মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর) প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় বন প্রহরী যৌতুক লোভী স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করে বিপাকে পড়েছে সাদিয়া আক্তার বুলু (২৯) নামের এক গৃহবধূ। উপকূলীয় বন বিভাগ পাথরঘাটা রেঞ্জের চরলাঠিমারা বিটের বন প্রহরী (এফজি) আমিনুল ইসলাম মামলা তুলে নিতে অব্যাহত হুমকিতে নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছে ওই গৃহবধূ। এ ঘটনায় ওই গৃহবধূ বুলু মঠবাড়িয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। গৃহবধূ বুলু সাংবাদিকদের বলেন স্বামীর শুধু হুমকি নয় তার ব্যবহৃত ফোন তার স্বামী বিভিন্ন বখাটেদের কাছে দিয়ে অশ্লীল ভাষায় ফোন ও এসএমএস দিয়ে উত্যক্ত করায় তার জীবন বিপন্ন।
থানা ও ভূক্তভোগী গৃহবধূ সূত্রে জানাগেছে, প্রতিবেশী এক আত্মীয়ের মাধ্যমে পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে ২০১৭ সালে মঠবাড়িয়ার পূর্ব ফুলঝুড়ি গ্রামের ইসমাইল হোসেনের মেয়ে স্মাতক পাশ সাদিয়া আক্তার বুলুর সাথে পটুয়াখালী জেলার বাউফলের গুছাকাঠী গ্রামের আলতাফ হোসেনের ছেলে বন প্রহরী আমিনুল ইসলামের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় আমিনুল নিজেকে অবিবাহিত ও থানার সাব ইন্সপেক্টর পরিচয় দিলেও স্বামীর কর্মস্থল ভোলার তজুমুদ্দিনের বনবিভাগের শশীগঞ্জ ক্যাম্পে যাওয়ার পর স্ত্রী বুলু জানতে পারেন তার স্বামীর স্ত্রী সন্তান রয়েছে এবং সে পুলিশের এস আই নয় বন বিভাগের বন প্রহরী। এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে দাম্পত্য কলহ সৃষ্টি হয়। প্রতারনা করে বিয়ে করার প্রতিবাদ করায় ২০২১ সালে ১৮ আগষ্ট মাসে দৌলতখান ভাড়াটিয়া বাসায় নির্যাতনে এক পর্যায় আমিনুল স্ত্রীর তলপেটে লাথি মারলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার ৩ মাসের ভ্রুন (বাচ্ছা) নষ্ট হয় যায়। গৃহবধূ বলেন এত অত্যাচারের পরও আমি স্বামীর সাথে সংসার করতে থাকি। কিছুদিন পর আমিনুল প্রথম স্ত্রীকে তালাক ও বুলুকে চাকুরির দেবার কথা বলে বাবার বাড়ি হতে ৬ লক্ষ টাকা আনার জন্য চাপ দেয়। পরে সুখের কথা চিন্তা করে স্ত্রী বুলু আক্তার বেসরকারী সংস্থায় চাকুরি করে সংগ্রহ করা জমানো টাকা ও দরিদ্র পিতার দেয়া মোট দু’দফায় ৩ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা দেয়। দরিদ্র পিতার পক্ষে বাকী টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে শারিরিক নির্যাতন শুরু করে। এ ব্যাপারে পিরোজপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে মামলা দায়ের করলে ওই মামলায় ১৭ দিন হাজত বাস করার পর স্বামীর স্বজনদের অনুরোধে পুনরায় ঘর সংসার করা জন্য বাদী বুলু আদালতে দাঁড়িয়ে জামিন প্রার্থনা করে তার জিম্মায় নিয়ে এসে স্বামীর বাড়ি গুর্ছাকাঠী গ্রামে যায়। কিন্তু জেল থেকে জামিনে এসে পুনরায় নির্যাতন করে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। বিষয়টি গৃহবধু বন বিভাগের প্রধান বন সংরক্ষকসহ উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করে রহস্য জনক কারনে কোন ফল পায়নি বলে ওই গৃহবধূ অভিযোগ করেন।
এদিকে বাবার বাড়িতে থাকা ওই গৃহবধূকে মুঠোফেনে স্বামী আমিনুল মামলা না তুললে বিভিন্ন রকম মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানীসহ খুন জখমের হুমকি দেয়। এমনকি বুলুর ব্যবহৃত ফোন নম্বর ০১৯০৯৯২৫১১৭ থেকে প্রায়ই তার ফোন অশ্লীল ছবি ও অশালীন কথাসহ বিভিন্ন বখাটেদের কাছে নাম্বার দিয়ে এসএমএস প্রেরণ করে উত্যক্ত করছে। বাবার বাড়িতে থাকা ওই গৃহবধূ স্বামীর অব্যাহত হুমকি ও অপরিচিত নম্বর দিয়ে অশ্লীল ফোনালাপে মঠবাড়িয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন।
এবিষয় উপকূলীয় বন বিভাগ পাথরঘাটা রেঞ্জের চরলাঠিমারা বিটের বন প্রহরী অভিযুক্ত আমিনুল ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তার বিরুদ্ধে স্ত্রীর আনা সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার লম্পট স্ত্রী আমাকে তিন তিনটি মামলা দিয়ে হয়রানি এবং আমার বিরুদ্ধে উর্ধ্বতন মহলে লিখিত অভিযোগ দিয়ে মান সম্মান ক্ষুন্ন করছে।
থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন জিডির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন-এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপকূলীয় বন বিভাগ পাথরঘাটা রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা আজাদুল কবির চরলাঠিমারা বিটের বন প্রহরি আমিনুলের বিরুদ্ধে স্ত্রীর লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতিতে সহকারী বন সংরক্ষক (বরগুনা) পটুয়াখালী তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশানা পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তানাধীন আছে।