1. news@sangjogprotidin.online : ADMIN : ADMIN ADMIN
  2. info@www.sangjogprotidin.online : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন :
রবিবার, ০৮ জুন ২০২৫, ০১:২৩ অপরাহ্ন
বিজ্ঞপ্তি :
জরুরী সাংবাদিক নিয়োগ চলছে আপনার কাছে একটি দুর্দান্ত সুযোগ! "সংযোগ প্রতিদিন" সংবাদপত্রে জরুরী ভিত্তিতে সাংবাদিক নিয়োগ চলছে।

রোগে আক্রান্ত সুন্দরবনের গাছ

  • প্রকাশিত: বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

শ্যামনগর : জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং উজান থেকে মিষ্টি পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় সুন্দরবনের নদী-খাল ও বনভূমিতে লবণাক্ততা বেড়েছে। ফলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই ম্যানগ্রোভ বনে সুন্দরী ও গরানসহ দশটি প্রধান গাছের চারা গজানোর হার কমে গেছে। এ ছাড়া লবণাক্ততা ও ছত্রাকের কারণে সুন্দরীগাছের আগা মরা, গেওয়াগাছের শেকড় পচন ও পশুরগাছের হার্ট রট বা ঢোর রোগ বেড়েছে। এ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে বন বিভাগে।
বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সুন্দরবনে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ার কারণে ৯ বছরের ব্যবধানে দশটি গাছের চারা গজানোর হার কমেছে। ২০১০ সালে গড়ে প্রতি হেক্টরে সুন্দরীগাছের চারা গজিয়েছিল পাঁচ হাজার ৫৫৬টি। ২০১৯ সালে তা কমে দাঁড়ায় চার হাজার ১৯২টিতে। ২০১০ সালে গড়ে প্রতি হেক্টরে গরানগাছের চারা গজিয়েছিল ৯ হাজার ৫৫৬টি। ২০১৯ সালে তা কমে দাঁড়ায় তিন হাজার ৪৯৫টিতে।
২০১০ সালে গড়ে প্রতি হেক্টরে পশুরগাছের চারা গজিয়েছিল ৮৩৩টি। ২০১৯ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৩০৩টিতে। ২০১০ সালে গড়ে প্রতি হেক্টরে কাঁকড়াগাছের চারা গজিয়েছিল চার হাজার ৭৮টি। ২০১৯ সালে তা কমে দাঁড়ায় দুই হাজার ৬৯৭টিতে। ২০১০ সালে গড়ে প্রতি হেক্টরে কেওড়াগাছের চারা গজিয়েছিল ৬৭টি। ২০১৯ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৩০টিতে। ২০১০ সালে গড়ে প্রতি হেক্টরে বাইনগাছের চারা গজিয়েছিল দুই হাজার ২৮৯টি। ২০১৯ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৬৬৭টিতে।
২০১০ সালে গড়ে প্রতি হেক্টরে আমুরগাছের চারা গজিয়েছিল এক হাজার ৫৬টি। ২০১৯ সালে তা কমে দাঁড়ায় ২০২টিতে। ২০১০ সালে গড়ে প্রতি হেক্টরে খলশিগাছের চারা গজিয়েছিল ২৭৮টি। ২০১৯ সালে তা কমে দাঁড়ায় ২১২টিতে। ২০১০ সালে গড়ে প্রতি হেক্টরে হেতালগাছের চারা গজিয়েছিল ২১১টি। ২০১৯ সালে তা কমে দাঁড়ায় ২০টিতে।
২০১০ সালে অধিক লবণাক্ত প্রতি হেক্টরে সিংড়াগাছের চারা গজিয়েছিল ১৭৮টি। ২০১৯ সালে সেখানে গজায়নি একটি চারাও। তবে ২০১০ সালে গড়ে প্রতি হেক্টরে গেওয়াগাছের চারা গজিয়েছিল আট হাজার ৫১১টি। ২০১৯ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২০ হাজার ১৩১টিতে।
বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিভাগীয় কর্মকর্তা ড. আ স ম হেলাল সিদ্দিকী জানান, তারা প্রতি বছর সুন্দরবনের ৩৩টি স্থায়ী স্যাম্পল প্লটের ৯৯০ বর্গফুট এলাকায় গাছের চারা গজানোর হার পর্যবেক্ষণ করেন। এতে এই চিত্র ফুটে উঠেছে। তিনি জানান, সুন্দরবনকে কম, মাঝারি ও বেশি- এই তিনটি এলাকায় ভাগ করা হয়েছে। দেখা গেছে, মাঝারি ও অধিক লবণাক্ত এলাকায় গাছের চারা গজানোর হার কমে গেছে।
বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, সুন্দরবনে কমপক্ষে ৩৮ শতাংশ সুন্দরীগাছ আগা মরা রোগে আক্রান্ত হয়েছে। বনের মোট গাছের ৬৪ শতাংশ গাছই সুন্দরী। এ ছাড়া ২০ শতাংশ গেওয়াগাছ শেকড় পচন ও ৫০ শতাংশের বেশি পশুরগাছ হার্ট রট বা ঢোর রোগে আক্রান্ত হয়েছে। বনের মোট গাছের ১৬ শতাংশ গেওয়া ও এক শতাংশ পশুর। এ রোগের জন্য লবণাক্ততা বৃদ্ধি ও ছত্রাককে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিভাগীয় কর্মকর্তা ড. আ স ম হেলাল সিদ্দিকী এই প্রতিবেদক বলেন, মাঝারি ও অধিক লবণাক্ত এলাকায় সুন্দরীগাছের আগা মরা রোগের প্রকোপ বেশী। রোগাক্রান্ত সুন্দরী, গেওয়া ও পশুরগাছে ফল-বীজ কম হয় এবং সেগুলোর চারা গজানোর হারও কম। তিনি জানান, পলি পড়ার কারণে কটকা ও কচিখালী এলাকায় কেওড়াগাছ মারা যাচ্ছে। পলি পড়ে কটকার কিছু এলাকা বেশ উঁচু হয়ে গেছে। সেখানে আগের মতো কেওড়াগাছ জন্মাছে না।
ড. হেলাল সিদ্দিকী জানান, বনের পূর্ব অংশে বয়স্ক বাইনগাছও মারা যাচ্ছে। তবে বেশিরভাগ এলাকায় গেওয়াগাছের পরিমাণ বাড়ছে। গেওয়াগাছে অনেক বীজ হয় এবং বীজ থেকে চারা গজানোর সক্ষমতাও বেশি।
এদিকে সুন্দরবনের করমজল থেকে সম্প্রতি হাড়বাড়িয়া যাওয়ার পথে বনের বাঁ পাশে দেখা যায়, অসংখ্য সুন্দরীগাছ আগা মরা রোগে আক্রান্ত। গাছগুলোতে কোনো পাতা নেই, শুধু গাছের কঙ্কাল দাঁড়িয়ে রয়েছে। হাড়বাড়িয়া এলাকার ওয়াচ টাওয়ারের পাশেই ঢোর রোগে আক্রান্ত দুটি পশুরগাছ দেখা যায়। কটকা ফরেস্ট অফিসের পেছনের অংশে রোগাক্রান্ত বেশ কয়েকটি গেওয়া ও পশুরগাছ দেখা গেছে। বনের অধিক লবণাক্ত এলাকাগুলোতে রোগাক্রান্ত গাছের সংখ্যা বেশি।
এ ব্যাপারে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. মো. নাজমুস সাদাত এই প্রতিবেদককে বলেন, লবণাক্ততা যত বাড়ছে গাছের চারা গজানোর হারও তত কমছে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপিল্গনের অধ্যাপক ড. আবদুলল্গাহ হারুন চৌধুরী এই প্রতিবেদক বলেন, হিরণ পয়েন্টে বিশ্ব-ঐতিহ্যের নামফলকের বিপরীত পাশে অনেক এলাকায় নতুন করে চারা গজাচ্ছে না। কারণ সেখানকার মাটিতে চারা গজানোর সক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেছে।
সুন্দরবন একাডেমির উপদেষ্টা স্বপন গুহ এই প্রতিবেদক বলেন, বনের গাছ থেকে নদীতে পড়া ফল জোয়ারের পানিতে লোকালয়ের দিকে চলে আসছে। স্থানীয় লোকজন ওই ফল সংগ্রহ করে শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছে। এতে এসব ফল থেকে চারা গজানোর সুযোগ থাকছে না।
এ ব্যাপারে খুলনা সার্কেলের বন সংরক্ষক মো. মঈনুদ্দিন খান বলেন, ‘সুন্দরবন সুরক্ষা’ প্রকল্পের অধীনে ‘ইকোলজিক্যাল মনিটরিংয়ের’ চিন্তা করা হচ্ছে। নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করলে গাছপালার পরিবর্তন বোঝা যাবে। তিনি বলেন, সুন্দরবনে লবণাক্ততা বাড়ছে। ফলে কোথাও কোথাও সুন্দরীগাছ কমছে। আবার অনেক বেশি লবণ সহনশীল হওয়ায় গেওয়াগাছ বেড়ে যাচ্ছে। তারা সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮  
© সংযোগ প্রতিদিন
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট