1. news@sangjogprotidin.online : ADMIN : ADMIN ADMIN
  2. info@www.sangjogprotidin.online : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন :
রবিবার, ০৮ জুন ২০২৫, ১১:০২ পূর্বাহ্ন
বিজ্ঞপ্তি :
জরুরী সাংবাদিক নিয়োগ চলছে আপনার কাছে একটি দুর্দান্ত সুযোগ! "সংযোগ প্রতিদিন" সংবাদপত্রে জরুরী ভিত্তিতে সাংবাদিক নিয়োগ চলছে।

দশমিনায় জেলে পল্লীর বাসিন্দারা দাদন আর ঋণের বেড়াজালে বন্দী

  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

দশমিনা (পটুয়াখালী) : পটুয়াখালী জেলার দশমিনা উপজেলার তেঁতুলিয়া ও বুড়াগৌরাঙ্গ নদীতে সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেরা মাছ শিকার করতে নেমে আশানুরূপ মাছ পাচ্ছে না। সামান্য মাছ বিক্রি করে যে টাকা পায় তা দিয়ে সংসার ও ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারছে না। ফলে জেলে পল্লীর বাসিন্দারা দাদন আর ঋণের বেড়াজালে বন্দী হয়ে পড়েছে।সরকারের ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় চাল বিতরন করা হলেও ব্যাংক ও এনজিও থেকে নেয়া ঋণের টাকা পরিশোধ করা জেলেদের ওপর ভয়াবহ বোঝা হয়ে দাড়িয়েছে। মূলত দারিদ্রতার কারনেই বাধ্য হয়ে জেলেরা গোপনে মাছ শিকার করতে বাধ্য হচ্ছে। একদিকে সংসার অন্যদিকে ঋণের টাকা জোগার করতে এবং মহাজনদের চাপে পড়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাতের আধারে মাছ শিকার করছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ইলিশ শিকার নিষিদ্ধ সময়ে জেলেরা তেঁতুলিয়া নদীতে না নামতে পারলেও ঋণের কিস্তি থেকে জেলেদের রেহাই ছিল না। আর কিস্তি পরিশোধের জন্য বাধ্য হয়েই অনেক জেলে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাতের আধারে মাছ শিকার করেছে। মা ইলিশ রক্ষায় সরকারের নিষেধাজ্ঞা সফল হয়েছে। অবরোধের সময় ব্যাংক ও এনজিও থেকে নেয়া ঋণের কিস্তি আদায় বন্ধ না থাকায় জেলেরা চাপের মধ্যে পড়েছে। উপজেলার বাশঁবাড়িয়া গ্রামের শাহ আলম খা, ঢনঢনিয়া গ্রামের লাল মিয়াসহ একাধিক জেলে জানান, বিভিন্ন ব্যাংক ও এনজিও থেকে তারা ঋণ নেন। ঋণের টাকা দিয়ে জাল ও নৌকা তৈরি করেছে। মাছ বিক্রি করে ওই ঋণের টাকা পরিশোধ করা হয়। অবরোধের সময় জেলেরা চরম বেকার থাকেন।
উপজেলার ১০ হাজার ১৭১ জন জেলের মধ্যে অধিকাংশ জেলে পরিবারের সদস্যরা মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হয়। একদিকে মানবেতর জীবনযাপন অন্যদিকে ব্যাংক ও এনজিওর নেয়া ঋণের কিস্তি পরিশোধের চাপ এই দুই মিলিয়ে জেলেদের ভয়াবহ পরিস্থিতিতে দিন কাটাতে হচ্ছে। কিস্তি পরিশোধ করতে না পারলে চলে মানসিক নির্যাতন। তাই বাধ্য হয়ে জেলেরা ঝড় ও বন্যা উপেক্ষা করেই নদীতে মাছ শিকারে যায়। উপজেলার দক্ষিন দাসপাড়া গ্রামের জেলে জাকির বলেন, সময় মত কিস্তি দিতে না পারলে আর ঋণ পাবো না। সুদ ও কিস্তির কারণে সংসারে অশান্তি লেগেই আছে। কাজেই অনিচ্ছায় হলেও বিকল্প কোনো পথ না থাকায় সরকারি আইন উপেক্ষা করেই চরম ঝুঁকি নিয়ে নদীতে মাছ শিকারে নামতে হয়। আর সেই মাছ বিক্রি করে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করে থাকি। স্থানীয়রা জানান, সরকারের উচিত এই সময় জেলেদের কিস্তি পরিশোধের শর্ত শিথিল করে দেয়া। তারা যেনো কোনো হয়রানি ছাড়া ঋণ পান তার ব্যবস্থা করা।
বাঁশবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান কাজী আবুল কালাম বলেন, অবরোধের সময়ে জেলেদের ব্যাংক ও এনজিও থেকে নেয়া ঋন আদায় বন্ধ রাখা হয়। এই সময় জেলেরা যাতে অভাবের তাড়নায় বাধ্য হয়ে মাছ শিকারে না নামেন সে বিষয়ে সতর্ক করা হয়। উপজেলার প্রধান ২টি নদী তেঁতুলিয়া ও বুড়াগৌরাঙ্গ নদীতে জেলেরা আশানারূপ ইলিশসহ অন্যান্য মাছ না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছে। প্রধান এই দুইটি নদীতে মাছ না পেয়ে জেলেরা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এই সুযোগে দাদন ব্যবসায়ীরা তাদের দাদনের টাকার জন্য জেলেদেরকে প্রতিনিয়ত চাপ দিচ্ছে। জেলে পল্লী হিসাবে খ্যাত উপজেলার উপকূলীয় এলাকা বাঁশবাড়িয়া, হাজীরহাট, গোলখালী, আউলিয়াপুর, রনগোপালদী ও আলীপুরা এলাকায় এখন জেলেদের মধ্যে দাদন ব্যবসায়ীদের কারনে ভীতি বিরাজ করছে।
উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের হাট-বাজারগুলোতে দেশী প্রজাতির নানা ধরনের মাছ এখন দুস্প্রাপ্য হয়ে গেছে। বর্ষা মৌসুমে ডিমওয়ালা মাছ ডিম ছাড়ার আগেই জেলেদের জালে ধরা পড়েছে। ফলে মাছের বংশ বিস্তার হয়নি। এক শ্রেনীর অসাধু জেলেরা মাছ ধরার জন্য বিভিন্ন ধরনের জাল দিয়ে অবাধে মাছ শিকার করছে। যার কারনে উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দেশী প্রজাতির মাছ দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। এদিকে উপজেলার প্রধান ২টি নদী তেঁতুলিয়া ও বুড়াগৌরাঙ্গ নদীতে জেলেরা জাল ফেলে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ কম পেয়ে হতাশ হয়ে তীরে ফিরে আসছে।
উপজেলায় মাছের ক্ষেত্র হিসাবে পরিচিত আলীপুরা, বাঁশবাড়িয়া, রনগোপালদী, চরবোরহান,দশমিনা,বেতাগী সানকিপুর ইউনিয়নের নদ-নদী,খাল-বিল পুকুর ডোবা এখন মাছ শূন্য হয়ে গেছে। উল্লেখিত এলাকায় বোয়াল, মাগুর, শিং, কৈ, টেংরা, শোল, টাকি, পুটি, গজার, চাপিলা, খৈইলশা, পাবদা, আইড়, চিংড়ি, মলা, বাইন, বেলে সহ অর্ধ শতাধিক প্রজাতির মাছ প্রায় বিলুপ্ত হবার পথে রয়েছে। বিশেষ করে নদীর মাছ হিসাবে পরিচিত পোয়া,ইলিশ,আইড়,রিটা যার দেখা এখন অনেকটা ভাগ্যের ব্যাপার।
উপজেলার সর্বত্র নিষিদ্ধ ঘোষিত জালের অবাধ ব্যবহার,কৃষি জমিতে সার ও কীটনাশকের ব্যাপক ব্যবহার,বর্ষাকালে প্রজনন মৌসুমে ডিমওয়ালা মা মাছ সহ পোনা নিধন,শুস্ক মৌসুমে মাছ ধরার প্রবনতা এবং মাছের বিচরন ক্ষেত্র কমে যাওয়া সহ প্রভৃতি কারনে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক ফসল হিসাবে পরিচিত মৎস্য সম্পদ আজ বিলুপ্ত হতে চলছে। এছাড়া মাছের প্রজনন মৌসুম ও পোনা মাছের বৃদ্ধিকালীন সময় অবাধে ছোট-বড় মাছ ধরা এবং মৎস্য আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় মৎস্য সম্পদ দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। বিগত ২০ বছর আগে গ্রামাঞ্চলে সর্বত্র দেশী প্রজাতির মাছ পাওয়া গেলেও এখন আর সেই অবস্থা নেই। উপজেলার হাট-বাজার গুলোতে চাষকৃত কার্প জাতীয় রুই,কাতলা,পাঙ্গাস,হাইব্রিড শিং,মাগুর এবং থাই পুটি,কৈ ও তেলাপিয়া সহ নানা ধরনের মাছ বিক্রি হচ্ছে। চাষকৃত মাছের কাছে দেশী প্রজাতির মাছ টিকতে না পেরে হারিয়ে গেছে। জেলেরা জানায়, দারিদ্রতার কারনে তারা মাছ শিকার করতে বাধ্য হচ্ছে। এই বিষয়ে মৎস্য অধিদপ্তর কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছে না। অভিজ্ঞ মহলের মতে সমন্বিত মৎস্য সম্পদ ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ গ্রহন,কৃষি জমিতে স্বল্প মাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার এবং প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরা বন্ধ করা হলে জাতীয় মৎস্য সম্পদ রক্ষা করা সম্ভব হবে। বিদেশী চাষকৃত মাছের কাছে দেশী প্রজাতির মাছ মার খেয়ে গেছে। এই অবস্থায় দেশী মাছ বিলুপ্তি হলে উপজেলার প্রায় পাঁচ শতাধিক জেলে পরিবারের ভবিষ্যত অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাবে। এদিকে উপজেলার প্রধান ২টি নদী তেঁতুলিয়া ও বুড়াগৌরাঙ্গ নদীতে জেলেরা জাল ফেলে কোন ইলিশ মাছ সহ অন্যান্য মাছ কম পাবার কারনে হতাশ হয়ে তীরে ফিরে আসছে। ভরা মৌসুমেও কাংখিত মাছ না পেয়ে জেলেরা দিশে হারা হয়ে পড়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮  
© সংযোগ প্রতিদিন
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট