষ বাণিজ্যের কারণে সব অপরাধ চলছে। অগ্নি অস্ত্রধারী চোরা শিকারী ও বনদস্যুরা নিরাপদে চলাচল করার জন্য বাঘ, হরিণ শিকার করছে অহরহ। উপকূল বাসী চাননা সুন্দরবন বন্ধ হোক, সুন্দরবনে শুধু অপরাধ বাণিজ্য কমাতে নিতে হবে প্রশাসনের উদ্দ্যোগ। কারণ সুন্দরবনের বনজ সমবপদ রাজস্ব খাতে বড় অংশ। কিন্তু পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর আওয়াজে বেসরকারি ব্যাপক তৎতপরতায় সরকারিভাবে নিরবে সুন্দরবন বন্ধ হচ্ছে। প্রজনন মৌসুম ছাড়াও বছরের বড় অংশ বনে প্রবেশ নিষেধ আছে বনবিভাগের। এটা সুন্দরবনের উপর ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ কমানোর প্রচেষ্টা ও সুন্দরবন নির্ভরশীলতা কমানো। কিন্তু সুন্দরবনের দিকে ঝুঁকে আছে দেশি বিদেশি পর্যটক মহল। উপকূলীয় ৪ জেলার প্রায় ৮ লক্ষাধিক মানুষ তাদেরকে করা হচ্ছে না পুনর্বাসন বা বিকল্প জীবিকায়ন। সুন্দরবন ফিরে পাক তার ঐতিহ্য, স্বাপদ সংকূল খ্যাতি, বিশ্ব ফিরে পাক অক্সিজেন ভান্ডার, বাংলাদেশ ফিরে পাক নিরাপদ বনভূমি।