ডুমুরিয়া প্রতিনিধি : বর্ষা মৌসুম শুরু হয়েছে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিল বিলডাকাতিয়াসহ ডুমুরিয়া ও ফুলতলা এলাকায় জলাবদ্ধতা দুর করতে চলতি অর্থবছরে কয়েক কোটি টাকা খরচ করেছে সরকারি দপ্তরগুলো। কিন্তু সেসব প্রকল্প কোন কাজে আসেনি। জলাবদ্ধ এলাকায় ডুবুপানিতে স্কেভেটর দিয়ে খাল খননের নামে চলছে অর্থলুটের মহোৎসব। গত বছর এ অঞ্চলের জনবসতিসহ মাছের ঘের, ফসলের ক্ষেত অতিবৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় মানুষ। সেই অবস্থা বিবেচনায় রেখে পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিএডিসিসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের অর্থায়নে বেশ কিছু খাল খনন করা হয়। কিন্ত সেসব খাল দিয়ে এবারও পানি নিষ্কাশিত না হয়ে জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছেন এ অঞ্চলের মানুষ। জলাবদ্ধতার সমস্যা খুলনাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের সমস্যা। বিশেষ করে প্রবল বর্ষায় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিল জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। বিলডাকাতিয়াসহ খুলনা জেলার ডুমুরিয়া ও ফুলতলার মানুষ হয়ে পড়ে জলমগ্ন। জলাবদ্ধতা নিরসনে পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করলেও কার্যতঃ মানুষের কোন উপকারে আসেনি। একদিকে বিল জলাবদ্ধ অপরদিকে বিলের বাইরে নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় আরও ভোগান্তিতে পড়ে মানুষ। গতবছর অতিবৃষ্টিতে এই ভোগান্তি আরও বাড়িয়ে দেয়। সেই দিক বিবেচনা করে এবার বেশ কিছু খাল খনন করা হয়। বিলডাকাতিয়ার পানি নিষ্কাশনের জন্য শৈলমারি নদীর ১০ ভেন্টের স্লুইজগেটে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন দুটি পাম্পও বসানো হযেছে। তবে এসব প্রকল্প কোন কাজে আসবে বলে মনে করেন না এলাকাবাসী। খাল খননে সবচেয়ে বেশি অনিয়ম হয়েছে, জেলার ডুমুরিয়া উপজেলায়। বিরাট অংকের টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও সেসব খালে নকশা অনুযায়ি খনন করা হয়নি। কোন স্থানে ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করা হয়েছে। এরমধ্যে গুটুদিয়া ইউনিয়নের শেষ প্রান্তে আলাইপুর থেকে বাদুরগাছা একটি খাল খননে বরাদ্দ ১১ লাখ টাকা। প্রকল্প সভাপতি সংরক্ষিত মহিলা সদস্য বন্দন রানী গোলদার। কাজ সঠিকভাবে না করায় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন দপ্তর থেকে টাকা ফেরত দেয়ার নির্দেম দেযা হয়েছে। গুটুদিয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে ৮ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি খাল খনন করার জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রকল্প সভাপতি সংরক্ষিত মহিলা সদস্য মঞ্জু রারী মন্ডল। সেই খালটি তলিতে ৬ ফুট, গভীরতা ৮ ফুট এবং মুখে ১২ পুট থাকার কথা থাকলেও তলিতে দেড় থেকে ২ ফুটও রয়েছে। আবার কোন কোন স্থানে পাড় ছেতে খনন কাজ শেষ করা হয়েছে। প্রকল্প সভাপতি বন্দনা রানী গোলদার টাকা ফেরত দেয়ার চিঠি প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে বলেন, ওই কাজটি পলাশ তরফদার নামে এক সদস্যকে সভাপতি করা হয়। কিন্তু পরবর্তিতে আমাকে সভাপতি করা হলেও কোন টাকা আমাকে দেযা হয়নি। সাবেক চেয়ারম্যান দায়িত্বে থাকাকালিন সে টাকা তার কাছে রয়ে গেছে। ডুমুরিয়া উপজেলা পানি কমিটির সভপতি সাবেক চেয়ারম্যান জি এম আমানুল্লাহ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জনগণের আকাঙ্খাকে উপেক্ষা করে সরকারি বিভিন্ন দপ্তর জলাবদ্দতা নিরসনের নামে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করলেও কার্যতঃ কোন সুফল বযে আনছে না। গত বছর দেরিতে জলাবদ্দতার সৃষ্টি হলেও এ বছর বৃষ্টির মৌসুম শুরু সাথে সাথেই জলাবদ্দতার সৃষ্টি হয়েছে। খুলনা নাগরিক সমাজের সাধারণ সম্পাদক ও পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)র সভাপতি অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য খাল খননের বিকল্প নেই। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে অপরিকল্পিতভাবে খাল খনন করা হয়েছে। বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হচ্ছে কিন্তু উপকার হচ্ছে না। খুলনা জেলার ডুমুরিযা উপজেলা নির্বাহি অফিসার মুহাম্মদ আল আমিন জানালেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে ফলপ্রসূ কার্যক্রম হচ্ছে খাল খনন। সরকারি বেসরকারি যেসকল দপ্তর খাল খনন করছে তাদেরকে যথাযথভাবে খাল খননের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়। যদি কেউ অনিযম করে থাকে তাদেরকে বরাদ্দকৃত অর্থ ফেরত দেয়ার নির্ধেশ দেয়া হবে। ইতোমধ্যে যথাযথভাবে কাজ না করায় বেশ কযেকজনকে টাকা পেরত দিতে বলা হযেছে। পানি উন্নযন বোর্ড খুলনার তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বি, এম আব্দুল মোমিন বলেন পানি জলাবদ্ধতা নিরসনে স্বল্প মেয়াদী ও দীর্ঘ মেয়াদী প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে বিলডাকাতিয়াসহ অন্যান্য বিলের পানি নিষ্কাশনের জন্য খাল খনন করা হয়। এবার দুটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। যা দিয়ে ইতোমধ্যে পানি নিষ্কাশন করা হচ্ছে।