সাতক্ষীরা : সুন্দরবনসংলগ্ন গ্রামগুলোয় বাঘের আক্রমণে স্বামী হারানো নারীরা বাঘবিধবা নামে পরিচিত। এই বাঘ বিধবা নারীর সংখ্যা এখন ২ হাজারেরঅধিক কুসংস্কারের কারণে এ নারীদের অলক্ষ্মী মনে করা হয়। এতে একঘরে হয়ে জীবনযাপন করতে হয় তাদের। খুলনার কয়রা উপজেলায় বাঘবিধবা ৭৫০ জন। আর সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় এ ধরনের নারী আছেন আরো ১ হাজার ১৬৫ জন। এছাড়া বনসংলগ্ন বাগেরহাটের মোংলা, মোড়েলগঞ্জ ও শরণখোলা এবং খুলনার দাকোপ উপজেলায় বাঘবিধবা থাকলেও সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে এসব নারীর সবার অবস্থাই শোচনীয়।
সুন্দরবনসংলগ্ন গ্রামগুলোয় বাঘের আক্রমণে স্বামী হারানো নারীরা বাঘবিধবা নামে পরিচিত। কুসংস্কারের কারণে এ নারীদের অলক্ষ্মী মনে করা হয়। এতে একঘরে হয়ে জীবনযাপন করতে হয় তাদের। খুলনার কয়রা উপজেলায় বাঘবিধবা ৭৫০ জন। আর সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় এ ধরনের নারী আছেন আরো ১ হাজার ১৬৫ জন। এছাড়া বনসংলগ্ন বাগেরহাটের মোংলা, মোড়েলগঞ্জ ও শরণখোলা এবং খুলনার দাকোপ উপজেলায় বাঘবিধবা থাকলেও সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে এসব নারীর সবার অবস্থাই শোচনীয়। সব জরিপ করা গেলে বাঘ বিধবার সংখ্যা রয়েছে দু হাজারের অধিক।
২০০৮ সালে সুন্দরবনে মাছ শিকারে গিয়ে বাঘের আক্রমণে প্রাণ হারান খুলনার কয়রা উপজেলার আব্দুল গফ্ফার। বাঘবিধবা হওয়ায় দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারেননি তার স্ত্রী রোকেয়া খাতুন। এমনকি কপালে জোটেনি বিধবা ভাতাও। এ কারণে সংসার চালাতে গিয়ে দিনমজুরি পর্যন্ত করতে হয়েছে রোকেয়া বেগমকে। বাঘবিধবার তকমা নিয়ে এমন দুর্বিষহ জীবন পার করতে হচ্ছে সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকার হাজারো নারীকে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারি-বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা বলছেন, সুন্দরবন অঞ্চলে বাঘের আক্রমণে স্বামীর মৃত্যুতে বিধবা হওয়ার হার কমেছে। তবে আগেই বাঘবিধবা হওয়া নারীদের দুর্দশা ঘোচানো যায়নি। এ কারণে সেলাই প্রশিক্ষণসহ বিভিন্নভাবে তাদের পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে।
বাঘবিধবা নামে পরিচিত নারীরা জানান, স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে সংসার চালানো ও সন্তানদের লেখাপড়া শেখানোর জন্য কঠিন সংগ্রাম করতে হচ্ছে তাদের। নদী-খালে মাছের পোনা ধরা, দিনমজুরি কিংবা অন্যের বাড়িতে কাজ করে কোনোমতে সংসার চলছে।
রোকেয়া বেগম বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে মেয়ে ও ছেলেকে মানুষ করতে হচ্ছে। কখনো নদীতে মাছ ধরেছি, কখনো দিনমজুরি করেছি। কয়রার আরেক বাঘবিধবা আম্বিয়া খাতুন বলেন, ২২ বছর আগে আমার স্বামী আমজাদ হোসেন সরদার সুন্দরবনে মাছ শিকারে গিয়ে বাঘের আক্রমণে প্রাণ হারান। এরপর থেকে তিন মেয়েকে নিয়ে শুরু হয় নতুন যুদ্ধ, যা এখনো চলছে। এ পর্যন্ত তিনি বা আশপাশের কোনো বাঘবিধবা নারী সরকারি ভাতা পাননি।
সূত্র জানায়, বনজীবীরা এখন আর আগের মতো অবাধে সুন্দরবনে যেতে পারছেন না। সুন্দরবনেও বাঘের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। সব মিলিয়ে এ বনে এখন বাঘের আক্রমণে বনজীবী মৃত্যুর ঘটনাও কমেছে। এ কারণে সুন্দরবন অঞ্চলে বিধবা হওয়ার হার কমেছে। দেরিতে হলেও কিছু বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) ও সংগঠনও বাঘবিধবাদের ভাগ্যবদলে এগিয়ে এসেছে। এর একটি হলো ইনিশিয়েটিভ ফর কোস্টাল ডেভেলপমেন্ট (আইসিডি)। সম্প্রতি সংগঠনটি রোকেয়া বেগমসহ ৪০ জন বাঘবিধবাকে মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ শেষে সেলাই মেশিন ও কাপড় দিয়েছে। শ্যামনগর উপজেলায় বাঘবিধবাদের নিয়ে কাজ করে আরো একটি এনজিও। তবে এখনো সরকারি কোনো সহযোগিতা পাচ্ছেন না বাঘবিধবারা।
আইসিডির প্রতিষ্ঠাতা আশিকুজ্জামান আশিক জানান, বাঘবিধবাদের জন্য কিছু করার চিন্তা থেকেই তারা এ উদ্যোগ নিয়েছেন। প্রাথমিকভাবে কয়রায় কার্যক্রম শুরু করেন। এর অংশ হিসেবে বাঘবিধবাদের সেলাই প্রশিক্ষণ ও সেলাই মেশিন দেয়া হয়েছে।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বন কর্মকর্তা (ডিএফও) এ জেড এম হাসানুর রহমান এই প্রতিবেদককে বলেন, বর্তমানে সুন্দরবনে বনজীবী প্রবেশে অনেক বিধিনিষেধ রয়েছে। বনবীজীরা জঙ্গলে প্রবেশ করতে পারেন না। তাই এখন বাঘের আক্রমণের শিকার হওয়ার তেমন তথ্যও পাওয়া যায় না। সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি ও বাঘের অবাধ বিচরণ নিশ্চিতকরণে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সুন্দরবনে পর্যটক প্রবেশেও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।
কয়রা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এই প্রতিবেদককে বলেন, বাঘবিধবাদের তালিকা তৈরি করার কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। তালিকা ধরে বাঘবিধবাদের পুনর্বাসন করা হবে।